শিরোনাম
বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিরোপাহীন মোহামেডান আর কত দিন

আগে কি পেশাদার লিগের শুরুতে আমরা বিগ বাজেটে দল গড়িনি। অপরাজিত রানার্সআপ হয়েছি। অথচ চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

শিরোপাহীন মোহামেডান আর কত দিন

লোকমান হোসেন ভূঁইয়া

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান। যারা শিরোপা ছাড়া কিছুই বুঝতো না। তারা কি না এখন শিরোপার কথা মুখে আনতে ভয় পায়। ফুটবলে তাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বী দল বলা হতো ঢাকা আবাহনীকে। তারা কি না বিজয়ের পতাকা উড়িয়েই চলেছে। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ মাঠে গড়ানোর পর তারা ছয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেখানে কি না মোহামেডানের ঘর শূন্য। ২০০২ সালের পর লিগ শিরোপা তাদের স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ১৬ বছরে সাদাকালোরা লিগ জেতেনি তা কি ভাবা যায়! অবশ্য ট্রফি যে একেবারে ঘরে ওঠেনি তাও বলা যাবে না। দুবার ফেডারেশন কাপ, দুবার সুপার কাপ ও একবার স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৬ বছরে মোহামেডানের মতো দলের এই প্রাপ্তি কি যথেষ্ট। ফুটবলে লিগই তো সবচেয়ে মর্যাদাকর আসর। দেড় যুগ ছুঁই ছুঁই করার পরও যদি শিরোপার দেখা না মিলে তাহলে ঐতিহ্যবাহী দলের ঐতিহ্য কি থাকে? ঢাকা আবাহনী আরেকবার হ্যাটট্রিক শিরোপা জিততে দল গড়েছে। নতুন এসে বসুন্ধরা কিংস দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে শক্তিশালী দল গড়ে আলোড়ন তুলেছে। অভিষেক আসরেই তাদের লক্ষ্য সব আসরে ট্রফি জয়। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, শেখ জামাল ধানমন্ডি, সাইফ স্পোর্টিং নতুন মৌসুমে শক্তিশালী দল গড়েছে। টার্গেট তাদের একটাই শিরোপা।

মোহামেডানের নেই কোনো লক্ষ্য! দল বদলের শেষ দিনে ফুটবল ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু মিডিয়াকে জানিয়েছেন, লক্ষ্য সম্পর্কে এখনই কিছু বলতে চাই না। বললাম, শিরোপার কথা। অথচ তা আমরা পারলাম না। এতে সমর্থকরা মনঃক্ষুণ্ন হবে। শক্তিশালী দল গড়লে হয় না। শিরোপা জিততে ভাগ্যও লাগে। বাবুর মতো অভিজ্ঞ সংগঠক সত্যিটাই প্রকাশ করেছেন। তবে একটা ব্যাপার তিনি এড়িয়ে গেছেন। তা হলো দলের শক্তি। দেশের ফুটবলের মান নিচে নামলেও ঘরোয়া আসরে ফুটবলারদের পারিশ্রমিক আকাশ ছোঁয়া। সুতরাং মোহামেডান এবার যে মানেরই দল গড়ুক না কেন অর্থ একেবারে কম খরচ হয়নি।

মাঠের লড়াইয়ে কী হবে তা আগাম বলা মুশকিল। তবে এতটুকু বলা যায় ফুটবলে এবার মোহামেডান যে মানের দল গড়েছে তাতে এই শক্তি নিয়ে শিরোপার লড়াই করা সম্ভব নয়। শক্তির বিচারে এবার শিরোপা জেতার প্রধান দাবিদার নবাগত বসুন্ধরা কিংস। স্বাধীনতার পর ফুটবলে এতটা শক্তিশালী দল আর কেউ গড়েনি। ঢাকা আবাহনী, শেখ রাসেল, শেখ জামাল ও সাইফ স্পোর্টিং এই পাঁচ দলের মধ্যেই লিগ শিরোপার লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে।

