শিরোনাম
শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

২০২১ সালে সেরা দল পাব

২০২১ সালে সেরা দল পাব

বাংলাদেশ দলের সাফল্য ব্যর্থতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেজবাহ্-উল-হক

প্রশ্ন : ২০১৫ সালে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ, ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছে। কতটা উপভোগ করেন?

নাজমুল হাসান পাপন : আগে আমাদের দলে অনেক সমস্যা ছিল। আমরা ঠিকমতো ম্যাচ জিততে পারতাম না। হংকংয়ের বিরুদ্ধেও হেরেছি। কিন্তু সেখান থেকে এখন আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ২০১৫ সালে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার পর। বিশ্বকাপে ভালো করার পর আমরা ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে হারিয়েছি। ভারতকে হারিয়েছি। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছি। ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে খেলাটা ছিল খুবই স্মরণীয় ঘটনা। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়টির কথা আলাদা করেই বলতে হবে। আগে আইসিসি আমাদের গুরুত্ব দিত না। সেভাবে পাত্তাই দিত না। কিন্তু এখন আলাদাভাবে দেখে। অনেক গুরুত্ব দেয়। সাফল্য পেয়েছি বলেই এখন গুরুত্ব দেয়।

প্রশ্ন : ক্রিকেট পরাশক্তি দলগুলো এখন বাংলাদেশকে কীভাবে দেখে?

নাজমুল হাসান : আগে তো তারা মনে করত আমরা খেলতেই পারি না। ইংল্যান্ডকে সিরিজ খেলার কথা বললে বলত আগে খেলা শিখে এসো। ভারতও সিরিজ খেলার বিষয়ে গুরুত্ব দিত না। বড় দলগুলো বলত, তোমরা তো আমাদের এখানে এসে খেলতেই পারবে না। তোমাদের সঙ্গে খেলে কী লাভ? খুব বেশি হলে আমাদের এখানে খেলতে চাইত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। উল্টো তারাই আমাদের খেলতে ডাকে। কারণ তারা জানে আমাদের এখানে এলে পারবে না। তাই এখন তাদের মাটিতে খেলার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী।

প্রশ্ন : আমরা কিছু দিন আগে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হেরেছি। এ হারকে কীভাবে দেখছেন?

নাজমুল হাসান : আসলে ওই ম্যাচে যে বাংলাদেশ খেলেছে সেটা ‘বাংলাদেশ’ নয়! ওই হারের কথা আমি কিছুতেই মানতে পারি না। ওই হারের জন্য এখনো কষ্ট পাই। সেটা ছিল আমাদের ভুল সিদ্ধান্তের ফসল। কেন আমরা স্পিন উইকেটে খেললাম! আমার কথা ছিল, যেহেতু আফগানিস্তান স্পিনে শক্তিশালী তাই আমরা স্পোর্টিং উইকেটে খেলব। দলে অন্তত দুজন পেসার থাকবে। কিন্তু হয়ে গেছে উল্টো। কোনো পেসার ছিল না। তা ছাড়া নতুন কোচও বুঝতে না পেরে বেশি এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। দলেরও আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ছিল। তা ছাড়া মুশফিক কেন ওপেন করবেন? ওই দুঃখজনক স্মৃতির ক্ষতটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না।

প্রশ্ন : পাইপলাইন তৈরির ব্যাপারে কতটা জোর দিচ্ছেন?

নাজমুল হাসান : এখন আমাদের বয়সভিত্তিক দলগুলো নিয়মিত বিদেশ ট্যুর করছে। তারা খেলার মধ্যেই আছে। সাফল্যও পাচ্ছে। কিছু দিন আগেই তো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৪-১ এ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে। আগে নিউজিল্যান্ডে ভালো খেলার কথা কল্পনাই করতে পারতাম না। এখন আমাদের ছেলেরা কত ভালো করছে! এখন একসঙ্গে বয়সভিত্তিক চারটি দল সফর করছে। তবে আমরা সেরা দল পাব ২০২১ সালে। এখন যারা বয়সভিত্তিক দলে ভালো খেলছেন। সাইফ হাসান সাম্প্রতিক ভালো খেলেছেন। কিন্তু ওকে কার জায়গায় নেব। ইমরুল ভালো করেছেন। ওকেও তো তামিমকে বাদ দিয়ে নিতে পারি না। তবে আমাদের দলটা খুবই শক্তিশালী হবে।

প্রশ্ন : আসন্ন ভারত সফরে সাফল্যের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?

নাজমুল হাসান : সত্যি কথা বললে, ভারতের তুলনায় আমাদের দলটা কিছুই না। মোটেও আহামরি কিছু না। আমাদের ক্রিকেটারদের ধারাবাহিকতার অভাব। আমাদের ক্রিকেটাররা এক ম্যাচে ভালো খেলে তো আরেক ম্যাচে পারে না। অথচ ওদের রোহিত শর্মা নিয়মিত পারফর্ম করে। কী দারুণ ধারাবাহিক! তবে আমাদের ক্রিকেটাররাও ট্যালেন্ট। কেবল ধারাবাহিকতা নেই।

প্রশ্ন : টি-২০তে আমরা ভালো করতে পারছি না কেন?

নাজমুল হাসান : খুব যে খারাপ করছি তাও না। আমাদের এখন আত্মবিশ্বাস এসেছে আমরা যে কোনো দলকে হারাতে পারি।

প্রশ্ন : ২০১৮ সালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এই সাফল্যকে কীভাবে দেখেন?

নাজমুল হাসান : এটা খুবই বড় সাফল্য। কল্পনাই করতে পারিনি ওরা এতটা ভালো করবে। ওরা কেবল মাত্র খেলা শুরু করল। ওদের ঠিকমতো সুবিধাই দিতে পারি না। তারপরও যেখানে ছেলেরা এশিয়া কাপ জিততে পারেনি সেখানে মেয়েরা সাফল্য এনেছে।

প্রশ্ন : তিন ফরম্যাটে সম্পূর্ণ আলাদা দল করার ইচ্ছা আছে কিনা?

নাজমুল হাসান : হ্যাঁ, তিন ফরম্যাটে আলাদা দল করব সামনে। ভিন্ন ফরম্যাটে ভিন্ন ভিন্ন ক্রিকেটার খেলবেন। এটা অনেক ভালো হবে। কারণ আমাদের ক্রিকেটাররা বুঝতেই পারেন না। অনেক সময় দেখা যায় তিন ফরম্যাটে একই রকম মেজাজে ব্যাটিং করে। যেখানে ধৈর্য ধারণ করার কথা সেখানে ধৈর্য ধরতে পারে না।

প্রশ্ন : ক্রিকেটে আপনার কষ্টের স্মৃতি কোনটি?

নাজমুল হাসান : ২০১৬ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচটি হারার পর খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে এর চেয়েও বড় কষ্ট পেয়েছি শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে হারার পর। মানতেই পারিনি আমরা এভাবে শেষ মুহূর্তে হেরে যাব। বার বার ভারতের বিরুদ্ধে আমরা কেন যেন এভাবে হেরে যাই।

প্রশ্ন : আর সুখের স্মৃতি?

নাজমুল হাসান : অবশ্যই, ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটি। রুবেলের দুর্দান্ত বোলিংয়ে আমরা দারুণভাবে ম্যাচটি জিতেছিলাম। আমার খুবই ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন : ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে কিনা?

নাজমুল হাসান : সৌরভের সঙ্গে তো বলতে গেলে প্রতিদিনই কথা হয়। কোনো দিন আমি ফোন দিই। আবার ও ফোন দেয়। সেদিন তো ফোনে আপাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ধরিয়ে দিয়েছিলাম। কলকাতা টেস্ট নিয়ে ও হুলস্থূল কা- ঘটাতে চায়। ওই টেস্টে ঘণ্টা বাজাবেন আপা। উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

প্রশ্ন : ক্রিকেটারদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত মিটমাট হয়ে গেছে। এটা কি ভারত সফরে প্রভাব পড়বে?

নাজমুল হাসান : না। কোনো প্রভাব পড়বে না। ক্রিকেটারদের বোকামির জন্য এমনটা হয়েছে। ওরা আমার কাছে এলে আমি আগেই মেনে নিতাম। কেন যে ওরা আমার কাছে আসেনি। কেন যে ওদের মনে হয়েছিল, আমি মেনে নেব না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর