আরাফাত সানি। জার্সি নম্বর ৫৩। রাজশাহী কিংসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। কাল যখন শিরোপা প্রত্যাশী ঢাকা ডায়নাইটসের বিপক্ষে বোলিং করছিলেন, তখন টিভি স্ক্রিণে তার নামের পেছনে লেখা ‘নারগিস’। বিষয়টি যারা জানেন না, তাদের খটকা লাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিপিএলের অল্প বিস্তর খোজ-খবর রাখেন যারা, তারা বিস্মিত না হয়ে বরং আপ্লুতই হয়েছেন। শুধু ক্রিকেট নয়, বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এই প্রথম মাকে সন্মান জানাতে জার্সির গায়ে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের লেখা হয়েছে মায়ের নাম। রাজশাহী কিংসের এই উদ্যেগটি নিঃসন্দেহে অভিনব। মাইল ফলকের এই দিনে মায়ের নামাঙ্কিত জার্সি পড়ে রাজশাহী জয়ানন্দে উড়তে থাকা ঢাকা ডায়নামাইটসকে টেনে মাটিতে নামিয়েছে। ‘নারগিস’ লেখা জার্সি গায়ে আরাফাত সানি দুর্দান্ত বোলিং করে সাকিব আল হাসানের ঢাকাকে বিপিএলের চলতি আসরে প্রথম হারের তিক্ত স্বাদ দিলেন। ২০ রানের অসাধারন জয় নিয়ে ‘মিনারা’ নামাঙ্কিত মেহেদি মিরাজ, ‘মাহমুদা’ লেখা মুস্তাফিজুর রহমান, ‘মিনারা’ লেখা জার্সির আরাফাত, ‘সামসাদ’ নামাঙ্কিত মার্শাল আইয়ুবের রাজশাহী শুধু জয় পায়নি। জমিয়ে তুলেছে বিপিএল। একই সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ঢাকার কাছে ৮৩ রানে হারের মধুর প্রতিশোধও নিয়েছে। দুর্দান্ত জয়টি রাজশাহীর ৫ ম্যাচে তৃতীয় এবং ঢাকার পঞ্চম ম্যাচে প্রথম হার। পূণ্যভুমি সিলেটে দুটি ম্যাচ খেলে আজ দুপুরে ঢাকা যাচ্ছে রাজশাহী কিংস।
চা বাগান আর পাহাড় ঘেরা সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। অপরূপ সৌন্দর্য্যরে স্টেডিয়ামটি এরমধ্যেই মন জয় করে নিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। মন জুড়ানো স্টেডিয়ামের উইকেট গত কয়েক বছর ধরে দু’হাত ভরে সহায়তা করে গেছে পেসারদের। এবার ভোল পাল্টে সহায়তা দিচ্ছে স্পিনারদের। হার্ড ও বাউন্সি উইকেটে বল ঘুরছে লাটিমের মতো! উইকেটের এমন আচরণকে কাজে লাগিয়ে দলগুলোর স্পিনাররা নাভিশ্বাস তুলছেন তারকা তারকা ব্যাটসম্যানদের। গতকাল ধীরগতির উইকেটে রাজশাহীর সংগ্রহ খুব বেশী ছিল না। সুনিল নারিন, সাকিব, আল ইসলামদের ঘূর্ণির বিপক্ষে মিরাজদের সংগ্রহ ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৩৬। ঢাকার বিপক্ষে জয় পেতে মড়িয়া রাজশাহী খেলতে নামে একাদশে দুই পরিবর্তণ নিয়ে। দুই তারকা ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক ও সৌম্য সরকারের জায়গায় একাদশে সুযোগ পান দুই সিনিয়র মার্শাল আইয়ুব ও শাহরিয়ার নাফিসকে। দুজনেই দারুন ব্যাটিং করেন দলের জয়ে অবদান রাখেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে ৮.৫ ওভারে যোগ করেন ৭৫ রান। মার্শাল ৪৫ রান করেন মাত্র ৩১ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায়। শাহরিয়ার ২৫ রান করেন ২৭ বলে। দুই অভিজ্ঞর ব্যাটিংয়ে ১৩৬ রানের লড়াকু স্কোর গড়ে দলটি। টার্গেট ১৩৭ রান। টানা চার জয় নিয়ে খেলতে নামা শক্তিশালী ঢাকার জন্য আকাশছোঁয়া টার্গেট ছিল না। কিন্তু ম্যাচ সেরা আরাফাত ও মিরাজের মায়াবী ঘূর্ণিতে নাকাল হয়ে ২০ ওভারে ১১৬ রানের বেশী তুলতে পারেনি ঢাকা। ম্যাচ সেরা আরাফাত নিঁখুত লাইনলেন্থে বোলিং করে ২৪ বলের স্পেলে ডট নেন ১৬টি। মাত্র ৮ রানের খরচে তুলে নেন আন্দ্রে রাসেল, সাকিব ও রনি তালুকদারের উইকেট। মিরাজও ২ উইকেট নেন। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় মামুলী টার্গেট টপকাতে না পেরে ২০ রানে হেরে যায় ঢাকা ডায়নামাইটস।
রাজশাহী কিংসের সিলেট পর্ব শেষ। ঢাকা ডায়নাইটসের সিলেট পর্ব শেষ হবে আগামীকাল স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্সের ম্যাচ দিয়ে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকতে আজ জেতার বিকল্প নেই দলটি।