বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাল্টে গেছে ঘরোয়া ফুটবলের চেহারা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

পাল্টে গেছে ঘরোয়া ফুটবলের চেহারা

ঘরোয়া ফুটবলে এক সময়ে ঢাকা আবাহনী ও মোহামেডানের দাপট ছিল তুঙে। লিগ ছাড়াও যেকোনো টুর্নামেন্ট হয় আবাহনী না হয় মোহামেডান ট্রফি জিততো। সেই দাপটে চিড় ধরে ১৯৯৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ শক্তিশালী দল গড়ার পর। সেবার তারা ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন। লিগে রানার্সআপ হয়। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে দুই প্রধানের দেড় যুগের দাপট ভেঙে মুক্তিযোদ্ধা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। তবু মোহামেডান-আবাহনীর রাজত্ব ছিল ফুটবলে। তাদের বিকল্প হিসেবে তুলনা করা হতো গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়নকে। তারকা খেলোয়াড় নিয়েও তারা কুলিয়ে উঠতে পারছিল না। ১৯৭৫ সালে অভিষেক হলেও লিগ জিততে তাদের প্রায় তিন দশক পার হয়ে যায়।

পেশাদার লিগ মাঠে গড়ানোর পর ঘরোয়া ফুটবলে দৃশ্য পাল্টে গেছে। প্রথম তিন মৌসুমে শক্তিশালী দল গড়ে রানার্সআপ হলেও মোহামেডানকে এখন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা আবাহনী ৬ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অথচ ২০০২ পর শিরোপা যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী দলটির। এখন এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা যে শক্তিশালী দল গড়বে সেই সামর্থ্যও নেই সাদা-কালোদের। তবে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব নতুনভাবে আবির্ভূত হওয়ার পর বাজিমাত করে ফেলে। তিন বার লিগ ও তিন বার ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। গতবার ছিল লিগে রানার্সআপ। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রও শক্তিশালী দল গড়ে একবার লিগ চ্যাম্পিয়ন ছাড়াও হয়েছে রানার্সআপ। একবার ফেডারেশন কাপ জিতেছে। পিছিয়ে নেই বন্দর নগরীর চট্টগ্রাম আবাহনীও। শক্তিশালী দল গড়ে একবার ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন ও লিগে রানার্সআপ হয়েছে।

সাইফ স্পোর্টিংও গতবার পেশাদার লিগে শক্তিশালী দল গড়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে। এবার আসছে বসুন্ধরা গ্রুপের নিজস্ব ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। গতবার চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পেশাদার লিগে সুযোগ পেয়েছে তারা। শুধু অংশগ্রহণ নয়, অভিষেক আসরেই তাদের লক্ষ্য শিরোপা। তাই দেশি ও বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে শক্তিশালী দল গড়ে মাঠে নামবে বসুন্ধরা কিংস। ইতিমধ্যে জাতীয় দলের বেশ কজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে চুক্তিও করে ফেলেছে ক্লাবটি। অর্থাৎ পেশাদার লিগে নতুনদের আগমনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েই চলেছে। আগে শক্তিশালী দল গড়তো আবাহনী, মোহামেডান বা বড়জোর ব্রাদার্স। মুক্তিযোদ্ধা পরবর্তীতে শক্তিশালী দল গড়লেও তা তারা ধরে রাখতে পারেনি।

এখন তো পেশাদার লিগে ১৩ দলের মধ্যে ছয় দলই শিরোপা জেতার সামর্থ্য রাখে। বসুন্ধরা কিংসের আবির্ভাবের পর ঘরোয়া ফুটবলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে আরও বাড়বে এ নিয়ে সংশয় নেই। মোহামেডানের মতো খ্যাতনামা দল শক্তিশালী রূপ ধারণ করতে পারছে না এটা তাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা। তা না হলে অন্যরা পারলে তারা কেন পারবে না।

১০ আসরে একবারও পেশাদার লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না তা কি মোহামেডানের মতো দলের জন্য মানায়? যারা পারছে তাদের প্রশংসা করতেই হয়। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশ যেখানে অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। এই দুর্দিনেও ক্লাবগুলো কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। প্রকৃতপক্ষে ফুটবলকে বাঁচিয়ে রেখেছে ক্লাবগুলোই।

বার বার একদল চ্যাম্পিয়ন না হয়ে লিগে নতুন দল নতুন শক্তির দেখা মিলবে এই প্রত্যাশাটাই করে ফুটবলপ্রেমীরা। শুধু শিরোপা নয়, বসুন্ধরা কিংসের লক্ষ্য ফুটবলের হারানো গৌরব ও জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনা। তাই তারা প্রতিভা সন্ধান ও ঢাকার বাইরে নিজ উদ্যোগে টুর্নামেন্টও করছে। এভাবে যদি অন্য দলও এগিয়ে আসে তাহলে ফুটবলে প্রাণ সঞ্চার হবেই।

সর্বশেষ খবর