শিরোনাম
শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুই চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে বসুন্ধরার জয়

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

দুই চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে বসুন্ধরার জয়

কিংসের পক্ষে জোড়া গোল করে ম্যাচসেরা পুরস্কার জেতেন মোহাম্মদ জালাল

দুই দেশের দুই চ্যাম্পিয়ন মুখোমুখি। একদিকে বাংলাদেশ পেশাদার লিগের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। অন্যদিকে আই লিগের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটি এফসি। ম্যাচটা জিতে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের সেমিফাইনালের পথ পরিষ্কার করার একটা তাড়না তো ছিলই, পাশাপাশি মর্যাদার বিষয়টাও ছিল। এই কারণে দুই দল শুরু থেকেই ছিল মরিয়া। বসুন্ধরা কিংস খেলছিল নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে। পাসিংয়ের মাধ্যমে বল নিয়ন্ত্রণে রেখে আক্রমণাত্মক ফুটবল। অন্যদিকে চেন্নাই সিটি এফসি খেলছিল যুদ্ধংদেহি মনোভাব নিয়ে। বসুন্ধরা কিংসের পরিকল্পনায় বাধা দেওয়াই যেন তাদের লক্ষ্য। এ কারণেই বার বার কিংসের বখতিয়ার, জালাল আর কলিনড্রেসদের পেছন থেকে ট্যাকল করছিল ওরা। ম্যাচটা নিয়ন্ত্রণ করতে লঙ্কান রেফারি লাকমাল বিরাক্কডিকে হিমশিম খেতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত। তবে চরম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরা কিংস জিতে নেয় ৩-২ ব্যবধানে। শ্বাসরুদ্ধকর এ জয়ে সেমিফাইনালের আশা বেঁচে রইল বসুন্ধরা কিংসের। অবশ্য শেষ ম্যাচে তেরেনগানুর বিপক্ষেও জয় প্রয়োজন পেশাদার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।

ম্যাচটা ভালোভাবেই শুরু হয়েছিল। দুই দলেরই লক্ষ্য ছিল, যেভাবেই হোক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে। শুরু থেকেই তাই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই এমএ আজিজ স্টেডিয়ামকে একটা কুরুক্ষেত্র বানিয়ে দেন চেন্নাই এফসির ফুটবলাররা। ম্যাচের ভয়াবহতার চিত্র পূর্ণরূপে বিকশিত হয় ২৩ মিনিটে। এক ফাউলকে কেন্দ্র করে রেফারির সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হন চেন্নাই সিটি এফসির জাপানি ফুটবলার কাতসুমি ইউসা। কিংস ফুটবলারকে হলুদ কার্ড দেওয়ার দাবি জানান তিনি। বিতর্কের এক পর্যায়ে কাতসুমি সাইডলাইনের দিকে এগিয়ে এসে বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজোনের সঙ্গেও তর্কে লিপ্ত হন। অফিশিয়ালরা দুজনকে দুদিকে নিতে গেলে কাতসুমি মাঠ ছেড়ে এসে চতুর্থ রেফারির টেবিলে লাথি মেরে তা মাটিতে ফেলে দেন। এরপর কী মনে করে দ্রুত গতিতে দৌড়ে মাঠে প্রবেশ করে লঙ্কান রেফারি লাকমলের দিকে ছুটে যান কাতসুমি। রেফারি দুজন ফুটবলারের আড়ালে লুকিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। পরে অন্যরা কাতসুমিকে দূরে সরিয়ে আনেন। কিংস অধিনায়ক কলিনড্রেস কাতসুমিকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও তিনি ব্যর্থ হন।

এমনকি ম্যাচ কমিশনার মাহেশ বিসতাও ঘটনাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ৩৩ মিনিটে কাতসুমিকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। এরও তিন মিনিট পর খেলা শুরু হয়। ১৬ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। এ কারণেই প্রথমার্ধ শেষ হয় ৫৮ মিনিট খেলা হওয়ার পর। মজার ব্যাপার হলো- দুই কোচও বিতর্কে জড়িয়ে লাল কার্ডের ইশারায় মাঠ ছাড়েন প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে। কাতসুমির লাল কার্ড নিয়ে অবশ্য বেশ অসন্তুষ্ট চেন্নাই সিটি এফসি। তাদের মতে, কাতসুমিকে চায়নাম্যান বলাতেই সে এতটা ক্ষেপে যায়। চেন্নাইয়ের রবার্তো সুয়ারেজও দুই হলুদ কার্ডের পর লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন (৬৮ মিনিটে)।

উত্তপ্ত এই ম্যাচে ৭ মিনিটেই এগিয়ে যায় কিংস। বখতিয়ারের হেডে বল ডান পায়ে রিসিভ করে বাম পায়ের ভলিতে সুন্দর গোল করেন লেবানিজ ফুটবলার মোহাম্মদ জালাল। তবে ৪৩ মিনিটে পেদ্রো মানজির গোলে সমতায় ফিরে চেন্নাই। অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধের ৫৯ মিনিটে হেডে গোল করে কিংসকে আবারও এগিয়ে দেন বখতিয়ার। এবারও সমতায় ফিরতে খুব বেশি সময় নেয়নি চেন্নাই। ৭১ মিনিটে গোল করেন মাসুরশেরিফথাঙ্গালা।

ম্যাচটা ড্রয়ের দিকেই যাচ্ছিল। তবে ৮৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া রবিউলের জোরালো শট চেন্নাইয়ের গোলরক্ষক ফিরিয়ে দিলে বল পেয়ে সহজেই গোল করেন জালাল। কিংসের জয় নিশ্চিত হয়। জয়ের ব্যবধানটা অবশ্য অনেক বড়ও হতে পারত। ইব্রাহিম, জালাল, কলিনড্রেসরা অনেক সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন ম্যাচে। এই ম্যাচে দুই দলের পক্ষ থেকেই অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ল ডিসিপ্লিন কমিটির বাক্সে। রেফারির দিকে অভিযোগের তীর ছুড়লেন দুই দলের সহকারী কোচ। মোট চারবার লাল কার্ড দেখাতে হয় তাকে। দুই কোচ ও দুই ফুটবলারকে। হলুদ কার্ড দেখান পাঁচবার। উত্তপ্ত এক ম্যাচই পরিচালনা করেছেন লাকমাল। আলোচনায় তো থাকবেনই!

সর্বশেষ খবর