বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফিরে দেখা ২০১৯ বাংলাদেশের ফুটবল

ফিরে দেখা ২০১৯ বাংলাদেশের ফুটবল

বড় চমক বসুন্ধরা কিংস

এক সময় বছর জুড়েই আলোচিত হতো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী-মোহামেডানের নাম। ফুটবলে যত সাফল্য ছিল তাদেরকে ঘিরেই। অবস্থার এখন পরিবর্তন এসেছে। ২০১৯ সালে সবাইকে পেছনে ফেলে বসুন্ধরা কিংসই সাফল্যের পতাকা উড়িয়েছে। নবাগত দল হিসেবে পেশাদার লিগে অভিষেক আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়েছে তারা। জিতে নিয়েছে স্বাধীনতা কাপও। ফেডারেশন কাপে হয়েছে রানার্সআপ। শুরুতেই কোনো দলই এমন আলোড়ন তুলতে পারেনি। রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেসও ছিলেন আলোচনায়। লিগের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন তিনি। নতুন মৌসুমেও শক্তিশালী দল গড়েছে বসুন্ধরা কিংস।

 

বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশ

ফুটবলে না ছিল মান, না জনপ্রিয়তা। দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল জনপ্রিয় এ খেলা থেকে। কিন্তু ইংলিশ কোচ জেমি ডের তত্ত্ব¡াবধানে ফুটবল যেন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। প্রীতিম্যাচে জয়, সে সঙ্গে প্রাক বাছাইপর্বে রবিওলের গোলে লাওসকে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জায়গা করে নেয়। বিশ্বকাপ চূড়ান্ত পর্বে খেলে ৩২টি দেশ। বাছাইপর্বে যারা খেলে তারাও বিশ্বকাপের অংশ। যদি বাছাইপর্বে জায়গা না হয় তাহলে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরে থাকতে হতো বাংলাদেশকে। বাছাইপর্বে এখনো কোনো ম্যাচে জেতা হয়নি। তবু প্রশংসিত হচ্ছেন জামালরা। কাতার ও ভারতের বিপক্ষে যে নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছে তা ফুটবলের সোনালি দিনকেও হার মানিয়েছিল। নতুন এক আশা জাগে ফুটবল ঘিরে। সামনে আবার বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ড।

পাঁচে তিন জামালরা

যে দল এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতারকে কাঁপিয়ে ছাড়ে। তারা এস এ গেমসে হারানো গৌরব উদ্ধার করবে এ প্রত্যাশা ছিল ফুটবলপ্রেমীরা। আসরে ফেবারিট ভারতও ছিল না। সেখানে কি না জাতীয় দল নিয়েই ভরাডুবি। সোনার বদলে পাঁচ দলের ইভেন্টে মিলল কি-না তামা। এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কি হতে পারে। ভুটানের মতো দল ফাইনাল খেলেছে। বাংলাদেশ কি-না কোনোমতে এক ম্যাচ জিতেছে। বাছাইপর্বে পারফরম্যান্সে যতটুকু আলো জ্বলেছিল তা নিভে গেছে এস এ গেমসে হতাশায়। জেমি ডে নিজেও হতাশ। তবে সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। সাফ জিতলে জামাল ভূঁইয়া হিরো হয়ে থাকতেন। সেখানে কি-না শেষ ম্যাচে লাল কার্ড পেয়ে ভিলেন হয়ে দেশে ফিরলেন। এস এ গেমসে নেপাল সর্বোচ্চ ৪ বার সোনা জিতেছে। বাংলাদেশ কি না মাত্র দুবার। এবারের ব্যর্থতা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।

 

তহুরা ম্যাজিক

২০১৯ সালে বাংলাদেশের নারী ফুটবলে তেমন সাফল্য নেই। তবে চমক আছে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে চূড়ান্তপর্বে টানা দ্বিতীয়বার বাংলাদেশ অংশ নেয়। গ্রুপে ছিল শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। সত্যি বলতে কি মারিয়ারা কোনো ম্যাচ জিতবে এ আশা কেউ করেননি। জিতেওনি, কিন্তু মহিলা বিশ্বকাপে অন্যতম শক্তিশালী দল অস্ট্রেলিয়াকে ২-২ গোলে ড্র করে রুখে দেয়। তহুরা খাতুন ম্যাচে রীতিমতো ম্যাজিক প্রদর্শন করেন। দলের পক্ষে জোড়া গোলও করেন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নারী সিনিয়র দল হতাশার পরিচয় দেয়। সেমিতে হেরে যায় ভারতের কাছে। মহিলা ফুটবলদের আক্ষেপ ছিল এস এ গেমসে তাদের না পাঠানো। অনেকেই মনে করেন পুরুষ দল ব্যর্থ হলেও মেয়েরা ঠিকই  সোনা জিততো।

 

ঢাকায় ইনফ্যান্টিনো

২০১৯ সালে বাংলাদেশের ফুটবলে আরেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইন ফ্যান্টিনোর ঢাকা সফর। এর আগেও ফিফা সভাপতিরা ঢাকা ঘুরে গেছেন। কিন্ত ইন ফ্যান্টিনোর আগমন ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ ছিল অন্য রকম। নাটকীয়ভাবে তিনি বিশ্ব ফুটবল সংস্থার অভিভাবক হন। ঢাকা এসে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন। ইন ফান্টিনো বলেন, বাংলাদেশের লোকরা ফুটবলকে ভালোবাসেন। বিশ্বকাপ এলে বিভিন্ন দেশের পতাকা ভরে যায়। এই দেশ অবশ্যই ফুটবলে এগিয়ে যাবে। ঢাকা সফরের সময় ফিফা সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে সবরকমের সহযোগিতা আশ্বাস দিয়ে যান। তবে কি ধরনের সহযোগিতা করবেন তা বলেননি। সময় পেলে আবারও ঢাকায় আসবে বলে জানিয়ে যান ইন ফ্যান্টিনো।

সর্বশেষ খবর