বাংলাদেশের ফুটবলে স্মৃতি হয়ে গেলেন ‘মনু’। নাম মনির হোসেন মনু। ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডানের হয়ে বেশ কয়েকটি চোখ-ধাঁধানো গোল করে আশির দশকে ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। ক্লাবপ্রেমীরা আদর করে তাই নাম দিয়েছিলেন ‘কালো চিতা’। খুব বেশিদিন না খেলেও মোহামেডানের ঘরের ছেলে হয়ে ওঠা ‘মনু’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গতকাল দুপুর ১২টায় লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাফুফে, মোহামেডান ক্লাব, অবাহনী, ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স, বিএসজেসি, বিএসজেএ ও ক্রীড়া লেখক সমিতি। মাত্র তিন বছর খেলেছেন সাদা কালো জার্সি পরে। ক্লাবটির পক্ষে গোল করেছেন অনেক। কিন্তু অমর হয়ে আছেন মাত্র দুটি গোল করে। ১৯৮৬ সালে অলিখিত ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল আবাহনী-মোহামেডান। আবাহনী জিতলে টানা চার বছর শিরোপা জেতার বিরল রেকর্ড গড়ত। অন্যদিকে টানা চার বছর রানার্স-আপ হয়েই থাকতে হতো মোহামেডানকে। এমন সমীকরণের ম্যাচে জিততে কলকাতার ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব থেকে নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার চিমা ওকেরি, মনোরঞ্জন ধর ও ভাস্কর গাঙ্গুলীকে নিয়ে আসে আবাহনী। মোহামেডানেও দুজন বিদেশি ফুটবলার গণেশ থাপা ও ইবরাহিম সাঙ্গা খেলেছিলেন। টানটান উত্তেজনার ম্যাচটি মোহামেডান জিতেছিল ২-০ গোলে। সাদা কালো দলটির পক্ষে গোল দুটি করেছিলেন ইলিয়াস ও মনু। মনুর সেই গোলটি ছিল অসাধারণ, বিশ্বমানের। ডান প্রান্ত থেকে বল নিয়ে এক দৌড়ে ঢুকে পড়েছিলেন আবাহনীর বক্সে। এরপর ডান দিক থেকে দুরন্ত এক শট নেন। তার নেওয়া দুরন্ত গতির শটটি হঠাৎ বাঁক নিয়ে আবাহনীর গোলরক্ষক ভাস্করকে বোকা বানিয়ে জালে ঠাঁই নেয়। গোল হয়েছে মোহামেডানের ফুটবলার ও দর্শকদের বুঝতে বেশ সময় লেগেছিল। ওই গোলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহামেডান। ১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপেও মনু একই রকম গোল করেছিলেন চীনের গোয়াংডং ক্লাবের বিপক্ষে। মনু ১৯৮৪ সালে বিআরটিসি থেকে যোগ দেন মোহামেডানে। খেলেন ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত। ’৮৮ সালে যোগ দেন এলাকার ক্লাব ফকিরাপুলে।
ইনজুরির জন্য খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তার ক্যারিয়ার। যে কয়েক বছর খেলেছেন, গতি আর গোল দুটি করে স্মরণীয় হয়ে আছেন ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে।