বাংলাদেশে ফুটবলের ‘মরা গাঙে নতুন ঢেউ’ তুলেছে বসুন্ধরা কিংস। মৌসুম শুরুর আগেই দল গঠন করতে গিয়ে বেশ আলোচনায় ছিল দলটা। তারপর ফেডারেশন কাপ (রানার্সআপ) আর স্বাধীনতা কাপে (চ্যাম্পিয়ন) হয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দিয়েছে। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ জিতে প্রথমবারের মতো পেশাদার লিগ খেলার যোগ্যতা অর্জন করা দলটার সামনে এবার ইতিহাসের হাতছানি। প্রথম মৌসুমেই লিগ জিতে এক বিরল রেকর্ড গড়তে পারে তারা। বাংলাদেশের ফুটবলে আগে কখনোই কোনো দল অভিষেক মৌসুমে লিগ জিততে পারেনি।
দেশি-বিদেশি ফুটবলার নিয়ে দুর্দান্ত এক দল বসুন্ধরা কিংস। বিশ্বকাপ খেলা তারকা ফুটবলার কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেস এরই মধ্যে দর্শকদের মন জয় করেছেন। মারকোস ভিনিসাসও দারুণ খেলছেন। দেশি ফুটবলাররাও পিছিয়ে নেই। মতিন মিয়ারা প্রায়ই টক্কর দিচ্ছেন কলিনড্রেস-ভিনিসাসদের সঙ্গে। ক্লাবের ম্যানেজার সাবেক ফুটবলার বিএ জুবায়ের নিপু ব্যাখ্যাটা দিলেন এভাবে, ‘স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে মতিন মিয়া যে দারুণ গোলটা করল এমন গোল স্থানীয় ফুটবলারদের কাছ থেকে সাধারণত দেখা যায় না। বিদেশি ফুটবলারদের পাশাপাশি স্থানীয় ফুটবলাররাও খুবই ভালো করছে। এই প্রতিযোগিতাটাই আমরা সব সময় দেখতে চাই।’ দল গঠনের সময় অবশ্য দেশি-বিদেশি দেখা হয় না। তিনি জানান, অনুশীলনের পারফরম্যান্স আর প্রতিপক্ষের দুর্বলতা ও শক্তি বিচার করেই ৬/৭ জনের কোচিং স্টাফের পরামর্শে চূড়ান্ত দল গঠন করেন হেড কোচ অস্কার ব্রুজোন। এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের ভিডিও বিশ্লেষণ করা হয় সূক্ষèভাবে।
নতুন মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে। আগামীকাল প্রথম ম্যাচেই শক্তিশালী শেখ জামালের মুখোমুখি হবে বসুন্ধরা কিংস। পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ ঢাকা আবাহনী। প্রথম দুইটা ম্যাচ জিততে পারলে পরের পথটা সহজ হয়ে যাবে। ইব্রাহিম ও ফয়সাল ছাড়া দলের সবাই ফিট। দুয়েকদিনের মধ্যে এ দুজনও ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করছেন নিপু। তবে দলের ম্যানেজার জানান, ‘প্রথম ম্যাচে আমরা সবাইকে দলে পাচ্ছি না। দুজনের নিষেধাজ্ঞা আছে। তাছাড়া বিদেশিদের মধ্যে কিরগিজস্তানের বখতিয়ার ছুটিতে আছেন।’ দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে সবাইকে পাওয়া যাবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।তবে লিগটা মোটেও সহজ হবে না। বসুন্ধরা কিংস ম্যানেজার বলেন, ‘এবারের লিগে বেশ কয়েকটা দল খুবই ভালো। বসুন্ধরা কিংস ছাড়াও ঢাকা আবাহনী, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, চট্টগ্রাম আবাহনী খুবই ভালো দল। তবে আমি আরামবাগকেও ভালো দল বলব। তারা তরুণদের নিয়ে খুবই ভালো একটা দল গঠন করেছে। তাদের কোচ দেশের অন্যতম সেরা।’ তাছাড়া কেবল শক্তিশালী দলই তো নয়, এবার ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হতে হবে। নিপু বলেন, ‘ঢাকার বাইরে পাঁচটা ভেন্যুতে খেলতে হবে। এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ সিলেট ও নীলফামারী ছাড়া অন্য কোথাও প্লেনে যাওয়ার সুযোগ নেই। যেতে হবে বাসে। তাছাড়া সেখানে ভালো হোটেলও নেই যে আমরা থাকতে পারি। বাস জার্নিটা সুবিধার হবে না। তবে এটা সব দলের জন্যই সমান সমস্যার তৈরি করবে। তাছাড়া এর মধ্যে একটা অন্যরকম মজাও আছে। দর্শকরাও ফুটবলটা উপভোগ করতে পারবেন।’ এসবের পাশাপাশি নিজেদের ডিফেন্স নিয়েও কিছুটা দ্বিধায় আছে ফেবারিট এই ক্লাবটি। গত দুটি টুর্নামেন্টে ২১টি গোল করলেও বিপরীতে ১১টি গোল হজম করেছে তারা। নিপু বলেন, ‘ডিফেন্সে কিছুটা সমস্যা আছে। স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে আমরা এগিয়েও নিজেদের ভুলে গোল হজম করলাম। তবে হেড কোচের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা হয়েছে। সমস্যা নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি।’ প্রথমবার লিগ খেলতে এসেই চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা দারুণ এক ইতিহাস হবে। এই ইতিহাস গড়ার জন্য মুখিয়ে আছে বসুন্ধরা কিংস। নিপু বলেন, ‘ক্লাবের সভাপতি ইমরুল হাসান এবং বসুন্ধরা গ্রুপের সর্বাত্মক সহযোগিতায় আমরা দারুণ একটা দল গঠন করেছি। এবার ইতিহাস গড়ার পালা।’ তবে অন্য ফেবারিট দলগুলোকেও সম্মানের চোখে দেখেন তিনি।