শনিবার, ৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

পরিকল্পনার অভাবে ভরাডুবি

মেজবাহ্-উল-হক

পরিকল্পনার অভাবে ভরাডুবি

‘আফগানিস্তানের মতো দলের বিরুদ্ধে সিরিজ হারের পেছনে টিম ম্যানেজমেন্টের বড় দায় আছে। কেননা প্রথম ম্যাচে হারার পর তারা ক্রিকেটারদের সেভাবে উজ্জীবিত করতে পারেননি’

 

আগের সিরিজেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে নিদাহাস ট্রফিতে টানা দুই ম্যাচ জিতে ইতিহাস গড়ে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। পরের সিরিজেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৩-০-তে হোয়াইটওয়াশ। পাহাড়ের চূড়া থেকে হঠাৎ পাদদেশে। কেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই অবস্থা? সাবেক ক্রিকেটার, কোচ, বিশ্লেষকদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা না থাকার কারণেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ‘ভরাডুবি’ হয়েছে বাংলাদেশের। দেশসেরা কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন টাইগারদের এমন ভরাডুবির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘যে কোনো ম্যাচে বা সিরিজে জয়ের জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা। কিন্তু এই সিরিজে বাংলাদেশ দলকে দেখে মনে হয়েছে সেই জায়গাতেই বড় ঘাটতি। খুব ঘন ঘন ক্রিকেটার পরিবর্তন করা হয়েছে। স্পিনারদের বিরুদ্ধে কীভাবে খেলতে হবে তা বুঝতে পারছেন না ব্যাটসম্যানরা। সেখানকার উইকেটের সঙ্গে ভালোভাবে অ্যাডজাস্ট করতে পারেননি।’

স্বাধীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দ্বিতীয় অধিনায়ক রকিবুল হাসান বলেন, ‘প্রতিটি দলেরই পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হয় ক্রিকেটারদের। আমাদের ক্রিকেটাররা সে কাজটা করতে পারেননি।’

বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক ও ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান খন্দকার জামিল উদ্দীন বলেন, ‘যে কোনো মূল পরিকল্পনা করেন প্রধান কোচ। কিন্তু বাংলাদেশ দলে তো ৬-৭ মাস থেকে কোনো কোচই নেই।’ আফগানিস্তানের তিন পেসার রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী ও মুজিব উর রহমানই সাকিবদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন। এই স্পিন-ত্রয়ীকে ঠিকমতো খেলতেই পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। রকিবুল বলেন, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সব সময় কেমন যেন শঙ্কা কাজ করেছে। সবার মাঝেই কেমন যেন জড়তা। যে কারণে ঠিকমতো খেলতে পারেননি।’ সালাউদ্দীনের দাবি, ‘সত্যিই তিন আফগান স্পিনার অসাধারণ বোলিং করেন। কিন্তু স্পিনের বিরুদ্ধে কীভাবে খেলতে হবে তা ক্রিকেটারদের বুঝিয়ে দিতে পারেননি কোচ। দীর্ঘ মেয়াদে হেডকোচ না থাকার কারণেই এমন হয়েছে।’ জামিল উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানরা রশিদ খানকে বেশি চাপ হিসেবে নিয়ে ফেলেছিলেন। এ কারণেই বেশি ঝামেলা হয়েছে। রশিদ ভালো বোলার, কিন্তু তাকে এত ভয় পাওয়ার কী আছে? আমরা তো ১৩-১৪ বছর থেকে টপ লেভেলে ক্রিকেট খেলছি। মুরালিধরন, শেন ওয়ার্নের মতো ভয়ঙ্কর বোলারদের বিরুদ্ধেও খেলেছি। তাহলে এত ভয় পাব কেন?’

পেস বোলিংয়ে দুর্বলতার কথাও বলেন মোহাম্মদ সালাউদ্দীন, ‘আমাদের পেস বোলিংয়ে একেবারেই ধার নেই। স্পিনেও আফগানদের চেয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। যে কারণে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এই অবস্থা হয়েছে।’

এই ব্যর্থতার পেছনে আরও কয়েকটা কারণ খুঁজে পেয়েছেন রকিবুল ও সালাউদ্দীন—

১. নিয়মিত টি-২০ ক্রিকেট না খেলার কারণে ক্রিকেটাররা বুঝতে পারেননি। বিপিএল ছাড়া আর কোনো কার্যকরী টি-২০ লিগ হয় না।

২. টি-২০-তে পাওয়ার হিটার দরকার হয়। যারা শেষ দিকে খুব কম বলে বেশি রান তুলবেন। যে কাজটা আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা পারেননি।

৩. বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে বেশি অস্থিরতা ছিল। যে কারণে অযথা শট খেলতে গিয়ে উইকেট হারিয়েছেন।

৪. বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বোলিং করতে পারেননি বাংলাদেশের পেসাররা। যে কারণে স্লগ ওভারে তারা মার খেয়েছেন।

এ ছাড়াও সাবেক অধিনায়ক, ক্রিকেট-বিশ্লেষক, কোচ, সংগঠকরা আরেকটি কারণকে সামনে নিয়ে এসেছেন এমন ভরাডুবির পেছনে— ‘আফগানিস্তানের মতো দলের বিরুদ্ধে সিরিজ হারের পেছনে টিম ম্যানেজমেন্টের বড় দায় আছে। কেননা প্রথম ম্যাচে হারার পর তারা ক্রিকেটারদের সেভাবে উজ্জীবিত করতে পারেননি।’

 

তবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পরও শঙ্কার কোনো কারণ দেখছেন না রকিবুল ও সালাউদ্দীন। তাদের মতে, ক্রিকেটে কখনো কখনো এমন হয়। যেহেতু এখন নতুন কোচ এসেছেন, হয়তো সবই ঠিক হয়ে যাবে। এই ভরাডুবির প্রভাবটা ভবিষ্যতের ক্রিকেটে পড়বে বলে মনে করেন না তারা।

বাংলাদেশ দল দেরাদুন থেকে গতকাল দেশে ফিরেছে। এরপর ২০ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। খুশির খবর হচ্ছে, টাইগাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাবে নতুন কোচ স্টিভ রোডসের তত্ত্বাবধানে। এখন দেখার পালা— ক্যারিবীয় দ্বীপে কেমন করেন সাকিবরা!

সর্বশেষ খবর