শনিবার, ১২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

শেষ দিনে রোমাঞ্চের অপেক্ষা

মেজবাহ্-উল-হক

শেষ দিনে রোমাঞ্চের অপেক্ষা

আগের দিন শীর্ষে থাকলেও গতকাল সাতে নেমে আসে জামাল হোসেন মোল্লা। তবে আজ টুর্নামেন্টের শেষ দিনে দর্শকদের দৃষ্টি থাকবে তারই দিকে —এএফপি

মৃত্যুফাঁদ হয়ে গেছে কুর্মিটোলা গলফ কোর্সের ৩ নম্বর হোল! ৫ পারের এই হোল এশিয়ান ট্যুরে এসে ১ পার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে ‘৪ চার পার’ হওয়ায় স্থানীয় গলফাররা এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না! যার কারণে এই হোলে বাড়তি মনোযোগ দিতে গিয়েই বিপদে পড়ে যাচ্ছেন।

গতকাল জামাল হোসেন মোল্লা এই ৩ নম্বর হোলে গিয়েই মহাবিপদে পড়ে যান। বার্ডির আশায় টি-শটটা বেশি জোরে করার কারণে বল ফেয়ারওয়ের বাইরে গিয়ে পড়ে। সেখান থেকে শট করলে বল গাছে গিয়ে লেগে অন্য পাশে গাছের বাগানের ভিতরে ঢুকে যায়।

জামালের এই অবস্থা দেখে দর্শকদের মাথায় হাত! বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন কি তবে এখানেই শেষ হয়ে গেল? ‘ট্রিপল বগি’ বা আরও বাজে কিছু হতে পারত। কিন্তু অসাধারণ দক্ষতায় ‘ডাবল বগি’-তে রক্ষা। কিন্তু শুরুতে ডাবল বগি খাওয়াও তো একটা বড় ধাক্কা। শেষ পর্যন্ত এ ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি জামাল। তাই গতকাল পারের চেয়ে এক শট বেশি খেলে ফেলেন। তিন রাউন্ড মিলে ‘৭ আন্ডার পার’। যৌথভাবে সপ্তম স্থানে রয়েছেন তিনি।

‘১১ আন্ডার পার’ খেলে শীর্ষে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের জ্যাক হ্যারিসন। ‘১০ আন্ডার পার’ খেলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার গলফার মিথুন পেরেরা। অস্ট্রেলিয়ার গলফার বেন ক্যাম্পবেল পারের চেয়ে ৯ শট কম খেলে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। পারের চেয়ে ৮ শট কম খেলে যৌথভাবে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন ভারতের ধরমা, সুইডেনের ম্যালকম ও থাইল্যান্ডের সুতিজেত।

দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান তৃতীয় রাউন্ডেও ছন্দে ফিরতে পারেননি। গতকাল তিনি পারের চেয়ে মাত্র এক শট কম খেলেছেন। সব মিলে পারের চেয়ে দুই শট কম খেলে যৌথভাবে ১৯তম স্থানে রয়েছেন। বাংলাদেশের আরেক গলফার বাদল হোসেনও দুই শট কম খেলে একই অবস্থানে রয়েছেন। দ্বিতীয় রাউন্ড শেষে মোট ৬৯ জন গলফার ‘কাট’ পেয়েছেন। মূলত কাট পাওয়া গলফাররাই তৃতীয় ও চতুর্থ রাউন্ড খেলার সুযোগ পান এবং পজিশন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভগ্নাংশের প্রাইজমানি। এবারের আসরে বাংলাদেশের মোট ১০ জন গলফার কাট পেয়েছেন।

স্থানীয় গলফাররা আটকে গেছেন ওই ৩ নম্বর হোলেই। জামালের পর ‘মৃত্যুফাঁদ’ হয়ে যাওয়া ওই হোলে ‘ডাবল বগি’ খেয়েছেন আরেক গলফার মোহাম্মদ মুসা। ৩ নম্বর হোলে বগির হাত থেকে বাঁচতে পারেননি কাট পাওয়া অন্য চার গলফার দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ রবিন, নুর জামাল, আবদুল মতিন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এক গলফার বলেন, ‘৩ নম্বর হোলে আগে ৫ পার ছিল। আমরা ওই হোলে গিয়ে নিশ্চিত বার্ডি নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বাকি হোলগুলোতে খেলতাম। হঠাৎ পারের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সেখানে বাড়তি মনোযোগ দিতে হচ্ছে। ওই হোলে গিয়ে টেনশন বাড়ছে। বেশি সতর্ক হতে গিয়েই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর এই প্রভাবটা পুরো খেলায় পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিদেশিরা তো প্রথম খেলছেন, তাদের কাছে ৪ পারই কি আর ৫ পারই কি? তবে আমাদের কাছে পরিচিত হোলটা অপরাজিত হয়ে গেছে।’

কাট পাওয়া ৬৯ জন গলফারের মধ্যে বাংলাদেশের মাত্র ১০ জন! দেশের গলফের জন্য এটি হতাশার চিত্রই বটে। কেন এমন অবস্থা? হতাশা ব্যক্ত করে এক গলফার বলেন, ‘বিশ্বে গলফ বলতে আমরা যা দেখি বা শুনি তা হচ্ছে পেশাদার গলফ। পেশাদার গলফারই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু আমাদের দেশে পেশাদার গলফাররা খুবই অসহায়। এই কুর্মিটোলায় যত আধিপত্য শৌখিন গলফারদের। পেশাদাররা এখানে সপ্তাহে মাত্র দুই দিন অনুশীলন করার সুযোগ পান। গ্রিনের গতি থাকে শৌখিন গলফারদের মনমতো করা— খুবই স্নো। অথচ এই টুর্নামেন্টে গ্রিনের গতি অনেক বেশি। পরিচিত কোর্সটাই আমাদের কাছে অচেনা লাগে। এত প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আমরা আর কত ভালো খেলব?’

এবি ব্যাংক বাংলাদেশ ওপেনে এখনো বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়নি। অনিশ্চয়তার খেলা গলফ বলেই স্বপ্ন দেখছেন জামাল হোসেন। শেষ দিনে নিজের সেরাটা দিতে পারলে এশিয়ান ট্যুরের প্রথম শিরোপাটা তার হাতেই উঠে যেতে পারে। অনেকটা পিছিয়ে পড়লেও এখনো আশা ছাড়ছেন না সিদ্দিকুর, ‘এই কোর্সে এক দিনে ১০ আন্ডার পার খেলার রেকর্ড আছে আমার। তাই আমি এখনো আশাবাদী!’

কুর্মিটোলায় তবে কি আজ রোমাঞ্চকর কিছু ঘটতে চলেছে? দেখা যাক বাংলাদেশ ওপেনের শেষ দিনে নাটকীয় কিছু ঘটে কিনা!

 

 

সর্বশেষ খবর