রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

নতুন দল নতুন ভেন্যু বসুন্ধরা কিংসের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নতুন দল নতুন ভেন্যু বসুন্ধরা কিংসের

নীলফামারীতে পেশাদার লিগে নবাগত বসুন্ধরা কিংসের হোম ভেন্যু নিয়ে মতবিনিময় সভা

দেশের উত্তরাঞ্চলের ফুটবল ঝিমিয়ে পড়েছে। অথচ এক সময় এই অঞ্চলের রংপুর বা বিভিন্ন জেলা থেকে তারকা ফুটবলারের সন্ধান মিলেছিল। ফুটবলে জাদুকরখ্যাত সামাদের আবির্ভাব ঘটেছিল দিনাজপুর থেকে। তারই পথ অনুসরণ করে অসংখ্য ফুটবলার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের কিংবদন্তি ফুটবলার শহিদুর রহমান শান্টুর ক্যারিয়ার শুরু এই অঞ্চল থেকে। পরবর্তীতে তিনি ওয়ান্ডারার্স, মোহামেডান, আজাদ, ইষ্টএন্ড, ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলে দেশ সেরা ফুটবলারের খ্যাতি পেয়ে যান। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানের সাফল্যের পেছনে শান্টুর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। বাংলাদেশে কম তারকা গোলরক্ষক সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু শান্টুর মতো জাদুকরি নৈপুণ্য কেউ প্রদর্শন করতে পারেননি। গোল লাইনে তাকে চুম্বক বলা হতো। ফুটবলে সোনালি দিনে তিনি দীর্ঘ সময়ে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শান্টুর অধিনায়কত্বেই ১৯৭৮ সালে এশিয়ান গেমসে ফুটবল ইভেন্টে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো অংশ নেয়। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী জীবনযাপন করছেন। শান্টুর পর ঢাকার ফুটবলে মাঠ কাঁপান কাজী সাত্তার। ওয়ান্ডারার্সের হয়েই তিনি দীর্ঘদিন দাপটের সঙ্গে খেলেন। ১৯৭৯ সালে ওয়ান্ডারার্স ৩-১ গোলে তারকাভরা আবাহনীকে পরাজিত করে। সেই ম্যাচে কাজী সাত্তারের দর্শনীয় জোড়া গোল এখনো চোখে ভাসে। তার ছোট ভাই আনোয়ারও ছিলেন দেশের তারকা ফুটবলার। আবাহনী ও জাতীয় দলে তার চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স কখনো ভোলবার নয়। ১৯৮২ সালে আবাহনীকে নেতৃত্ব দেন। সেই বছরই সালাউদ্দিন, চুন্নু, হেলালের সঙ্গে আনোয়ারকে ষড়যন্ত্র করে জেলে পাঠানো হয়। উত্তরবঙ্গের আরেক সফল ফুটবলার মোসাব্বের। ১৯৭৭ সালে বাদল রায়ের সঙ্গে মোহামেডানে তার অভিষেক হয় আগাখান গোল্ড কাপে। সেই আসরে অল ইন্ডিয়া ফুটবল দলের বিপক্ষে তার দূরপাল্লা শটের গোলই তারকারখ্যাতি এনে দেয়। বেশিদিন অবশ্য খেলতে পারেননি। ১৯৮১ সালে ফেডারেশন কাপ ফুটবলে সেনাবাহিনীর বিপক্ষে খেলতে নেমে ইনজুরির শিকার হলে পরবর্তীতে মোসাব্বেরকে আর মাঠে দেখা যায়নি। লেফট আউট কোহিনুর ৭০ ও ৮০ দশকে মোহামেডান ও জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার। ১৯৮২ সালে মোহামেডানের সালাম, বাদল ও কোহিনুরকে বলা হতো ফুটবলের ত্রি-রত্ন। সালামের ইতিহাস গড়া ২৭ গোলের পেছনে কোহিনুরের অবদানও কম নয়। আরিফ হোসেন মুন ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে মাঠ কাঁপান। ১৯৯৩ সালে ঢাকায় সাফ গেমসে জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সাদা-কালোর জার্সি গায়ে মোহামেডানেও খেলেন মুন।

