বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

টপ অর্ডারের কাজটা কী!

মেজবাহ্-উল-হক

টপ অর্ডারের কাজটা কী!

প্রত্যেকটি দলে সাধারণত টপ অর্ডারে খেলেন দলের সেরা ব্যাটসম্যানরা। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় উইকেট জুটিই অধিকাংশ রান করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটছে ঠিক উল্টো ঘটনা। এশিয়া কাপে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা।

দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশ দলে এই সমস্যা ছিল। কিন্তু তামিম ইকবাল ওপেনিংয়ে নেমে একপ্রান্ত আগলে রেখে একের পর এক ম্যাচ রান করে ব্যর্থতাকে ঢেকে দিয়েছিলেন। কিন্তু এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ড্যাসিং ওপেনারের ইনজুরির টপ অর্ডারের জীর্ণদশা সামনে উঠে এসেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়া কাপে সেই প্রথম ম্যাচ থেকেই বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে আসছেন।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল বটে কিন্তু টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের পরিসংখ্যান দেখুন কতটা বাজে। ওই ম্যাচে প্রথম জুটিটি ছিল মাত্র ১ রানের। দ্বিতীয় জুটিতে কোনো রানই হয়নি। তৃতীয় উইকেট জুটিতে এসেছিল মাত্র ২ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একই অবস্থা। লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর ওপেনিং জুটিতে আসে ১৫ রান। দ্বিতীয় উইকেট জুটি ছিল ২ রানের। তৃতীয় উইকেট জুটিতে এসেছিল ২২ রান। অর্থাৎ দলীয় ৩৯ রানেই নেই প্রথম তিন উইকেট।

সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে আবারও ব্যাটিং ধস। ভারতীয় বোলারদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারেননি বাংলাদেশের টপ অর্ডার। এই ম্যাচে অবশ্য পুরো দলই বাজে ব্যাটিং করেছেন। বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গিয়েছিল মাত্র ১৭৩ রান। প্রথম উইকেট জুটিতে এসেছিল ১৫ রান। দ্বিতীয় উইকেট জুটি মাত্র ১। তৃতীয় উইকেট জুটিতে আসে মাত্র ২৬। ওই ম্যাচে ৪২ রানেই হারাতে হয়েছিল তিন উইকেট। সুপার ফোরের দ্বিতীয় আফগানদের বিরুদ্ধে ৩ রানের মহানাটকীয় এক জয় পায় টাইগাররা। সে ম্যাচেও ব্যর্থ ছিল টপ অর্ডার। উদ্বোধনী জুটিতে ১৬ রান। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মাত্র ২ রান। তবে আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথম দুই জুটি সুবিধা করতে না পারলেও ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামা লিটন দাস একপ্রান্ত আগলে রেখে দারুণ ব্যাটিং করেন। মোহাম্মদ মিথুনকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলীয় খাতায় ৬৩ রান যোগ করেন। তবে দারুণ শুরু করেও সে ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করতি পারেননি লিটন। আফগান রহস্যময়ী স্পিনার রশিদ খানকে আক্রমণ করতে গিয়ে ৪১ রানে আউট হয়ে যান।

গতকাল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘ভার্চুয়াল’ সেমিফাইনালেও টপ অর্ডার। মাত্র ৫ রান করতেই ভেঙে যায় উদ্বোধনী জুটি। তারপর দলীয় ১২ রানের মাথায় পর পর দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। চতুর্থ ওভারেই তিন উইকেটের পতন। ধারাবাহিকভাবে টপ অর্ডারের ব্যর্থতার কারণ কি? দলে আসলে টপ অর্ডারের কাজটা কি? উদ্বোধনী জুটিতে বার বার পরিবর্তন এনেও কোনো লাভ হয়নি। তামিমের ইনজুরির পর লিটনের সঙ্গে টানা তিন ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংস ওপেন করেছেন তরুণ ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু তিন ম্যাচেই ব্যর্থ তিনি। তিন ইনিংসে তার রানের যোগফল মাত্র ২০ (৭, ৭, ৬)।

সে কারণেই কিনা নাজমুলকে বসিয়ে রেখে কাল ওপেনিংয়ে নামানো হয়েছিল সৌম্য সরকারকে। কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই একই চিত্র। ‘মোড়ক পাল্টায় কিন্তু পণ্য একই’ —সৌম্য সরকার আউট হয়ে গেছেন ব্যক্তিগত খাতায় কোনো রান যোগ করার আগেই।

লিটন দাসও আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেননি। এশিয়া কাপের ৫ ইনিংসে তার রানের যোগফল মাত্র ৬০!

টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা প্রতিটি ম্যাচে অসহায় আত্মসমর্থন করার পর মিডল অর্ডারের দুর্দান্ত দাপটে বাংলাদেশ সম্মানজনক স্কোর করেছে। আলাদা করে বলতেই হবে মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মিথুন, ইমরুলের কথা।

প্রথম ম্যাচে খেলেছেন ১৪৪ রানের অসাধারণ ইনিংস। গতকালও দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। খেলেছেন ৯৯ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। প্রথম ম্যাচে মুশফিক-মিথুনের ১৩১ রানের জুটি বাংলাদেশকে বড় স্কোর এনে দিয়েছিল। গতকালই পথ দেখাল এই জুটি। ১৪৪ রান আসে তাদের পার্টনারশিপে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ২৩৯/১০ (৪৮.৫ ওভার) মুশফিক ৯৯, মিথুন ৬০ (অসমাপ্ত)

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর