রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রোমাঞ্চকর সেই চার ‘ইংলিশ’ জয়

মেজবাহ্-উল-হক

রোমাঞ্চকর সেই চার ‘ইংলিশ’ জয়

ক্রিকেট বিশ্বে ‘ভয়ংকর’ এক দলের নাম ইংল্যান্ড। ওয়ানডে ও টি-২০ দুই ফরম্যাটেই তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। একটা সময় ছিল যখন ক্রিকেটের জনক দেশটির কাছে শিরোপা ছিল দূরের বাতিঘর! কিন্তু ইংল্যান্ড ক্রিকেটের এক ‘সুপার পাওয়ার’।

ইংল্যান্ড দলে তিন ফরম্যাটেই তারকার ছড়াছড়ি। জস বাটলারের নেতৃত্বে ওয়ানডে ও টি-২০ দল এখন বাংলাদেশে। অন্যদিকে বেন স্টোকসের নেতৃত্বে টেস্ট দল নিউজিল্যান্ডে। একই সঙ্গে দুনিয়ার দুই প্রান্তে ইংল্যান্ডের দুই দল।

দলের প্রতিটি পজিশনে প্রত্যেক ক্রিকেটারই যেন মহাতারকা! তবে ইংল্যান্ড যতই ভয়ংকর হোক না কেন, এ সফরে ক্যাপ্টেন বাটলারের স্বস্তি পাওয়ার কথা নয়! কারণ, একে তো বাংলাদেশের ঘরের মাঠ, তার ওপর ফরম্যাটটি ওয়ানডে! ক্রিকেটের এই ৫০ ওভারের ফরম্যাটে হোমে টানা ৭টি সিরিজ জয়ের বিরল রেকর্ড আছে টাইগারদের। সবশেষ বাংলাদেশের শিকার প্রতিবেশী ভারত। যারা কি-না এখন আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর দল।

টাইগাররা ঘরের মাঠে সবশেষ ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল এই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে। সিরিজে ব্যবধান ছিল ২-১। এরপর গত সাত বছরে ৭ সিরিজে হোমে বাংলাদেশকে আর কোনো দল হারাতে পারেনি।

যদিও সব মিলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডে রেকর্ড খুব একটা সুখকর নয়। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুই দেশের ২১ বার দেখা হয় মাঠে। ১৭ বারই জিতেছে ইংল্যান্ড। তবে বাংলাদেশ যে ৪ ম্যাচে জিতেছে প্রতিটিই ছিল ইংলিশদের জন্য ‘মহাবিপর্যয়’! আর টাইগারদের জন্য যা বড় অনুপ্রেরণা।

সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ১৫ রানের সেই জয়টি। অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচের শেষ দিকে মনে হচ্ছিল জিতেই যাচ্ছে ইংল্যান্ড। কিন্তু পেসার রুবেল হোসেনের সেই মহাকাব্যিক শেষ স্পেল সব এলোমেলো করে দেয়। শেষ ১২ বলে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল মাত্র ১৫ রান। ৪৯ ওভারে বল করতে এসে তিন বলে দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যান স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসনকে আউট করে বাংলাদেশকে এনে দেন রোমাঞ্চকর এক জয়। টাইগারদের কাছে হেরে সেবার বিশ্বকাপ থেকেই বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল ইংলিশদের। এরপর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ম্যাচ হলেই সেই ঘটনাটি সামনে চলে আসত! ইংলিশ ক্রিকেটাররা এতটাই কষ্ট পেয়েছিলেন যে তারা বারবারই বলেছেন, ওই হারকে মানতে পারেন না!

২০১১ সালের বিশ্বকাপেও ইংলিশরা বাংলাদেশের কাছে ধরাশায়ী হয়। টাইগারদের নবম উইকেট জুটিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও শফিউল ইসলামের ৫৬ বলে হার না মানা ৫৮ রানের জুটি এনে দিয়েছিল অবিশ্বাস্য এক জয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে যেন সোনার হরফে লেখা রয়েছে সেই ম্যাচের কাহিনি। মাত্র ১৬৯ রানে টাইগারদের ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ইংলিশরা তো আগাম সেলিব্রেশনও করছিলেন। তারা শরীরীভাষায় বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন জয়টা সময়ের ব্যাপার। কিন্তু সেই ম্যাচেও বাজিমাত করেছিল বাংলাদেশ। মধুর এক জয়।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ইংলিশ-বধের সুযোগ পায় ২০১০ সালে। সেটাও কি-না ইংল্যান্ডের ঘরের মাঠে, ব্রিস্টলে। মাশরাফি বিন মর্তুজার ক্যাপ্টেন্স নকে বাজিমাত করে দিয়েছিল লাল-সবুজরা। ইংলিশদের বিরুদ্ধে প্রথম বিজয়ের ছবিটি এখনো ক্রিকেটারদের রোমাঞ্চিত করে।

ইংলিশদের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয় ২০১৬ সালে। সেটিই ছিল বাংলাদেশে ইংল্যান্ডের সবশেষ সফর। তিন ম্যাচের সিরিজে দুই ম্যাচে হারলেও লড়াই হয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি। সিরিজ হারলেও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাওয়া জয়টি এ দেশের ক্রিকেটের রেকর্ডবুকে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।

আগের চার জয়ের তিনটিতেই ক্যাপ্টেন মাশরাফি। একটিতে সাকিব আল হাসান। এবার সুযোগ এসেছে তামিম ইকবালের সামনে। ড্যাসিং ওপেনার কি পারবেন তার ক্যাপ্টেন্সির ক্যারিশমা দেখিয়ে দেশকে আবারও ‘ইংলিশ’ জয়ের আনন্দে মাতাতে!

সর্বশেষ খবর