যে উত্তরাঞ্চলের এত তারকা ফুটবলারের আবির্ভাব ঘটেছিল। সেখানে কিনা মাঠ খাঁ খাঁ করছে। দীর্ঘ সময়ে ফুটবলে অচলাবস্থা নেমে আসায় সেমানের খেলোয়াড়েরও দেখা মিলছে না। তাই রংপুর বিভাগ যেন ফুটবলে অতীত স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাফুফে বা কোনো সংস্থা এই অঞ্চলের ফুটবলকে জাগানোর চিন্তা মাথায়ই আনেননি। এক্ষেত্রে বসুন্ধরা গ্রুপই এগিয়ে এসেছে। তাদেরই নিজস্ব ক্লাব বসুন্ধরা কিংস উত্তরাঞ্চলের ফুটবলকে জাগিয়ে তুলতে তৎপরতা শুরু করেছে।

বসুন্ধরা কিংস অবশ্য দেশের ফুটবলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চায়। সেক্ষেত্রে চোখ থাকবে দেশ জুড়েই। কিন্তু এক সঙ্গে তো আর সব জেলার কর্মকাণ্ড শুরু করা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে এগুতে চায়। রংপুর বিভাগে ফুটবল চাঙ্গা করতে এ বছরই রংপুরে আয়োজন করে সিনিয়র ও জুনিয়রদের টুর্নামেন্ট। বিভাগভিত্তিক এই টুর্নামেন্টে ব্যাপক সাড়া পড়ে। যে বিভাগ ফুটবল খেলতে ভুলেই গিয়েছিল সেখানে এই টুর্নামেন্ট ঘিরে নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। রংপুর বিভাগ থেকে শান্টু, কাজী সাত্তারদের মতো ফুটবলার বের হওয়ার লক্ষ্যে বসুন্ধরা কিংস আরও বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। আর কয়েক মাস পরই দেশসেরা ফুটবল আসর পেশাদার লিগের পর্দা উঠবে। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ক্লাবটি এই আসরে মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছে। শক্তিশালী দলও গড়ছে তারা। ঢাকার বাইরে দেশসেরা দলগুলো লিগ খেললে ফুটবলে প্রাণ ফিরে আসবে। ফুটবলের উন্নয়ন ও হারানো জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে বসুন্ধরা কিংস হোম ভেন্যু হিসেবে বেছে নিতে চাচ্ছে নীলফামারীকে। যদিও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তারপরও কিংসের তৎপরতা দেখে বাফুফে যে ইয়েস বলবে তা নিশ্চিতই বলা যায়। বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী বলেছেন, আমার বিশ্বাস বসুন্ধরা কিংস সেমানের ভেন্যু আমাদের উপহার দেবে। তাই বলা যেতেই পারে উত্তরাঞ্চলের দর্শকরা এবার গ্যালারিতে বসেই দেশসেরা আসর উপভোগ করতে পারবে। হোম ভেন্যুর স্বীকৃতি পেলে বসুন্ধরা কিংসই হবে প্রথম দল যারা উত্তরাঞ্চলে এত বড় ফুটবলের আয়োজন করতে যাচ্ছে। অসম্ভবকে সম্ভব করতে যাচ্ছে বসুন্ধরা কিংস। যে নীলফামারীকে কখনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সেখানে কিনা দেশসেরা ফুটবলের আয়োজন? যা স্বপ্নেও ভাবা যায়নি তা বসুন্ধরা কিংসের জন্যই সম্ভব হচ্ছে। নতুন দল নতুন ভেন্যু নীলফামারী। উত্তরাঞ্চলের ঘুমন্ত ফুটবল জেগে উঠবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

দলটা যখন বসুন্ধরা গ্রুপের তখন ভেন্যুর মানেরও নতুনত্ব আসবে এ কথা চোখ বন্ধ করে বলা যায়। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচে কমলাপুরের গ্যালারি ভরে গিয়েছিল। নীলফামারী শেখ কামাল স্টেডিয়ামেও কিংসের পতাকায় মুখরিত হয়ে উঠবে এই প্রত্যাশা ফুটবলপ্রেমীদের। উত্তরাঞ্চলের ফুটবলকে জাগিয়ে তুলতে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে রংপুর বিভাগের আট জেলার সংগঠকরা। গত ১৭ আগস্ট বসুন্ধরা কিংসের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম মিনহাজের সঙ্গে আট জেলার ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকরা মতবিনিময় করেন। বসুন্ধরা কিংস হোম ভেন্যু হিসেবে নীলফামারীকে বেছে নেওয়ায় এই অঞ্চলের ফুটবল উন্নয়নে আর কি করণীয় আছে সভায় তা নিয়েও আলোচনা হয়।

সর্বশেষ খবর