শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

এবার গায়ানা ট্র্যাজেডি

মেজবাহ্-উল-হক

এবার গায়ানা ট্র্যাজেডি

গায়ানায় শেষ বলে দরকার ছিল ৫ রান। জেসন হোল্ডারের বল থেকে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি মাশরাফি। জেতা ম্যাচ হেরে হতাশ টাইগার অধিনায়ক। উত্ফুল্ল ক্যারিবীয় পেসার —এএফপি

যে মঞ্চে মিলনার্থক নাটক মঞ্চস্থ হয় সেখানে যে ট্র্যাজেডিও মঞ্চস্থ হতে পারে খুব কাছে থেকে দেখল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। পয়মন্ত ভেন্যু গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামের ৩ রানের হারটা যেন গোটা বাংলাদেশকেই শোকাভিভূত করে দিয়েছে। এমন ম্যাচেও কেউ হারে?

উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে এসে তীরে লাফিয়ে আত্মহত্যা! -এক কথায় কালকের ম্যাচের সারমর্ম। আবারও শেষ ওভারে ব্যর্থতা। আবারও তীরে এসে ডুবল তরী। গায়ানায় নাটকীয় ম্যাচে শেষ ওভারে হেরে গেল বাংলাদেশ। ২০১২ সালে মিরপুরে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুর চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচটির কথাও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। শ্রীলঙ্কায় নিদহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার কষ্ট এখনো কাঁদায় ক্রিকেটামোদীদের। এবার সেই ট্র্যাজেডিগুলোর সঙ্গে যুক্ত হলো গায়ানার আরেক ট্র্যাজেডি। কেন বার বার বাংলাদেশই এমন বেদনার ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছে? এভাবে আর কত ম্যাচ হারবে টাইগাররা?

শেষ ৭ বলে দরকার ছিল মাত্র ৮ রান। হাতে ছয় ছয়টি উইকেট। বাইশগজেও রয়েছেন দুই সেট ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমান। ৪৯তম ওভারের শেষ বলে বিলাসী শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে যান সাব্বির। শেষ ওভারে ক্যারিবীয় অধিনায়ক বল হাতে নেওয়ায় জয়টা যেন আরও সহজসাধ্য ব্যাপার হয়ে যায় বাংলাদেশের। কেন না জেসন হোল্ডারকে আগের ওভারেই বেদম পিটিয়েছে মুশফিক। তা ছাড়া ম্যাচে সবচেয়ে বাজে বোলিংও করেছেন উইন্ডিজ দলপতি। সেই হোল্ডারই কিনা বাজিমাত করে দিলেন।

শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মুশফিক বিদায় নিলেন। যে বলে ছক্কা হওয়ার কথা সেখানে মুশফিক তুলে দিলেন ক্যাচ। ৫ বলে ৮ রান দরকার। তখনও ম্যাচ টাইগারদের হাতের মুঠোয় ছিল। কিন্তু মোসাদ্দেক উইকেটে গিয়ে এ কী করলেন?

প্রথম দুই বল ডট। তখনই ম্যাচ চলে যায় ক্যারিবীয়দের হাতে। তারপরের দুই বল থেকে তিন রান নিলেন। মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে চার বলে তিন রান করে বাংলাদেশকেই যেন ডুবিয়ে ছাড়লেন মোসাদ্দেক। শেষ বলে দরকার বাউন্ডারি, কিন্তু পারলেন না মাশরাফি। এভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে রচিত হলো আরেকটি ট্র্যাজেডি।

কালকের ম্যাচে শুরু থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায় ছিল না চিরচেনা উজ্জীবিত ভাবটা। একের পর ফিল্ডিং মিস হতে থাকে। সাকিবের মতো ফিল্ডারের হাত থেকে ক্যাচ ফসকে বল ছক্কা হয়ে যায়। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার মিস করেছেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান হিটমায়ারের ক্যাচ। ৭৯ রানে নতুন জীবন পাওয়া সেই হিটমায়ারই খেলেছেন ১২৫ রানের ইনিংস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়েছিল ২৭১ রানের লড়াকু স্কোর।

কিন্তু বাংলাদেশ যেভাবে ইনিংস শুরু করেছিল মনে হচ্ছিল ২৭২ রানের টার্গেটটা টপকে যাওয়া নিছক সময়ের ব্যাপার মাত্র। কেন না প্রথম ৫ ওভারেই টাইগারদের স্কোর বোর্ডে রান ৫৫। বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো শুরু। পাওয়ার প্লে-র ১০ ওভারে আসে ৭৯ রান। এরপরই দ্রুত ম্যাচের চিত্রনাট্য পাল্টে যেতে থাকে। স্পিনাররা আসায় ধীরে ম্যাচ চলে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে।

দিবা-রাত্রির ম্যাচে শিশিরের কথা চিন্তা করে টস জিতে ক্যারিবীয়দের প্রথমে ব্যাটিং পাঠান মাশরাফি। এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বড় ভুল করে বাংলাদেশ। কেন না রাতে গায়ানায় তেমন একটা শিশির পড়েনি। তাই ব্যাটিং বোলিং দুই সময়েই বাড়তি সুবিধা পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। দিনের আলোয় শুকনো উইকেটে তারা ব্যাটিং করেছে। আর রাতে উইকেটে ভয়ঙ্কর টার্ন করছিল। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ক্যারিবীয় স্পিনারদের খেলতেই পাচ্ছিলেন না। এমন কি গেইলের মতো অকেশনাল স্পিনারও ভয়ঙ্কর সব ডেলিভারি দিচ্ছিলেন।

ইনিংসের শুরুটা সুন্দর হওয়ায় তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান মিলে উইকেটে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে রুখে দিচ্ছিলেন ক্যারিবীয় স্পিনারদের। এই ধীর গতি হলেও এই জুটিতে আসে ৯৭ রান। কিন্তু রানের গতি বাড়ানোর চিন্তা করতে গিয়ে বিপদে পড়ে যান তামিম। সামনে এগিয়ে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হয়ে যান। তামিমের বিদায়ের পর সাকিবও বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি। হাফ সেঞ্চুরি করে দুই তারকাই সাজঘরে ফেরেন। মাত্র ১৬ রানের ব্যবধানে তামিম-সাকিবকে হারিয়ে বিপদেই পড়ে বাংলাদেশ।

আসল লড়াইটা করেছেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ মিলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে। ভয়ঙ্কর স্পিনের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের নিজের উইকেটও রক্ষা করতে হয়েছে পাশাপাশি রানের চাকাও সচল রাখতে হয়ে। এই জুটি ৮৭ রান আসার পর হঠাৎ ছন্দপতন হয়ে যায়। ভুল বোঝাবুঝির কারণে রান আউট হয়ে যান মাহমুদুল্লাহ। ৩৯ রান করে বিদায় নিয়েছেন তিনি। মাহমুদুল্লাহর রান আউটের পেছন বড় দায় ছিল মুশফিকের অমনোযোগিতা! এই জন্যই কিনা কাল হাফ সেঞ্চুরির পর ব্যাট শো করেননি মুশি। হয়তো ভেবেছিলেন জয়টাই মাহমুদুল্লাহকে উপহার দেবেন! কিন্তু তা আর হলো কোথায়। উল্টো ৬৮ রানের অনিন্দ্য সুন্দর ইনিংস খেলেও শেষ মুহূর্তে একটুখানি ভুলের জন্য ‘ট্র্যাজিক নায়ক’ হয়ে গেলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর