রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাফের আগে সাফ চ্যাম্পিয়ন!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাফের আগে সাফ চ্যাম্পিয়ন!

ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মান খুবই হতাশাজনক। ভারতের এশিয়া কাপ ও এশিয়ান গেমসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড থাকলেও তারাও বড্ড পিছিয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলের তাই বিশ্বকাপ খেলা স্বপ্নেও ভাবা যায় না। স্বপ্ন বলেই বিশ্বের অন্যতম দুর্বল টুর্নামেন্ট সাফ চ্যাম্পিয়ন্সশিপই দেশগুলোর কাছে বিশ্ব কাপে পরিণত হয়েছে। সেই আসরের পর্দা উঠবে আর কিছুদিন পরই। যোগ্যতা থাকার পরও সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের রেকর্ড গৌরবের নয়। ২০০৩ সালে একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। রানার্স আপেরও রেকর্ড রয়েছে কয়েকবার। সেই শিরোপাটাই এখন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে সাফে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অবস্থা খুবই নাজুক। শিরোপা তো দূরের কথা টানা তিন আসরে সেমিফাইনালই খেলতে পারেনি। গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়াটা যেন বাংলাদেশের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এবার তা হলে ঘরের মাঠে কী অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে? যদি বলি ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ মাঠে নামার আগেই বাংলাদেশ সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে তাহলে কেমন হয়? কথাটি শুনে ফুটবলপ্রেমীরা নিশ্চয় অবাক হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু জাকার্তা এশিয়ান গেমসে ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পারফরম্যান্স বিচার করলে তাই বলা যায়। কেননা বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যারা দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর মধ্যে নক আউট পর্ব বা শেষ ষোলতে খেলার জায়গা করে নিয়েছে। বাকিরা গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নিয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার কাছে হেরে জামাল ভুইয়ারা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে পারেনি। কিন্তু এই প্রাপ্তিবা কম কিসের। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে মারদেকা কাপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক ঘটেছে বাংলাদেশের। এশিয়ান গেমসে ফুটবলে যাত্রা ১৯৭৮ সালে। গেমস ইতিহাসে এই প্রথম বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ড খেলল। অবশ্য জাকার্তা এশিয়া গেমসে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্য বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপাল এই তিন দলই অংশ নিয়েছে। পাকিস্তান ‘ডি’ গ্রুপে নেপালকে ২-১ গোলে হারালেও পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারেনি। বাংলাদেশ সেখানে কি না সাবেক এশিয়ান গেমস চ্যাম্পিয়ন কাতারকে পেছনে ফেলে নক আউট পর্ব খেলে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

সাফ চ্যাম্পিয়ন ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা কিংবা ভুটান এশিয়ান গেমসে ফুটবলে অংশ নেয়নি। খেললেও ভারত যে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেত তা নিশ্চিত ছিল না। অংশ নেওয়া তিন দলের মধ্যে সবাইকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ এশিয়ান গেমসে সেরা ষোল দলে পরিণত হয়েছে। এতে করে দল ও বাফুফে প্রশংসা পেতেই পারে। কারণ ৪০ বছরে এই প্রথম বাংলাদেশ এশিয়ান গেমসে নক আউট পর্বে খেলল। পদক না হোক অন্তত এশিয়ান গেমসে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দলে পরিণত হলো। এটাই বা কম কিসের?

এমন সময় ফুটবলাররা বিরল সাফল্য পেল যখন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ দরজায় কড়া নাড়ছে। কোচ জেমি ডে বা অধিনায়ক জামাল ভুইয়া ঢাকা ছাড়ার আগে বলে যান শক্তির বিচারে আমরা পদক জয়ের আশা করি না। কিন্তু এমন কিছু করে দেখাতে চাই যা সাফ ফুটবল ঘরের মাঠে উজ্জীবিত করবে। যতটুকু আশা ততটুকুই বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছেন জামাল, সুফিলরা। সত্যি কথা বলতে কি অনেক দিন পর ফুটবলে লড়াকু পারফরম্যান্স দেখে মন ভরে গেছে। গ্রুপ পর্বে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছে কিন্তু সমান তালে লড়াই করেছে। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে এগিয়ে থেকেও শেষ ১০ মিনিটে গোল খেয়ে জেতা ম্যাচ ড্র করেছে। কাতারকে অল আউট ফুটবল খেলে হারিয়েছে। তিন ম্যাচেই দম ধরে রাখতে পেরেছিল ফুটবলাররা। যা সত্যিই প্রশংসনীয়।

আশি দশকে এশিয়ান ক্লাব কাপ ফুটবলে উত্তর কোরিয়া চ্যাম্পিয়ন এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ দলের বিপক্ষে ড্র করে মোহামেডান কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু সংগঠকদের ব্যর্থতার কারণে আশার আলো জাগিয়েও ফুটবল জ্বলে উঠতে পারেনি। তাই বর্তমান মানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ হারাবে উত্তর কোরিয়াকে সেই আশাও নিশ্চয় কেউ করেনি। ৩-১ গোলে হেরে জাকার্তা গেমস থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু পারফরম্যান্স কোনোভাবেই হতাশাজনক বলা যাবে না। যদি বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে গোল হজম না করতো ম্যাচটা আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হতো নিশ্চিত।

সব মিলিয়ে এশিয়ান গেমসের পারফরম্যান্স আশার আলো জ্বালিয়েছে। যে বাংলাদেশ দম ফেল করায় শেষের দিকে গোল খেয়ে কাঁদত। জাকার্তায় দেখা গেছে ভিন্ন রূপ। কাতার ও উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে শেষ মিনিটে হজম নয় গোল পেয়েছে ফুটবলাররা।

এমন চাঙ্গা মনোবল সাফ চ্যাম্পিয়নসশিপে অনুপ্রেরণা জোগাবে জামালদের। অতীতে যাই হোক না কেন এবার সাফ ঘিরে বাংলাদেশের প্রস্তুতিও অন্য রকম। দেশ ও বিদেশে কন্ডিশনিং ক্যাম্পের পাশাপাশি একাধিক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। ফুটবলারও বলতে বাধ্য হচ্ছেন এমন প্রস্তুতিতে ভালো কিছু করে দেখানো সম্ভব। এশিয়ান গেমসে অনূর্ধ্ব-২৩ দল নক আউট পর্ব খেলেছে। সাফ চ্যাম্পিয়ন্সশিপে জাতীয় দল ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারলে লাইনচ্যুত ফুটবল নতুন পথে হাঁটতে পারবে। সাফল্যের পাশাপাশি এশিয়ান গেমসে সতর্ক বার্তাও পেয়েছে বাংলাদেশ। সাফে গ্রুপ পর্বে লড়তে হবে নেপাল, পাকিস্তান ও ভুটানের বিপক্ষে। দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের বাইরে বলে পাকিস্তানকে কেউ হিসেবের মধ্যে আনছিল না। এশিয়ান গেমসে নেপালকে হারিয়ে পাকিস্তান প্রমাণ দিয়েছে সাফে তারা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে। পাকিস্তানের এই জয় মাঠে নামার আগে জামালদের সতর্ক করে দিল। এত আশার মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ কি করে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

সর্বশেষ খবর