বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুশফিকের স্মরণীয় ৯৯

মুশফিকের স্মরণীয় ৯৯

অলিখিত সেমিফাইনালে সাকিব খেলবেন না, ম্যাচ শুরুর আগে ঘুণাক্ষরেও টের পাওয়া যায়নি। প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে সবাই যখন হালকা স্টেচিং করছিলেন, বিমান ধরতে পরিবারসহ সাকিব তখন দুবাই বিমানবন্দরে। ভাঙা আঙ্গুলে অস্ত্রোপচার করতে উড়ে যাচ্ছেন ঢাকা। এরপর ঠিকানা হবে হয় মেলবোর্ন, না হয় নিউইয়র্ক। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নেই। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং-তিন বিভাগেই অস্থিরতা। এমন কঠিন মুহূর্তে দলের পুরো দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মুশফিকুর রহিম। স্বপ্ন পূরণের ম্যাচে হিমালয়সম দৃঢ়তায় রূপকথাসম ব্যাটিং করে দলকে এনে দেন লড়াইয়ের ভিত। চ্যালেঞ্জ ছোড়ার ইনিংস গড়ে দিলেও দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয়েছিল দেশ সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের। সপ্তম সেঞ্চুরি উদযাপনের অপেক্ষায় যখন গোটা স্টেডিয়াম, তখনই শাহীন আফ্রিদির বল তার ব্যাটে হালকা চুমু খেয়ে তালুবন্দী হয় সরফরাজের গ্লাভস জোড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় অসাধারণ, দুর্দান্ত এবং প্রত্যয়ী এক ইনিংসের গল্প। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৯৯ রানের খড়গে পুড়ে ছারখার হয়ে সাজঘরে  ফেরেন সাবেক টাইগার অধিনায়ক। মুশফিক শুধু দেশের নন, এশিয়া কাপেরও প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে কাটা পড়েছেন ৯৯ রানে।

এশিয়া কাপের চলতি আসরকে যদি বলা হয় ভারতীয় ওপেনার শেখর ধাওয়ানের। যিনি সেঞ্চুরি করেছেন দুটি। তা হলে টুর্নামেন্টটিকে মুশফিকেরও বলা যায় অবলীলায়। আসরের প্রথম ম্যাচে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকানো মুশি (ভক্তদের আদরের নাম) গতকাল খেলেন ৯৯ রানের নান্দনিক এক ইনিংস। ক্যারিয়ারের ১৯২ নম্বর ম্যাচে তিনি যখন ব্যাট করতে নামেন, তখন স্কোর বোর্ডে লেখা ১২ রানে ২ উইকেট। উইকেটে থিতু হওয়ার আগে আরও এক উইকেটের পতনে তার সঙ্গী হন মো. মিঠুন। দুজনে জুটি বেঁধে উদ্ধার করেছিলেন শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও। ৪২ রানে ৩ উইকেট হারানোর ওই ম্যাচে দুজনে যোগ করেছিলেন ১৩১ রান। তামিম ইকবালের রূপকথার ম্যাচে ১৪৪ রান করেছিলেন মুশফিক। মিথুনের ব্যাট থেকে বেরিয়েছিল ৬৩ রান। গতকাল স্বপ্ন দেখানো ম্যাচে দুজনে চার নম্বর উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১৪৪ রান। দল যখন চরম বিপর্যয়ে, তখনই দুজনে চীনের প্রাচীরের দৃঢ়তায় সাবলীল ব্যাটিং করেন জুনায়েদ খান, শাহীন আফ্রিদি, হাসান আলি, শাদাব খানদের বিপক্ষে। দলীয় ১৫৬ রানের মাথায় হঠাৎ মনোযোগ হারিয়ে মিথুন সাজঘরে ফিরেন ব্যক্তিগত ৬০ রানে। ৯ নম্বর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটা তার দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি। মিথুনের বিদায়ের পর মুশি খুব বেশি সময়ের জন্য পাননি হঠাৎ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানে পরিণত ইমরুল কায়েশকে। ১৬৭ রানের পঞ্চম উইকেটের পতনের পর মুশফিক ও আফগানদের হারানোর নায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যোগ করেন ৩০ রান। ইনিংসের ৪১.২ ওভারে জুনায়েদকে কাট শটে বাউন্ডারি মেরে ৯৫ থেকে ৯৯ রানে পৌঁছান মুশফিক। আসরের দ্বিতীয় ও মুশফিকের সপ্তম সেঞ্চুরির উদযাপনের জন্য স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজার দশেক ক্রিকেটপ্রেমী যখন রংধনুর রঙে সাজার অপেক্ষায়, তখনই মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন মুশফিক। জুনায়েদের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলকে অহেতুক ড্রাইভ খেলে সাজঘরে হাঁটা দেন ব্যক্তিগত ৯৯ রানে। তার আউটে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে টাইগার শিবিরসহ ক্রিকেটপ্রেমীরা এবং টুর্নামেন্ট কাভার করতে আসা বাংলাদেশি সাংবাদিকরা। ৯ বাউন্ডারিতে সাজানো ১১৬ বলের ইনিংসটি মুশফিকের ১৯২ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩০ নম্বর হাফসেঞ্চুরি। মানসিক দৃঢ়তা ও টেকনিকের জন্য মুশফিককে অনেকেই বাংলাদেশের রাহুল দ্রাবিড় বলেন। অভিষেক টেস্ট থেকে দ্রাবিড় সব সময়ই ছায়ায় হেঁটেছেন শচিন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলির। অথচ একা লড়াই করে বহু ম্যাচ উপহার দিয়েছেন ভারতকে। মুশফিকও তেমনি এক ‘আনসাং’ হিরো। দলের চরম বিপর্যয়ে শক্ত হাতে হাল ধরে ম্যাচ বাঁচাতে সিদ্ধ মুশফিক জিতিয়েছেনও বহু ম্যাচ। গতকাল আবুধাবিতে তেমনি দলের ক্রান্তিকালে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছেন সঙ্গীদের নিয়ে।

দলে রয়েছে মাশরাফির মতো সেনাপতি, সাকিবের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, ‘রান মেশিন’ তামিম ইকবাল এবং ধ্রুপদী ব্যাটসমান মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু মানসিক দৃঢ়তায় মুশি এগিয়ে সবার চেয়ে। টেকনিক্যালি সাউন্ড ক্রিকেটার মুশফিক ব্যাট হাতে এক বীর যোদ্ধা। সব প্রতিকূলতায় যিনি বীরদর্পে এগিয়ে যান দলের কাণ্ডারি হয়ে। কাল যেমন ব্যাটিং কাণ্ডারি হয়েছিলেন দলে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর