কমরেড কিরভ আগত অতিথিদের আসন দেখিয়ে বসার নিমন্ত্রণ করছেন। দৃশ্যটা বহু বহু বছর আগের। সম্ভবত এভাবেই তিনি তার কমরেডদের আবেদন জানাতেন। হয়তবা সম্মুখ সমরের সেই দিনগুলোতে এভাবেই তার সহযোদ্ধাদের দিক নির্দেশনা দিতেন। কমরেড কিরভ বলশেভিক বিপ্লবের এক অন্যতম সেনাপতির নাম। তিনি দাঁড়িয়ে আছেন বিশ্বকাপের জন্য নতুন করে গড়ে ওঠা সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামের সদর দরোজার ঠিক সামনে। পাশেই ক্রেসত্রভস্কি পার্ক। নানান ফুল-ফল আর সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছের সমাহার পার্কে। ক্রেসত্রভস্কি আসলে একটা দীপ। সেন্ট পিটার্সবার্গের এই দ্বীপটাই এখন শহরে বিশ্বকাপের মূল কেন্দ্র। সাবেক কিরভ স্টেডিয়ামের ওপর এখন দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল স্থাপনা। যেখানে সমর্থকদের জন্য অপেক্ষায় আছে ব্রাজিল-কোস্টারিকা এবং আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ দেখতে।
ফিনল্যান্ড সাগরের মোহনা থেকে তৈরি হয়েছে নিয়েভা নদী। সেন্ট পিটার্সবার্গকে কয়েকটা ধারায় চিড়ে দিয়ে পৌঁছে গেছে লাদোগা লেকে। এই নদীর ওপরেই তৈরি হয়েছে শত শত কালভার্ট। জারদের আমলে তৈরি করা এসব কালভার্ট আজও শোভা বাড়াচ্ছে সেন্ট পিটার্সবার্গের। ফিনল্যান্ড সাগরের তীরেই দাঁড়িয়ে আছে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম। স্পেসশিপের আদলে তৈরি করা স্টেডিয়ামটির জন্য রাশিয়ানরা খরচ করেছে অনেকটা সময়, ঘাম, শ্রম, রক্ত আর অর্থ। তবে সবকিছু মিলিয়ে যা দাঁড়িয়েছে, তা সত্যিই অসাধারণ। ফুটবলারদের মাঠ থেকে প্রেস কনফারেন্সে আসতেও তাদের চড়তে হয় বিএমডব্লিউ গাড়ি। স্টেডিয়ামটা এক চক্কর দিতেই কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হয়। আর পুরো স্টেডিয়াম চত্বর দেখতে গেলে, বড় একটা দিনও বুঝি কুলোবে না। এখানে লোকেরা এসে সময় কাটায়। প্রাণ জুড়াতে বিদেশিরা তো বটেই, শহরের বাসিন্দারাও মেট্রো চড়ে বিকালটা এখানে কাটাতে আসে। বেশিরভাগেরই থাকে স্কেটিং শু। বাচ্চারা ছোটাছুটি করে। খেলে বেড়ায়। কিন্তু স্থানটা এতই বিশাল, ধারণ করতে পারবে যেন পুরো দুনিয়াকেই! হাজার, লাখ কিংবা কোটি মানুষ এলেও বুঝি এর সমস্যা হবে না। দর্শকধারণ ক্ষমতা প্রায় ৬৭ হাজার। কিন্তু বাইরের পার্কটা অযুত-নিযুত মানুষকে ধারণ করতে পারের।