ইতিহাস গড়া জয়। রেকর্ড বইয়ের সোনালি পাতায় চিরস্থায়ী জায়গা নেওয়ার পরও ‘প্রতিশোধ’ শব্দটি বলতে রাজি হননি সাকিব আল হাসান। অথচ নিজেদের দেড় যুগের ১১২ টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে আলোকিত জয়। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ক্রিকেটাররা যেখানে ইনিংস হার দেখতে অভ্যস্ত, তখন প্রথম ইনিংস জয়ের সৌভাগ্যবান সেনানি হয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ারই কথা! হয়েছেনও সাকিব, মিরাজরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংস ও ১৮৪ রানের জয়টি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা। যার অপেক্ষায় থাকা যায় যুগ যুগ। ঘূর্ণির মায়াজালে ইনিংস জয় শুধু ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে প্রথম নয়, টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বিপক্ষেই প্রথম। অসাধারণ, রেকর্ডময় ও বর্ণিল জয়ে এখন অনন্য উচ্চতায় জায়গা নিয়েছে টাইগাররা। বিজয়ের মাসে ঐতিহাসিক জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে টাইগাররা এখন অপেক্ষায় ওয়ানডে সিরিজের। ৯ ডিসেম্বর শুরু ওয়ানডে সিরিজের নেতৃত্বে ফিরছেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল অধিনায়ক মাশরাফি। বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজ জিতেই নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পরবেন মাশরাফি। সাকিবের দেখানো পথে সাফল্যের পতাকা কি উড়াতে পারবেন মাশরাফি?
সাদা পোশাকে খেলা শুরুর পর ১১২ টেস্টে হেরেছে ৮৩টি। ৩৮টি আবার ইনিংস হার। তবে গত পাঁচ বছরে ইনিংস হার মাত্র ৫টি। শুরুর দশকে সংখ্যাটি ছিল ৩৩। ১৮ বছরের ইতিহাসে জয় সাকল্যে ১৩টি। ১০টিই গত ২০১৩ সালের পর। সিরিজ জিতেছে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। হারিয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো পরাশক্তিগুলোকেও। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়। প্রথম সিরিজও জিতেছিল সেবার। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় শ্রেণির বিপক্ষে সিরিজ জয়টিকে গোনায় ধরতে রাজি নন সমালোচকরা। তাই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজ জেতার আগ্রহটা রূপ নিয়েছিল কর্তব্যে। সেই কর্তব্য এবার সুচারুভাবে পালন করেছে স্পিন চতুষ্টয়ের ঘূর্ণির জাদুতে। সাকিব, তাইজুল, মিরাজ ও নাঈমের ঘূর্ণি জাদুতে চট্টগ্রামে ৬৪ রানের জয়ের পর মিরপুরে লিখেছে নতুন ইতিহাস। মেহেদী হাসান মিরাজের জাদুকরি স্পিনে পৌনে তিন দিনেই জিতে নেয় ইনিংস ও ১৮৪ রানে। এমন জয়ে মিডিয়ার মুখোমুখিতে বাধভাঙা উচ্ছ্বাসের কথা বলেন অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু প্রতিশোধ বলতে রাজি হননি, ‘আমরা একশ’র ওপরে টেস্ট খেলেছি। এই প্রথম ইনিংস জয় পেলাম। এমন জয় অবশ্যই স্পেশাল। এই সময়ে ছোট দলের বিপক্ষেও খেলেছি। তারপরও আমরা এমন কিছু করতে পারিনি। তাই আমি মনে করি এটা আমাদের অনেক বড় অ্যাচিভমেন্ট। তবে আমি এমন জয়কে প্রতিশোধ বলতে রাজি নই।’ সাকিব রাজি নন প্রতিশোধের কথা বলতে। কিন্তু অলক্ষ্যে প্রতিশোধ নেওয়াই হয়েছে টাইগারদের। জুলাইয়ে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জায় ডুবেছিলেন সাকিবরা। হেরেছিলেন ইনিংস ব্যবধানে। সেই দলের বিপক্ষে পাঁচ মাস পর এমন জয়কে প্রতিশোধ না বলে বরং মধুর প্রতিশোধ বলাই শ্রেয়!