কী করুণ অবস্থা ঐতিহ্যবাহী দল ঢাকা মোহামেডানের? শিরোপা লড়াই লিস্টে টপ ফাইভেও তাদের নাম রাখা যাচ্ছে না। যদি সাফল্য পেয়েও যায় তা হবে ঘরোয়া ফুটবল ইতিহাসে বড় অঘটন। ইতিহাসতো কম লেখেনি ক্লাবটি। পারবে কি এবার শিরোপা জিতে সবাইকে চমক দিতে। সত্যি বলতে খেলায় কি হয় আগাম বলা মুশকিল। তবে এতটুকু বলা যায় মোহামেডানের পক্ষে লিগ জেতা সম্ভব নয়। যদি চারেও থাকে তা হবে বড় প্রাপ্তি।

কথা হচ্ছে এভাবে লক্ষ্যহীন আর কত দিন? ক্লাবের ডারেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া এখন থাইল্যান্ডে। টেলিফোনে তার সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, ‘মোহামেডানের মতো জনপ্রিয় দল দীর্ঘসময়ে শিরোপার বাইরে বা শক্তিশালী দল গড়ছে না এনিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেন পারছি না। দেখেন ভালো মানের দল যে গড়বো সেই অর্থটা আমাদের কাছে নেই। বলতে পারেন মোহামেডান অর্থ সংকটে পড়বে কেন? রহস্য তো এখানেই। সোজা কথা আমরা বড় চক্রান্তের শিকার।’

আবাহনী যেখানে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে মোহামেডানের মতো জায়ান্ট দল ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়বে কেন? লোকমান বলেন, ‘এমন প্রশ্ন আসবেই। তবে অনেকে হয়তো জানেন না পর্দার আড়ালে কি হচ্ছে। মোহামেডানকে এক ঘরে করে রাখা হয়েছে। আগে কি পেশাদার লিগের শুরুতে আমরা বিগ বাজেটে দল গড়িনি। অপরাজিত রানার্সআপ হয়েছি। অথচ চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। মোহামেডানের সাফল্য ঠেকাতে সিন্ডিকেট গড়া হয়েছে আগেই। অর্থের কারণে আমরা হয়তো এখন ভালো মানের দল গড়তে পারছি না। গড়লেও শিরোপা জেতা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। তবু ফুটবলের এই দুর্দিনে যারা ঘরোয়া আসরে অর্থ খরচ করছে তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। কেননা ফুটবল এখনো বেঁচে আছে ক্লাবগুলোর মাধ্যমেই।’

তাই যদি হয় শুধু মোহামেডান চক্রান্তের শিকার হবে কেন? লোকমান বলেন, ‘দেখেন, মোহামেডানকে বলা হচ্ছে বিএনপির ক্লাব। জানি না মিথ্যা প্রসঙ্গ টেনে আমাদের দাবিয়ে রাখা হচ্ছে কেন? মোহামেডান সৃষ্টি কি বিএনপির মাধ্যমে হয়েছে? আওয়ামী লীগের অনেক বর্ষীয়ান নেতা এই ক্লাবের সঙ্গে বিএনপি প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই জড়িত ছিলেন। তাদের অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে। এখনো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত অনেকেই আছেন। তার পরও কেউ সহযোগিতা করতে এলে মোহামেডানকে বিএনপির দল বলে তাদের দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মতিঝিল ক্লাবে বহুতল ভবন নির্মাণের। এতে স্থায়ী ফান্ডের ব্যবস্থা হবে। অথচ এখানেও ষড়যন্ত্র! তাহলে ক্লাব চলবে কীভাবে বলেন। এমন ষড়যন্ত্র করে কেউ যদি মনে করেন মোহামেডানকে ধ্বংস করা যাবে, তাহলে ভুল করছেন।’

সর্বশেষ খবর