দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। একটি নাম, একটি ইতিহাস। এমন এক ইতিহাস যাকে ঘিরে আবর্তিত হয় কোটি কোটি মানুষের জীবন। যার হাসিতে হাসত তারা। যার কান্নায় কাঁদত। তিনি এখন নেই। চলে গেছেন দুই বছর আগে (২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর)। তবে তার প্রতি ভালোবাসায় এখনো কোটি কোটি ভক্তের চোখ ফেটে অশ্রু ঝরে গভীর যন্ত্রণায়। দিবানিশি। কেবল আর্জেন্টাইনরা নয়, পুরো দুনিয়া যার জন্য কেঁদে চলেছে। এ যন্ত্রণার যেন শেষ নেই! সারা পৃথিবীতেই ম্যারাডোনার আছে কোটি কোটি ভক্ত। তবে একজন আর্জেন্টাইনই কেবল ম্যারাডোনাকে নিয়ে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারেন। উপযুক্ত শব্দে এবং সঠিক শরীরী ভাষায়। দোহার মুশেরিব মেট্রো স্টেশনে যেমনটা বললেন আর্জেন্টিনার রিকার্ডো। লুসাইল শহরের ট্রামে বসে যেমনটা বললেন ডলোরাস ও লওটারো।
বুয়েন্স আয়ার্স শহর থেকে এসেছেন রিকার্ডো। আর্জেন্টিনার খেলা দেখবেন। ট্রফি নিয়েই দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে। এমনকি প্রথম ম্যাচে হারের পরও আশা এতটুকু কমেনি। এই আর্জেন্টিনা কতদূর যাবে! অনেকদূর। যতদূর যাওয়া সম্ভব! ম্যারাডোনার কথা উঠতেই বদলে গেলেন রিকার্ডো। কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে গেল! চোখ ফেটে বেরিয়ে এলো অশ্রু। ‘তুমি আমাকে খুবই আবেগী করে দিয়েছ। ম্যারাডোনা..।’ এতটুকু বলেই থেমে গেলেন। কথা আটকে গেল তার। চোখের অশ্রু লুকাতে ঘুরে অন্যদিকে তাকালেন। একটু পর বললেন, ‘ম্যারাডোনা আমার হিরো। আমাদের হিরো। পুরো দেশ আজ শোকে মাতম করছে।’ ডলোরাসের সঙ্গী লওটারো। আজেন্টাইন মেয়ে ডলোরাস বললেন, ‘আমাদের হৃদয়ে আছেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। পুরো আর্জেন্টিনা আজ কাঁদছে।’ ম্যারাডোনার বিদায়ের এমন কষ্টকর দিনের কথা মনে রাখছেন লিওনেল মেসিরাও। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি এবং তারকা ফুটবলার লওটারো মার্টিনেজ। দুজনেই ম্যারাডোনার কথা স্মরণ করেছেন। শোকের কথা বলেছেন। তবে এই শোকই যেন তাদের মনে এনে দিয়েছে দারুণ এক অনুপ্রেরণা।
‘ম্যারাডোনা আমাদের মধ্যে নেই। এই দিনেই (২৫ নভেম্বর) তিনি চলে গেছেন। আমাদের দুঃখের দিন এটা। আশা করি কাল (আজ) আমাদের সুখের দিন হবে। আশা করি, ম্যারাডোনা আমাদের আকাশ থেকে খেলতে দেখবেন।’ এভাবেই বলছিলেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। কাতার বিশ্বকাপে সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার পরাজয় ছিল অবিশ্বাস্য। তবে সেই ম্যাচ নিয়ে আর ভাবছে না আলবেসিলেস্তরা। পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মন্ত্র জঁপছেন আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা। এখানে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। আগের ম্যাচের মতোই আজও আর্জেন্টাইনরা আসবে বুকে-পিঠে-অন্তরে দিয়েগো ম্যারাডোনাকে নিয়ে। ম্যারাডোনার স্মৃতি লিওনেল মেসিদের ভালো ফুটবল খেলতে অনুপ্রেরণা দেবে বলেও মনে করেন আর্জেন্টাইন সমর্থকরা।সৌদি আরবের কাছে পরাজয়ের ঘটনা আর্জেন্টিনার জন্য ভয়ংকর এক শোক ছিল। লিওনেল মেসিরা সেই রাতটায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারেননি। খেতে পারেননি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ম্যারাডোনার শোক। সবমিলিয়ে আজ দুঃখ ভোলার মিশনেই নামছেন মেসিরা। আর নামছেন, বিশ্বকাপ জয়ের আশায় নিজেদের টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে। প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পর নকআউট পর্ব খেলাই কঠিন হয়ে পড়েছে মেসিদের সামনে। সামনের দুই ম্যাচে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে হারানোর বিকল্প নেই এখন। আজ মেক্সিকোর মুখোমুখি হচ্ছেন মেসিরা। মেক্সিকো খুব সহজ প্রতিপক্ষ নয় আর্জেন্টিনার জন্য। এই দলের সঙ্গে ৩৫ বার খেলে ১৬ বার জিতলেও হেরেছে ৫ বার। দুই দলের লড়াই ড্র হয়েছে ১৪ বার। মোটেও সহজ নয় মেক্সিকোকে হারানো। তবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মেসিদের রোষানলে পুড়তে হতে পারে মেক্সিানদের!