বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ না ভুটান

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশ না ভুটান

খোশমেজাজেই আছেন মারিয়া, আঁখি ও শামসুন্নাহাররা। ভুটানকে হারিয়ে আজ কি সেই হাসি ধরে রাখতে পারবেন তারা —বাফুফে

ফুটবলে কোনো আসরেই বাংলাদেশের টানা দ্বিতীয়বারের শিরোপা জয়ের রেকর্ড নেই। ১৯৮৯ সালে লালদল প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ট্রফি জিততে পারেনি। অবশ্য ১৯৯২ সালের পর প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপ আর মাঠেই গড়ায়নি। ১৯৯৯ সালে সাফগেমসে বাংলাদেশ প্রথম সোনার পদক জয় করে। ১০ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ার এই ক্রীড়া উৎসবে ফুটবলে দ্বিতীয়বার সোনা জিতেছিলেন আমিনুলরা। ২০০৩ সালে সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হলেও দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত এই টুর্নামেন্টে আর সাফল্য নেই। অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ফুটবলে একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যুবারা।

এ তো গেল পুরুষ ফুটবলের কথা। মেয়েরা কিন্তু টানা দুবার এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল আসরে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। এখন অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে রেকর্ডের হাতছানি মারিয়াদের। গত বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত আসরে বাংলাদেশের কিশোরীরা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবার ভুটানে ট্রফি জিতলে সাফ ইতিহাসে বাংলাদেশ নতুন রেকর্ড গড়বে।

ঢাকা ছাড়ার আগে গোলাম রব্বানী ছোটন ও অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা দৃঢ়কণ্ঠে বলে যান, লক্ষ্য আমাদের একটাই শিরোপা ধরে রাখা। বাংলাদেশের সে সামর্থ্য যে আছে তার প্রমাণ মিলেছে গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচে। পাকিস্তান ১৪-০ গোলে হারিয়ে শামসুন্নাহাররা বুঝিয়ে দিয়েছেন ভুটান জয় করতেই বাংলাদেশ উড়ে এসেছে। পরের ম্যাচে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

পুরুষরা লড়াইয়ে মুখোমুখি হলে জয়তো দূরের ড্ররও নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। হার ছাড়া কোনো কিছুই চিন্তা করা যায় না। মঙ্গলবার জাকার্তা এশিয়ান গেমসে ফুটবলে বাংলাদেশ জাতীয় দল লড়ে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে। জামাল ভুঞারা ম্যাচ যে হারবে সেই ধারণা সবারই ছিল।

শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। ৩-০ গোলে হেরে মিশন শুরু করেছে। কিন্তু কিশোরীরা খেললে প্রত্যাশাটা থাকে জয়ই। শিরোপা ধরে রাখার মিশনে বাংলাদেশকে আজ সেমিফাইনালের বাধা টপকাতে হবে। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভুটান। থিম্পুতে ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়।

প্রতিপক্ষ যখন ভুটান তখন মারিয়াদের ফেবারিট বলা যেতেই পারে। কিন্তু ফাইনালে উঠবে তা কি নিশ্চয়তা দেওয়া যায়? এক সময় ফুটবলে ভুটান মাঠে নামা মানেই গোলের বন্যায় ভেসে যাওয়া। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভুটান জয় পাবে কল্পনাই করা যেত না। এখন সেই অবস্থা নেই। পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বের হয়ে এসে তারা এখন আন্তর্জাতিক ফুটবলে জয় পাচ্ছে। ২০১৫ সালে থিম্পুতে প্রাক-এশিয়া বাছাই পর্বে ভুটান হারিয়েছে বাংলাদেশকে। কোনো টুর্নামেন্টে দেশটি সেমিফাইনালেই খেলবে তা ছিল স্বপ্ন।

সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে এবার অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। শ্রীলঙ্কাকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে সেমিতে খেলছে। ফুটবল উন্নয়নে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভুটান ফুটবল ফেডারেশন। একাডেমি গড়ে ৬১ জন নারী ফুটবলার বাছাই করে দক্ষিণ কোরিয়ার কোচের তত্ত্বাবধানে অনুশীলন করছে। পরিবর্তন আনতে উঠে পড়ে লেগেছেন কর্মকর্তারা।

আজকের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ ফেবারিট হলেও স্বাগতিক ভুটানের গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নামবে। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেছেন, ভুটান ফুটবলে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। এই অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে এক বছরের মধ্যে তাদের পারফরম্যান্স আকাশ-পাতালই বলা যায়। ভুটান মানেই গোলের বন্যায় ভেসে যাবে সেই চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে দলটা স্বাগতিক তারপর আবার শক্তিশালী। জিততে হলে সেরা খেলাটাই খেলতে হবে। অবশ্য আমি মেয়েদের নিয়ে আশাবাদী। ওরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করেই ফাইনালে যাবে।

অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা বলেন, সেমিফাইনাল এমনিতেই টেনশনের ম্যাচ। তারপর আবার শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। ফাইনালে উঠতে হলে মাঠে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে হবে। আগের দুই ম্যাচে সহজভাবে জিতেছি বলে কোনো রিলাক্স নেই। ভুটান ফুটবল ইতিহাসে কখনো ফাইনাল খেলতে পারেনি। সুযোগ যখন হাতের নাগালে তখন তারা মরণ কামড় দেবেই। তবে আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে ভয়ের কিছু দেখছি না। জিতেই মাঠ ছাড়ব আশা রাখি।

থিম্পু স্টেডিয়ামে বিকালে আজ ভারত-নেপাল প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে। এখানে ভারতই ফেবারিট। বড় কোনো অঘটন না ঘটলে টুর্নামেন্টে ফের বাংলাদেশ-ভারতের ফাইনালে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় কিশোরীদের সাফ ফুটবল ফাইনাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর