‘সৌম্য-তাসকিনরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ’— এক দিন আগে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। অথচ এই ক্রিকেটারদেরই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাদের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ দিয়েছে। সৌম্য সরকার ও তাসকিন আহমেদের সঙ্গে বাদ পড়েছেন মোসাদ্দেক সৈকত, কামরুল রাব্বি, সাব্বির রহমান এবং ইমরুল কায়েস। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা পান ক্রিকেটাররা। তাই বিসিবি সৌম্য-তাসকিনদের বাজে পারফরম্যান্সের জন্য বাদ দিতেই পারে। তাদের জায়গায় নতুন কেউ সুযোগ পেতে পারতেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ক্রিকেটারের সংখ্যা ১৬ থেকে কমিয়ে আনা হলো ১৩-তে! বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সর্বশেষ নির্বাহী সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় চুক্তিতে এখন রয়েছেন ১০ ক্রিকেটার। বাকি তিনজনকে নেওয়া হবে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। এমনিতেই টেস্ট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেট বোর্ডগুলোর মধ্যে বিসিবির চুক্তিতেই সবচেয়ে কম ক্রিকেটার ছিলেন। সেখানে আরও কমিয়ে আনা হলো সংখ্যা।
অথচ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রয়েছেন ৩৫ জন ক্রিকেটার। সংখ্যায় বাংলাদেশের প্রায় তিনগুণ। এমন নয় যে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বেতন অনেক বেশি! পিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তির ৪টি ক্যাটাগরির মধ্যে ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরির ৬ জন ক্রিকেটারের মাসিক বেতন সাড়ে ছয় লাখ পাকিস্তান রুপি। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক সাড়ে চার লাখ রুপি করে। অথচ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেতন চার লাখ টাকা পান ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটাররা।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ক্রিকেটারের সংখ্যা মোট ২৬ জন। বিসিসিআইয়ের চুক্তিতে রয়েছে মোট ৪টি ক্যাটাগরি— এ+, এ, বি এবং সি। ‘এ+’ ক্যাটাগরিতে রয়েছেন মোট ৫ ক্রিকেটার। তাদের মাসিক বেতন ৭ কোটি রুপি। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৮ ক্রিকেটার এবং বাকি সব ক্রিকেটার বি ও সি ক্যাটাগরিতে। এ ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের বেতন ৫ কোটি রুপি, বি ক্যাটাগরির ৩ কোটি রুপি এবং সি ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের বেতন ১ কোটি রুপি।উপমহাদেশের আরেক ক্রিকেট পরাশক্তি শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রয়েছেন ২২ জন ক্রিকেটার। ক্রিকেটারদের বেতনও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চেয়ে অনেক বেশি।
এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ক্রিকেটারের সংখ্যা ২১। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রয়েছেন ২১ ক্রিকেটার। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রয়েছেন ২০ ক্রিকেটার। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তিতে রয়েছেন ১৮ ক্রিকেটার। তবে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তি ক্রিকেটারের সংখ্যা অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক কম হলেও পারিশ্রমিক আকাশচুম্বী। বোর্ডের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পান এই দুই দলের ক্রিকেটাররা। জনপ্রিয় ক্রিকেট নিউজ পোর্টাল ইএসপিএনক্রিকইনফোর ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়কদের মধ্যে বার্ষিক বেতন (কেন্দ্রীয় চুক্তি ও ম্যাচ ফি থেকে পাওয়া) সবচেয়ে বেশি অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের (নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে এখন)। তার বার্ষিক আয় ১.৪৬৯ মার্কিন ডলার। সবচেয়ে কম বেতন পান জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক— ০.০৯ মার্কিন ডলার। তবে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান জিম্বাবুয়ের অধিনায়কের চেয়ে একটুখানি বেশি পান। তার বেতন ০.১৪ মার্কিন ডলার।
বেতনের তালিকার প্রভাবশালী দল ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি রয়েছেন তিন নম্বরে। তার বার্ষিক বেতন ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট। তার বেতন ১.৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া অধিনায়কদের মধ্যে চতুর্থ স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস (০.৪৪ মা. ড.), পঞ্চম স্থানে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (০.৩২ মা. ড.), ষষ্ঠ স্থানে পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ (০.৩০ মা. ড.), সপ্তম স্থানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার (০.২৭ মা. ড.) এবং অষ্টম স্থানে রয়েছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন (০.২৫ মা. ড.)। এই তালিকায় সাকিব রয়েছেন নবম স্থানে।
কোচদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পান ভারতের কোচ রবি শাস্ত্রী। তার বার্ষিক আয় ১.১৭ মার্কিন ডলার। এর পরই অস্ট্রেলিয়ার কোচ ড্যারেন লেহম্যান। তার পারিশ্রমিক ০.৫৫ মার্কিন ডলার। তৃতীয় স্থানে ইংল্যান্ডের কোচ ট্রেভর বেলিস। তার আয় ০.৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মজার বিষয় হচ্ছে, অধিনায়ক সাকিবের বেতন কম হলেও বাংলাদেশের কোচ হাতুরাসিংহের পারিশ্রমিক ছিল সাকিবের দ্বিগুণেরও বেশি। যেখানে সাকিবের পারিশ্রমিক ০.১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সেখানে হাতুরার বেতন ছিল ০.৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।