‘আরও কয়েকটা গোল তো আমাদের পাওনা ছিল। সে গোলগুলো পেলে কিছুটা নিশ্চিন্ত তো থাকা যেতই।’ কোচ জেমি ডে এভাবেই আফসোস করছিলেন টিম হোটেলে। লাওসের বিপক্ষে সুফিল-রবিউলদের আক্রমণ প্রতিপক্ষের ডি বক্সে গিয়ে বার বারই পথ হারিয়েছে। নাহলে আরও কয়েকটা গোল বেশি পেতেই পারতো বাংলাদেশ। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গোল ব্যবধানের খড়গে দুই ম্যাচ জিতেও বিদায় নিয়েছিলেন জামাল ভূইয়ারা। এখনো সেই ক্ষত তাজা হয়ে আছে সবার মনে। এ কারণেই প্রথম ম্যাচ জিতেও দলটার মধ্যে কোন বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই। এক ম্যাচ জিতেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে, এমন আত্মপ্রসাদেও কেউ ভুগছে না। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে খেলার উচ্ছ্বাসের চেয়েও বেশি করে দলটার মধ্যে আছে বেশি গোল না পাওয়ার আফসোস। কোচ জেমি ডে এই নিয়ে বিশেষ ক্লাস নিবেন সুফিলদের।
তাই বলে জয় কী কোনো প্রভাবই ফেলেনি দলটার উপর! নেপালের কাছে ২-০ গোলে হেরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বিদায় নেওয়ার পর সমর্থকরা হতাশ হয়েছিলেন। দর্শকদের হতাশার সেই ছবিটা এখনো চোখে ভাসে সুফিল-জনিদের। সিলেটের দর্শকদেরও তেমন হতাশ নয়নে মাঠ ছাড়ার দৃশ্য তারা দেখতে চায়নি। লাওসের বিপক্ষে জয়টা তাই দর্শকদের উৎসাহ-উদ্দীপনার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য ছিল। জয় নিয়ে কারও মধ্যে আত্মতুষ্টি নেই। কিন্তু এই জয় বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য একটা বার্তা হয়ে থাকল। সুফিল, জীবন, জনি, বিপলুরা যেন বলে রাখল, আমরা দর্শকদের উৎসাহ-উদ্দীপনার কদর বুঝি। তাদের হতাশার কারণ হতে চাই না আমরা। বাংলাদেশের এমন বিশ্বাস দর্শকদের কতটা মাঠে টানবে বলা কঠিন। তবে সিলেটের দৃশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। অন্য ম্যাচগুলো নিয়ে আগ্রহ কিছুটা কম হলেও বাংলাদেশের ম্যাচ নিয়ে এখানে আগ্রহের কমতি নেই। গতকাল জেলা স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকে মাইকে বার বারই ঘোষণা করা হচ্ছিল, টিকিট শেষ হয়ে গেছে। ফুটবল নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ কতটা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দুই জয়ের পর ঢাকার মাঠেও বহুদিন পর দর্শকদের ঢল নেমেছিল। দর্শক মাঠে আসলে ফুটবলারদের উৎসাহ বেড়ে যায় অনেক। দুরন্ত সাহসে ভর করে প্রতিটা বাধা টপকে যেতে পারেন তারা। গতকাল টিম হোটেলে এমনটাই বলছিলেন সিলেটের ফুটবলার মাশুক মিয়া জনি। ‘আমাদের জয়টা খুব প্রয়োজন ছিল। দর্শকদের উপস্থিতি আমাদেরকে অনেকটা দায়বদ্ধ করে রেখেছিল। তবে এখানেই আমাদের পথচলা থেমে যেতে পারে না। অনেক দূর যেতে হবে। দর্শকদের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে হবে।’ সুফিল আর জীবনদের কণ্ঠেও আত্মতুষ্টি নেই। বরং আছে আত্মবিশ্বাস। যার উপর ভর করে কঠিন বাধাগুলো টপকে যাওয়া যায়। পাহাড়সম প্রতিপক্ষকে জয় করাটাও মনে হয় খুব সোজা।