শিরোনাম
বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ওপেনিং জুটি নিয়ে ভাবনা

মেজবাহ্-উল-হক

ওপেনিং জুটি নিয়ে ভাবনা

শেষ এক দশক ধরে বাংলাদেশ দলের ওপেনিংয়ে আস্থা জুগিয়ে আসছেন তামিম ইকবাল। ড্যাসিং ওপেনার একাই একশ! কিন্তু অপরপ্রান্তে দীর্ঘ মেয়াদে পাননি কোনো পার্টনার। কখনো ইমরুল কায়েস, কখনো এনামুল হক বিজয়, কখনো সৌম্য সরকার, লিটন দাস কিংবা অন্য কেউ তামিমকে সঙ্গ দিয়েছেন। একের পর এক তার সঙ্গীর পরিবর্তন হয়েছে। ওপেনিংয়ে তামিমের ‘পারফেক্ট’ সঙ্গী আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে হোম সিরিজে তো তামিমও নেই— তাহলে ইনিংস ওপেন করবেন কে? একপ্রান্ত আগলে রাখবেন নিশ্চয়ই লিটন দাস। এশিয়া কাপের ফাইনালে তার সে কী দুর্দান্ত সেঞ্চুরি! দিনাজপুরের এই ক্রিকেটারের ১২১ রানের ইনিংসটি এখনো যেন চোখের সামনে ভাসছে। কিন্তু লিটনের সঙ্গে জুটিতে অপরপ্রান্তে থাকবেন কেন?

এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে তামিম ইনজুরিতে পরার পর পুরো টুর্নামেন্টেই (ফাইনাল ছাড়া) ওপেনিং জুটি ছিল ম্লান। তরুণ ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত প্রথমবারের মতো দলে সুযোগ পেয়েও সুবিধা করতে পারেননি। তিন ম্যাচে ব্যর্থতার পর ফাইনালে তাকে বাদ দিয়ে লিটনের সঙ্গী হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজকে ওপেন করতে পাঠিয়ে দিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। আর এতেই বাজিমাত। ১২০ রানের ওপেনিং জুটি। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজেও কি লিটনের সঙ্গে মিরাজ ওপেন করতে নামবেন?

লিটন-মেহেদী ছাড়াও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজের জন্য ঘোষিত দলে রয়েছেন আরও দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও মোহাম্মদ মিথুন। এশিয়া কাপেই জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল শান্তর। কিন্তু তিন ম্যাচে একবারও নিজের স্কোরকে ডাবল ফিগারে নিয়ে যেতে পারেননি। তার ইনিংস তিনটি— ৭, ৭, ৬। তবে দেশে ফিরে জাতীয় লিগে দারুণ ব্যাটিং করেছেন শান্ত। রাজশাহী বিভাগের হয়ে দুই ম্যাচে ৪৬, ১৭৩ রানের আত্মবিশ্বাসী দুটি ইনিংস খেলেছেন। মিথুন এখন আর ওপেন করেন না। এশিয়া কাপে দুটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন, দুটিই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। দলের ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ের সময় তিনি বাইশগজে ছিলেন আশার বাতিঘর হিসেবে। দেশে ফিরে জাতীয় লিগে খুলনা বিভাগের প্রথম ম্যাচেই ৭২ রানের আরেকটি ইনিংস খেলেছেন তিনি। তবে ব্যাটিং করেছেন ৫ নম্বরে। তাই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজে লিটনের সঙ্গী হিসেবে তার ওপেন করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মিরাজ সাধারণত ব্যাটিং করেন লোয়ার অর্ডারে। এশিয়া কাপের ফাইনালে তাকে দিয়ে ওপেন করানোর পরিকল্পনাটা ছিল একটা ‘এক্সপেরিমেন্ট’ মাত্র। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেও কোচ স্টিভ রোডস কি এমন এক্সপেরিমেন্ট করবেন! ওপেনিং জুটি যেন রীতিমতো ভাবনার বিষয় হয়ে গেছে বাংলাদেশের জন্য। লিটন দাসের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে মাত্র ১৮ ওয়ানডে। তার সঙ্গী হিসেবে যে নাজমুল হোসেন শান্তর খেলার কথা তার অভিজ্ঞতায় মাত্র ৩ ম্যাচ! তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন লিটন। এশিয়া কাপ খেলে দেশে ফিরেই জাতীয় লিগের ম্যাচে বাইশগজে ঝড় তুলেছিলেন।

রাজশাহী বিভাগের বিরুদ্ধে শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড গড়েছেন। মাত্র ১৪০ বলে ৩২ বাউন্ডারি ও ৪টি বিশাল ছক্কায় দ্বি-শতক পূরণ করেন। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ নিয়েও দারুণ আত্মবিশ্বাসী লিটন।

তামিম না থাকায় ওপেনিং জুটিতে লিটনই এখন সিনিয়র। বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে তাকেই। তামিম যেভাবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করেছেন একই ভূমিকা পালন করতে হবে লিটনকে। সে বিষয়ে খুব ভালো করেই জানেন তিনি। তাই এশিয়া কাপের ফাইনালে দুরন্ত সেঞ্চুরি করার পরের ম্যাচেই জাতীয় লিগে ঝড়ো গতির ডাবল সেঞ্চুরি করেও বাড়তি আত্মবিশ্বাসে ভুগছেন না লিটন। বরং দায়িত্বশীল হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। লিটন বলেন, ‘আমি তো নতুন। আমার যে সঙ্গী হবে, সেও নতুন হবে। হ্যাঁ, আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে একটু ভালো জায়গায় আছি হয়তো। কিন্তু আমি আগেও বলেছি, প্রতিটা ম্যাচ নির্ভর করে সেই দিনের ওপরে। হতে পারে পরের ম্যাচে আমি শূন্যও করতে পারি। তাই আগের আকাশ ছোঁয়া আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোনো লাভ নেই।’

নাজমুল হোসেন ঘরোয়া লিগে নিয়মিত পারফর্মার। এশিয়া কাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে তীব্র গরমে সুবিধা করতে না পারলেও দেশের মাটিতে হয়তো আরেকবার সুযোগ পাচ্ছেন। তরুণ এই ওপেনার কি পারবেন নিজেকে মেলে ধরতে?

যদিও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজে ওপেনিং জুটিতে শান্তই যে লিটনের সঙ্গী হচ্ছেন, তা চূড়ান্ত নয়! তবে শান্ত কিংবা মেহেদী যেই লিটনের সঙ্গী হোক না কেন ওপেনিং জুটি নিয়ে ভাবনা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে!

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাজে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশের! তামিম না থাকায় জিম্বাবুয়ে সিরিজে তৈরি হয়েছে বিশাল শূন্যতা। লিটনরা কি পারবেন ওপেনিংয়ে ক্যারিশম্যাটিক কিছু করে দেখাতে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর