রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপের ডামাডোল

রাশেদুর রহমান

বিশ্বকাপের ডামাডোল

এগারটি শহর। বারটি স্টেডিয়াম। প্রায় আট বছরের রক্ত আর ঘাম ঝরানো পরিশ্রম। বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ ব্যয়। আয়োজক রাশিয়া কঠোর সাধনায় নববধূর অপূর্ব সাজ নিয়ে অপেক্ষায় আছে। এখন কেবল আসরটা বসলেই হয়। ফুটবল দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিবে রুশরা। এই আশা ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার। নিন্দুকরা কিন্তু ভিন্ন কথাই বলেন। সে অন্য প্রসঙ্গ। বাস্তবতা হলো, ফুটবল দুনিয়ায় এখন বিশ্বকাপের ঢোল বাজছে। নাকাড়া বাজিয়ে নকীব শহরে শহরে ঘোষণা করে চলেছে, আসরের দিনক্ষণ আর লড়াইয়ের সম্ভাব্য চিত্তাকর্ষক বিবরণী। ভার্চুয়াল জগতে ফিফার হয়ে প্রচারণার কাজ করে দিচ্ছেন অনেকেই। ইউটিউবে বিশ্বকাপ নিয়ে হাজারো গান। ‘ম্যাজিক ইন দ্য ইয়ার’ সুরের তালে তালে বিশ্বকাপটাকে অনুভবের চেষ্টায় আছেন সমর্থকরা। বিশ্বকাপের আগমনী গান গেয়ে চলেছেন সুর-তাল-লয় না জানা আরও অনেকেই।

বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দরজায়। তারপরও ইউরোপিয়ান লিগগুলো মাতিয়ে রেখেছিল এতদিন। ইউরোপিয়ান লিগ ফুটবলের মোহ কেটে যাচ্ছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, বুন্দেসলিগা এবং ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন দল পেয়ে গেছে। ম্যানচেস্টার সিটি, বায়ার্ন মিউনিখ এবং পিএসজি। বাকি কেবল লা লিগা এবং ইতালিয়ান সিরি এ। বার্সেলোনা লা লিগায় একটা ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। ইতালিতে জুভেন্টাসের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টা করছে নেপোলি। তবে এই লিগের আকর্ষণও এখন আর তেমন একটা নেই। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপের মোহে আচ্ছন্ন হওয়ার সময় এসে গেছে। আগামী ৬ মে কিয়েভে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের পরই বিশ্বকাপ নিয়ে পুরোপুরি মেতে উঠবেন ফুটবল সমর্থকরা। তবে প্রিয় দলগুলো এই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ায় অনেকে এখনই বসে গেছেন অঙ্ক কষতে। বিশ্বকাপে প্রিয় দলের সম্ভাব্যতা যাচাই করছেন। ডিফেন্স লাইনটা ঠিক আছে তো! জার্মানির ঝড়ো গতি এবার রুখতে পারবে ল্যাটিন দলগুলো! ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা, ফাইনাল খেলবে কারা! চ্যাম্পিয়নই বা হচ্ছে কে? এসব প্রশ্ন কিলবিল করছে মাথায়। এদিকে রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট যারা পেয়েছেন তারা তো সৌভাগ্যবান। বাকিরা রাশিয়ান দূতাবাসগুলোতে ধরণা দিচ্ছেন। তাড়াতাড়ি ভিসা দাও ভাই, সময় যে আর নেই। কত কাজ বাকি! ট্যুর প্ল্যান করতে হবে। দলের পেছনে ছুটতে হবে। মাঠে প্রবেশাধিকার না পেলে কী হবে, ফ্যান জোন তো আছেই উৎসবে মেতে উঠতে। কাছে গিয়ে অটোগ্রাফের সুযোগ নেই তো কী হয়েছে, দূর থেকে হাত নাড়তে পারবো তো! এতেই চলবে। ৩২টি দলের সমর্থক যাবে রাশিয়ায়। কারও হাতে থাকতে পরম কাঙ্ক্ষিত টিকিট। কেউ বা খালি হাতে। তবে ফুটবল এমনই মহান, কাউকে খালি হাতে ফিরতে হবে না সেখান থেকে। বিশ্ব সংস্কৃতির মিলনমেলা দেখার অভিজ্ঞতা, জয়-পরাজয়ের নানান মুহূর্ত, সুখস্মৃতি আর রাশিয়ার সৌন্দর্য্যের সাগর থেকে কয়েকটা ফোঁটা। এসবও কী কম! সারা জীবন হৃদয়ে ধারণ করে রাখার মতো!

বিশ্বকাপ এলে বাংলাদেশে পতাকা উড়ে। নানান দেশের নানান রঙের। এখানকার মানুষ পতাকা উড়িয়েই ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা আর আবেগের প্রকাশ ঘটায়। এই আবেগের প্রকাশ ইউরোপ আর আমেরিকাতেও কম নয়। কোথাও ফুটবল মানেই জীবন। ফুটবলই ধ্যান-জ্ঞান জীবনের পরম কাঙ্ক্ষিত বস্তু। প্রতি বছরই নতুন করে ফুটবল নিয়ে মেতে উঠে সমর্থকগোষ্ঠী। তবে বিশ্বকাপ তো আর প্রতি বছরই হয় না। চার চারটে বছর অপেক্ষায় থাকতে হয় একটা বিশ্বকাপ দেখার জন্য। বিশ্বকাপের এখনো বাকি ৫২ দিন। এই দিনগুলো সোনালি ট্রফির স্বপ্নে বিভোর সমর্থকদের জন্য বড় কঠিনই হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর