দুয়ারে বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে। যুদ্ধের নাকাড়া বাজার মতোই যেন ফুটবলভক্তদের কানে বাজছে বিশ্বকাপের সংগীত। রাশিয়ায় ৩২ দলের লড়াই শেষে কার গলে থাকবে বরমাল্য? এর উত্তর নিয়ে বিভক্ত গোটা ফুটবল দুনিয়া। চায়ের টেবিলে ঝড়। পরিবারে বিভক্তি। বন্ধুত্বে ফাটল। কিন্তু এসবের মধ্যে আছে দারুণ একটা মিল। সবার কণ্ঠেই ফুটবলের জয়গান। চরম বিভক্তি রেখা টেনেও তাই সবাই গাইছে ঐক্যের গান। কে জিতবে বিশ্বকাপ? এর উত্তর তোলা থাক ১৫ জুলাইয়ের জন্য। বিশ্ব জয়ের জন্য কার কৌশল কেমন তাই দেখে নেওয়া যাক।
বিশ্বকাপের শীর্ষ ফেবারিট বলতে এক কথায় বলে দেওয়া যায় দুটি নাম। জার্মানি ও ব্রাজিল। ভক্ত, সমর্থক, দর্শক, বোদ্ধা সবাই মিলে এই দুই দলের কাঁধেই চাপিয়েছে হট ফেবারিটের তকমা। বাজির দরটা জার্মানি ও ব্রাজিলকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি। এরপর মেসিদের আর্জেন্টিনা, টিকিটাকার স্পেন আর তরুণ ফ্রান্সের কথাও সবাই ভাবছে। রাশিয়া বিশ্বকাপের পাঁচ ফেবারিট এরাই। ব্রাজিলের তিতে, আর্জেন্টিনার হোর্হে সাম্পাওলি, জার্মানির জোয়াকিম লো, ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশম আর স্পেনের হুয়ান লোপেতেগুই। ফেবারিট দলের এই পাঁচ কোচ কী ভাবছেন বিশ্বকাপ নিয়ে? তাদের রণকৌশলটাই বা কী হতে যাচ্ছে?
তিতের ব্রাজিল নতুন এক স্বপ্ন বুনছে। ধ্বংস্তূপের ভিতর থেকে বেরিয়ে নতুন দিনের গান গাইছে ‘ওলে, ওলে, ওলে’র উত্তরসূরিরা। নেইমার-কটিনহো-পলিনহোরা আরও একবার ব্রাজিলে স্বপ্নের জোয়ার তৈরি করেছেন। তিতের দল গত প্রায় দুই বছর ধরেই দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে। ইতিহাসের নিম্নতম স্থান থেকে উঠে এসেছে শীর্ষে। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে বদ্ধ পরিকর নেইমাররা। তিতে এক সাক্ষাৎকারে কিছুদিন আগেই বলেছেন, ব্রাজিল খেলবে চিরায়ত আক্রমণাত্মক ফুটবল।ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে। গ্রেট মাইন্ডস থিঙ্ক অ্যালাইক। ফেবারিট দলগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা, স্পেন ও জার্মানিও ব্রাজিলের পদাঙ্কই অনুসরণ করছে। আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলবে তারাও। তবে কৌশলগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন ল্যাটিন ফুটবল একটা শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করতে ফুটবল খেলে। যেখানে দর্শকরা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকেন। ওরা কেবল জয়ের জন্য নয়, নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতেও ফুটবল খেলে।
অন্যদিকে জার্মানি ফুটবলটা খেলে জয়ের জন্য। এখানে সৌন্দর্য্যের চেয়ে বেশি মূল্যায়ন করা হয় গোলটা কিভাবে হলো। লম্বা পাসে দ্রুতগতিতে কাউন্টার আক্রমণ। সমুদ্রের তরঙ্গের মতোই জার্মানরা সমানতালে উপরে উঠে আসে। আবার ডিফেন্সে নেমে যায়। স্পেন অবশ্য এখনো টিকিটাকার ফুটবলেই আছে। পাসিং ফুটবলের শেষ ঝলক দেখানোর অপেক্ষায় আছেন রামোস-ইনিয়েস্তারা।
ফরাসিরা দীর্ঘদিন ধরে খেলছে ৪-৩-৩ ফরমেশনে। আক্রমণভাগে এমবাপ্পে-গ্রিজমান-দেম্বলে ত্রয়ীর ফুটবল হবে দেখার মতো। যে কোনো ডিফেন্স লাইন ভাঙার সামর্থ্য নিয়েই বিশ্ব যুদ্ধে নামছে ফরাসিরা। মধ্য মাঠটাও যথেষ্ট শক্তিশালী। পল পগবা, মাতুইদি আর কান্তে। আর ডিফেন্স লাইনটা বর্তমানের সেরা বলা যায়।
উমতিতি, রাফায়েল ভারানে, আদিল রামি আর বেঞ্জামিন মেন্দিরা একটা দুর্গই গড়ে তুলেছেন। ফ্রান্সও বিশ্বকাপে আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলবে। তবে তাদের খেলায় থাকবে ‘টোটাল ফুটবলে’র ছন্দ। ফেবারিটদের রণ কৌশল মোটামুটি একই রকমের। দেখা যাক, এবার চূড়ান্ত লড়াইয়ে বিজয়ী হয় কারা?