১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফিতে ব্যর্থতার পর বাংলাদেশের ক্রিকেট সংকটের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এক অনুষ্ঠানে বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিলেন ক্রিকেটে অযথা অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ক্রিকেট দলকে আর দেশের বাইরে পাঠানো হবে কি না তা এখন ভাববার সময় এসেছে। আসলে ওই সময়ে ক্রিকেটের অবস্থা ছিল বড্ড নাজুক। বাংলাদেশের আগে কেনিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত নেদারল্যান্ডও বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। বারবার আইসিসি ট্রফিতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্রিকেটে বিশ্বকাপ খেলাটা স্বপ্নে পরিণত হয়। ফান্ডেরও এত করুণ হাল ছিল যে ফুটবল ফেডারেশনের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের আসর চালানো হতো।
সেই ক্রিকেট ঘুরে দাঁড়ায় ১৯৯৭ সালে। আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বপ্নের বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের বিশ্বকাপে অভিষেকের পর ক্রিকেটকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যদা লাভ। এরপর একের পর এক জয় পেয়ে বিশ্বে ক্রিকেটে বাংলাদেশ আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছে। ওয়ানডে, টেস্ট বা টি-২০তে উড়ছে লাল-সবুজের বিজয়ের পতাকা। বিখ্যাত ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলতে বাধ্য হচ্ছেন বাংলাদেশ এখন বিশ্ব জয়ের সামর্থ্য রাখে। আর ফান্ডের জন্য ক্রিকেটকে অন্য কারও কাছে হাত পাততে হয় না। ক্রিকেট বোর্ড এখন অন্য ফেডারেশনকেও সহযোগিতা করছে। এমন অবস্থা হয়েছে যে সাফল্য বলতেই দেশবাসী এখন ক্রিকেট ছাড়া কিছুই বোঝেন না। তাহলে কি অন্য খেলায় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়? এটা ঠিক অধিকাংশ খেলায় ব্যর্থতায় বৃত্তে বন্দী। কিন্তু অন্যান্য খেলায় সেভাবে কি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? প্রশ্ন উঠতে পারে ফুটবলের পেছনে তো অঢেল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তাহলে এই জনপ্রিয় খেলার ধস নেমেছে কেন? কথাটি সত্য। ফুটবলে খুবই করুণ হাল। জাতীয় দল কোনোভাবে ব্যর্থতা থেকে বের হতে পারছে না। এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা যে দেশে নতুন কোনো ফুটবলার তৈরি হচ্ছে না।
ভলিবল যেভাবে অযত্নে পড়েছিল। সেখানে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হবে কেউ কি ভেবেছিলেন? চোখ মেলে দেখা না হলেও সেই অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তিত করেছে বাংলাদেশ ভলিবল দল। ২০১৬ সালে ঢাকায় কিরগিজস্থানের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু এশিয়ান সিনিয়র সেন্ট্রাল জোনে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এবারও তাদের হারিয়ে ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। কিন্তু তুর্কমেনিস্তানের কাছে হেরে শিরোপা হাত ছাড়া হয়ে যায়। কিরগিস্তান বা তর্কমেনিস্তান বিশ্ব ভলিবলে কম শক্তিশালী নয়। তাদেরই বিপক্ষে বাংলাদেশ এখন সমান তালে লড়াই করছে তাকি ভাবা যায়? এতেই প্রমাণ মিলে ভলিবলের অগ্রগতি। এখন প্রয়োজন আরও উন্নতমানের প্রশিক্ষণ। আগে চোখ মেলে না তাকালেও এখন সময় এসেছে ভলিবলকে নিয়ে ভাববার।
আরচারি বা কম কিসের? বেশিদিন হয়নি এই খেলা বাংলাদেশে হচ্ছে। তারপরও সাফল্যর পতাকা ওড়াচ্ছে। ইসলামি সলিডারিটি ও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের আরচাররা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। জার্মানি কোচ বলেছেন তার লক্ষ্য অলিম্পিক। কোচ বললে তো আর হবে না। দিতে হবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সুযোগ সুবিধা। এতদিন চক্ষু মেলিয়া দেখা না হলেও এখন অল্প নজরেই প্রমাণ মিলছে ক্রিকেট ছাড়াও অন্যান্য খেলাতে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। দৃষ্টি দিতে হবে হ্যান্ডবল, অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, ভারোত্তোলন, কুস্তি বা অন্য খেলাতেও। যেসব খেলায় সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে চোখ মেলে দেখতে হবে। অযথা হা-হুতাশ করে লাভ নেই।