শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাকিব মুস্তাফিজের নতুন চ্যালেঞ্জ

আইপিএলে পর্দা উঠছে আজ

মেজবাহ্-উল-হক

সাকিব মুস্তাফিজের নতুন চ্যালেঞ্জ

সাকিব, মুস্তাফিজ

ছয় মৌসুম পর ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগে নতুন দলে যোগ দিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কলকাতা নাইট রাইডার্স থেকে তার ঠিকানা এবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। দুই মৌসুম পর এবার মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে খেলবেন মুস্তাফিজুর রহমান। আগের দুই বছর সানরাইজার্স হায়দরাবাদে কাটিয়েছেন কাটার মাস্টার। এবার নতুন দলে নতুন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের দুই তারকার।

নতুন দলে কেমন করবেন সাকিব ও মুস্তাফিজ? তার আগে দেখে নেওয়া যাক দুই তারকা আগের আসরগুলোতে কতটা ভালো করেছেন—

আইপিএলে সাকিবের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছেন। আইপিএলে এ পর্যন্ত ৪৩টি ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ৩৮১ বলে মোট ৪৯৮ রান করেছেন। স্ট্রাইকরেট ১৩০.৩৬। গড় ২১.৬৫। ভারতীয় এই সেলিব্রেটি ক্রিকেট লিগে ব্যাট হাতে সাকিবের সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৬৬। সেঞ্চুরি তো নেই-ই হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে দুটি। অবশ্য সাকিব যখন ব্যাট হাতে নামে তখন বড় ইনিংস খেলার মতো বলই থাকে না। দ্রুত রান তুলতে হয়। কখনো কখনো আবার উল্টো ঘটনাও ঘটে। দ্রুত উইকেট পড়ে গেলে বাইশগজে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হয়। আইপিএল ক্যারিয়ারে সাকিব মোট ৪৪টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। আর ছক্কা ১৫টি। ৮টি ক্যাচও লুফে নিয়েছেন তিনি।

মজার বিষয়, বল হাতে সাকিবের ম্যাচ সংখ্যা ও উইকেট সংখ্যা সমান ৪৩টি। তার ইকোনোমি (ওভার প্রতি রান দেওয়ার গড়) ৭.১৭। অর্থাৎ সাকিব মোট ৯২১টি বল করেছেন, রান দিয়েছেন ১ হাজার ১০১। সেরা বোলিং ফিগার ৩/১৭। বল হাতে তিনি সবচেয়ে বেশি দাপট দেখিয়েছেন নিজের দ্বিতীয় মৌসুমে। ৮ ম্যাচে ১৬.২৫ গড়ে ১২ উইকেট নিয়েছেন। নিজের সেরা বোলিং ফিগারও ওই আসরেই। তবে সব মিলে সেরা সময় ছিল ২০১৪ সালে। ওই মৌসুমে ব্যাট হাতে ২২৭ রান এবং বল হাতে নিয়েছেন ১১ উইকেট।

আইপিএলে মুস্তাফিজের অভিষেক হয়েছিল ২০১৬ সালে। প্রথম মৌসুমেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদে দেখিয়েছেন ক্যারিশমা। সে বছর আইপিএলে হায়দরাবাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে বড় অবদান ছিল সাতক্ষীরার এই বোলিং জাদুকরের। ২০১৬ সালে অসাধারণ নৈপুণ্যের জন্য সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছিলেন মুস্তাফিজ।

আইপিএলে মুস্তাফিজের পরিসংখ্যার দিকে তাকালে আহামরি কিছু মনে হওয়ার কথা নয়। কেন না ১৬ ম্যাচে ১৭ উইকেট পেয়েছেন। গড় ২৪.৭৬। ইকোনোমি ৬.৯০। তবে যারা মুস্তাফিজের বোলিং দেখেছেন তারাই কেবল বলতে পারবেন কতটা ভয়ঙ্কর ছিলেন তিনি। রান দিলেও ওই মৌসুমে হায়দরাবাদের অধিকাংশ জয়েই প্রধান ভূমিকা ছিল মুস্তাফিজের। যখনই প্রতিপক্ষের কোনো ব্যাটসম্যান ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতেন তখনই অধিনায়ক ওয়ার্নার মুস্তাফিজকে বোলিংয়ে নিয়ে আসতেন। কাটার মাস্টার সফলও হতেন। ওই মৌসুমের পর গোটা ক্রিকেট বিশ্বে মুস্তাফিজ যেন রাতারাতি আলাদা একটা ব্র্যান্ড হয়ে যায়। এ কারণেই কিনা ওই বছর ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল সাসেক্স মুস্তাফিজকে দলে চড়া দামে কিনে নেয়। মুস্তাফিজের জনপ্রিয়তা দ্রুত এতটাই বেড়ে যায় যে, সাসেক্স তার ‘৯০ নম্বর জার্সি’ বাজারে ছেড়ে বড় অঙ্কের টাকা উপার্জন করে। তবে সেই সাসেক্সে খেলার সময়ই ইনজুরিতে পড়ে যান মুস্তাফিজ। তারপর এখনো তাকে চেনা রূপে দেখা যাচ্ছে না।

স্বস্তির কথা হচ্ছে, ধীরে ধীরে স্বরূপে ফিরছেন কাটার মাস্টার। জাতীয় দলের হয়ে দারুণ বোলিংও করেছেন। সে কারণেই এবার মুস্তাফিজকে লুফে নিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস।

সাকিব অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। দীর্ঘদিন থেকে আইপিএল খেলছেন। দারুণ পারফর্মও করেছেন। যদিও সব শেষ মৌসুমে জাতীয় দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সফরে থাকায় মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছেন। তবে এবার পুরো মৌসুম খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। সানরাইজার্সে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আগামীকাল থেকে মাঠে গড়াচ্ছে আইপিএল। উদ্বোধনী দিনেই মাঠে নামবে মুস্তাফিজের মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। প্রতিপক্ষ চেন্নাই সুপার কিংস। ৯ এপ্রিল সাকিবের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে রাজস্থান রয়েলসের বিরুদ্ধে। কাটার মাস্টারের কারণে আগের আসরে বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের সমর্থন পেয়েছে হায়দরাবাদ। এবারও অরেঞ্জ আর্মিরা বাংলাদেশিদের হৃদয়ে স্থান পাবে— কারণ অবশ্যই সাকিব আল হাসান। তবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জায়গায় এবার মুম্বাই ইন্ডিয়ানসকে বেছে নিতে পারেন এদেশের সমর্থকরা— উপলক্ষ তো অবশ্যই মুস্তাফিজ।

সর্বশেষ খবর