শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সেঞ্চুরির পরও আক্ষেপ মুমিনুলের

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

সেঞ্চুরির পরও আক্ষেপ মুমিনুলের

টেস্টে আরও একটি সেঞ্চুরি করলেন মুমিনুল। চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার ব্যাট জ্বলে উঠলেও শেষ বিকালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে ফিরে আসে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

টোপটা ভালো হলেই যে বড়শিতে ভালো মাছ গাঁথবে, তা কিন্তু নয়। অনেক সময় বাজে টোপেও ভালো মাছ গেঁথে যায়। ক্যারিবীয় বোলারদের টেকটিকস বুঝে খেলতে খেলতে নামের পাশে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার লিখেও মুমিনুল যেমন আউট হয়ে গেলেন খুব নিরসভাবে। গ্যাব্রিয়েলের খুব সহজ একটা বলে ক্যাচ তুলে দিলেন ডওরিচের হাতে। অথচ ১২০ রান করার আগে ক্যারিবীয় স্পিনারদের ঘূর্ণিঝড় আর পেসারদের তোপের মুখে বেশ ভালোভাবেই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তিনি। নিজের এই বাজে আউটের ঘটনাটা মুমিনুল ভুলতেই পারছেন না।

‘দেখুন, আজ (গতকাল) ব্যাটিংয়ে আমাদের যেটুকু বিপর্যয় ঘটেছে তা আমার কারণেই। ওরকম বাজে একটা বলে আউট না হলে দৃশ্য ভিন্ন হতে পারত। এমনকি আমরা ৪০০ রান করতে পারতাম।’ সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুলের আক্ষেপ আর শেষই হয়না। চলতি বছরে চারটা সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। টেস্টে ২০১৮ সালে তার সমান সেঞ্চুরি আছে কেবল বিরাট কোহলির। চারটা করে সেঞ্চুরি করতে মুমিনুল নিয়েছেন ১৩ ইনিংস আর কোহলি ১৮ ইনিংস। তাছাড়া চট্টগ্রামের মাটিতে ষষ্ঠ এবং সবমিলিয়ে অস্টম টেস্ট সেঞ্চুরি করে তিনি তামিমকেও স্পর্শ করেছেন। কিন্তু এসব তুলনায় খুব একটা সম্মতি নেই মুমিনুলের। ‘আমি তামিম ভাইয়ের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে রাজি নই। তিনি অনেক উঁচু মানের ক্রিকেটার। আর বিরাট কোহলির সঙ্গে তুলনার তো প্রশ্নই আসে না।’ তবে কী চলতি বছরে সেঞ্চুরির হিসাবটাকে অস্বীকার করতে চান মুমিনুল! তা নয়। তিনি বরং ঘোষণা করে দিলেন, ‘লড়াইটা কিন্তু এখনো শেষ হয়নি।’ ঠিকই বলেছেন মুমিনুল। কোহলির মতো তার হাতেও তো ম্যাচ বাকি। বছরটা শেষ না হলে ফলটা ঘোষণা করা বেমানান বৈকি! জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক মুহূর্তে মুমিনুল মিডিয়ার সামনে খুব সাহস করে একটা কথা বলেছিলেন। প্রশ্নটা ছিল, ক্রিকেটার হিসেবে আপনার সর্বোচ্চ লক্ষ্যটা কী! ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলতে নামার আগে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে মুমিনুলের চটপট জবাব ছিল, ‘লক্ষ্য তো অনেক বড়। তবে আমি কথায় না, কাজেই প্রমাণ দিতে চাই।’ ওইটুকুন ছেলের মুখে কত বড় কথা! অনেকেই তখন তার বক্তব্যকে আস্পর্ধা ভেবেছিল হয়ত। কিন্তু বছরের পর বছর ঘুরে কঠোর সংগ্রামের মধ্যদিয়ে মুমিনুল হক তার জাতটা ভালোভাবেই চিনিয়ে দিলেন। অবহেলার শিকার হয়েও হাল ছাড়েননি তিনি। বিক্ষুব্ধ সমুদ্র তরঙ্গে অবিচল নাবিকের মতোই টিকে ছিলেন। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। এর প্রমাণ, ৩২ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৮ম সেঞ্চুরি। এর আগে কেবল তামিম ইকবালই টেস্টে ৮টা সেঞ্চুরি করেছেন। ৬টি করে সেঞ্চুরি করে পরের স্থানেই আছেন মোহাম্মদ আশরাফুল এবং মুশফিকুর রহিম। টেস্টে মুমিনুল সেঞ্চুরির দিক দিয়ে তামিম ইকবালকে স্পর্শ করলেও ওয়ানডেতে তামিম এককভাবে শীর্ষে (১১টি সেঞ্চুরি)। কিন্তু এমন সেঞ্চুরি করেও মন ভরে না মুমিনুলের। চলতি বছরে চারটা সেঞ্চুরি করলেও আরও বড় ইনিংস না খেলার আক্ষেপটা রয়ে গেছে। ‘আমার রানের ক্ষুধা কখনোই মেটে না। শূন্য রানে আউট হলে যেমন খারাপ লাগে সেঞ্চুরি করে আউট হলেও খারাপ লাগে।’ আরও লম্বা ইনিংস খেলার দিকেই এবার মনোযোগী হতে চান সমুদ্রপাড়ের ছেলেটি। প্রথম দুই সেশনে বাংলাদেশের একাধিপত্য থাকলেও তৃতীয় সেশনটা নিজেদের করে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একটা ভারসাম্যাবস্থা চলছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে। মুমিনুল এগিয়ে রাখছেন ক্যারিবীয়দের। ৮৮ ওভারের খেলায় ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৫ রান করে টাইগাররা যেমন স্বস্তিতে নেই। তেমনি ৩০০ পেরিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ইনিংসের দিকে তাকিয়ে স্বস্তিতে নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজও।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ৩১৫/৮ (৮৮ ওভার) মুমিনুল ১২০, ইমরুল ৪৪, সাকিব ৩৪, তাইজুল ৩২*, গ্রাবিয়েল ৪/৬৯,

সর্বশেষ খবর