বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

এমন কীর্তি আর কারও নেই

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এমন কীর্তি আর কারও নেই

ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন কীর্তি আর কারোর নেই। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সপ্তম উইকেট জুটিতে আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ গড়েছেন অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রানের জুটি। এটি একটি বিশ্ব রেকর্ড।

যদিও সপ্তম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রান ১৭৭। ইংল্যান্ডের জস বাটলার এবং আদিল রশিদ মিলে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওই রেকর্ড গড়েছেন। কিন্তু সেটি ছিল প্রথম ইনিংসে। তবে বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। এর আগে সপ্তম উইকেটে সর্বোচ্চ ছিল ইমরুল কায়েস ও মেহেদী হাসান মিরাজের ১২৭ রান।

আফিফ হোসেন ১১৫ বলে খেলেছেন ৯৩ রানের ইনিংস। মাত্র ৭ রানের জন্য ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তার ইনিংসে ছিল ১১ বাউন্ডারির সঙ্গে ১টি বিশাল ছক্কা। সেঞ্চুরি না হলেও এটাই আফিফের ক্যারিয়ারে সেরা ইনিংস। কেন না এর আগে ৭ ম্যাচ খেলে কোনো হাফ সেঞ্চুরিও করতে পারেননি।

১২০ বলে ৮১ রানের ক্যারিশম্যাটিক ইনিংস খেলেছেন মিরাজ। দলের জয় নিশ্চিত করে অরাজিত থেকেই বাইশগজ ছেড়েছেন। তার ইনিংসে ছিল ৯টি দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি। গতকাল বোলিংয়েও দৃঢ়তা দেখিয়েছেন মিরাজ। কোনো উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়েছেন। বল হাতে কিপ্টেমি এবং ব্যাট হাতে ইতিহাস গড়া ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতলেন এই তরুণ তারকা। তবে ম্যাচ জয়ের আরেক নায়ক আফিফ হয়েছেন ‘মোস্ট ভেলুয়েবল প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’!

ম্যাচ শেষে মিরাজ বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে আমরা জিততে পারি। মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। এই বিশ্বাসটা থাকা খুব জরুরি।’

পরিস্থিতি বিবেচনায় হয়তো এটিই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা। কারণ ৪৫ রানে সেরা ছয় ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর স্বাগতিকদের হারটা যেন অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। ৫০ ওভারের ম্যাচে মাত্র ১১.২ ওভারে তামিম ইকবাল (৮), লিটন দাস (১), সাকিব আল হাসান (১০)  মুশফিকুর রহিম (৩), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৮) এবং অভিষিক্ত ইয়াসির আলী (০) সাজঘরে ফেরেন।

এরপর শুরু হয় আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের লড়াই। তারা একদিকে যেমন উইকেট আঁকড়ে পড়েছিলেন অন্যদিকে রানের গতিও ঠিক রেখেছিলেন।

অবশ্য গতকাল জয়ের রাস্তাটা তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলাররাই। তারা আফগানিস্তানকে মাত্র ২১৫ রানে আটকে দিয়েছেন। কিন্তু কে ভেবেছিল মাত্র ২১৬ রানের সহজ লক্ষ্যে পৌঁছাতে গিয়ে শুরুতেই হোঁচট খাবেন টাইগাররা?

দলীয় ১৩ রানে ওপেনার লিটন দাস আউট। আরেক ওপেনার অধিনায়ক তামিম ইকবালও বাইশগজে থিতু হতে পারলেন না। ১৪ রানের মাথায় তিনি ড্রেসিংরুমে ফিরলেন। এরপর দলীয় ১৮ রানে নির্ভরতার প্রতীক মুশফিকুর রহিম বিদায় নিলেন। দলীয় খাতায় কোনো রান যোগ হওয়ার আগে ফিরে গেলেন ইয়াসির আলীও। চট্টগ্রামের এই ব্যাটসম্যান ঘরের মাঠে অভিষেককে রাঙাতে ব্যর্থ হলেন। এরপর ২৮ রানে সাকিব আল হাসানও বিদায় নিলেন। ৪৫ রানের মাথায় মাহমুদুল্লাহর বিদায়ের পর যেন খাদে পড়ে যায় স্বাগতিকরা।

কিন্তু দলকে যেন খাদ থেকেই টেনে তুললেন আফিফ ও মিরাজ। তাদের অবিশ্বাস্য জুটিতে এলো অবিস্মরণীয় জয়। তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

ম্যাচ শেষে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এই ম্যাচে আমরা জিতেছি! ৪৫ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর কীভাবে সম্ভব! তবে এমন জয়ে সত্যিই আমি গর্বিত। মিরাজ ও আফিফের কী দুর্দান্ত দুটি ইনিংস। আমি বিশ্বাস করি, সামনেও তারা আরও দারুণ কিছু পারফরম্যান্স উপহার দেবেন।’

সিরিজে পিছিয়ে পড়লেও আশা ছাড়ছেন না আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শহীদি। গতকাল হারের পর তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না। তারা দুজন আমাদের কোনো সুযোগই দেননি। তবে এটা ঠিক যে, ব্যাটিংয়ে আমাদের অন্তত ৩০ রান কম হয়েছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর