মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

সবুজ উইকেটে পেস লড়াই

বাংলাদেশ আফগানিস্তান টেস্ট

মেজবাহ্-উল-হক

সবুজ উইকেটে পেস লড়াই

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের কিউরেটর গামিনি সিলভা উইকেট প্রস্তুত করার সময় নিশ্চয়ই চার বছর আগের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কথা বিবেচনায় রেখেছিলেন!

টেস্টে তখন নবীনতম দেশ আফগানিস্তান। ‘নবাগত’ দেশটির বিরুদ্ধে প্রথম। প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তার কথা যেন কেয়ারই করলেন না বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নিজেদের স্পিন-আক্রমণের কথা চিন্তা করে কিউরেটরকে অনুরোধ জানান ‘স্পিন উইকেট’ বানিয়ে দিতে।

ক্যাপ্টেনের কথামতো স্পিন-উইকেট বানানোও হলো। কিন্তু ফল কী হয়েছিল মনে আছে? ঘরের মাঠে চরম লজ্জা। নবাগত দলটির বিরুদ্ধে ২২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজয়। ওই এক হারে যেন টেস্টে টাইগারদের সামর্থ্য নিয়েই নতুন করে প্রশ্ন উঠেছিল। তার কয়েক বছর আগে ঘরের মাঠে লাল-সবুজরা যে ইংল্যান্ড (অক্টোবর, ২০১৬) ও অস্ট্রেলিয়ার (আগস্ট, ২০১৭) মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে নাস্তানাবুদ করে ছিল সে কথাও যেন চাপা পড়ে গিয়েছিল!

রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী ও জহির খান- তিন সুপার স্পিনার তখন আফগানিস্তান দলে। তাই টেস্টে আফগানরা নবীন হলেও তাদের স্পিন আক্রমণ ছিল বিশ্বসেরা। আর চট্টগ্রামে তৈরি করা হয়েছিল তাদের পছন্দের উইকেট। বাংলাদেশের সিদ্ধান্তটি ‘বুমেরাং’ হয়েছিল।

এবার নিশ্চয়ই অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। যদিও আফগান দলে সেই ভয়ংকর স্পিনাররা আর নেই। নবী টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন অনেক আগেই। আর রশিদ খান সুপার ফর্মে থাকলেও ইনজুরির কারণে এ টেস্টে খেলতে পারছেন না।

এদিকে বাংলাদেশ দলে দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম থাকলেও প্রধান ভরসা সাকিব আল হাসান নেই। তাই পেস আক্রমণ নিয়ে লড়াইয়ের চিন্তা করছে বাংলাদেশ। এটা দুই দলের জন্যই চ্যালেঞ্জিং।

বাংলাদেশের মাটিতে খেলা মানেই ‘ঘূর্ণি উইকেট’! স্পিনাররাই ম্যাচের নায়ক! হয়তো এবারই ব্যতিক্রম কিছু হতে চলেছে। তাই সবুজ উইকেট নিয়ে রোমাঞ্চিত অধিনায়ক লিটন দাস, ‘অনেক দিন ধরে মিরপুরে ঘূর্ণি উইকেটেই বেশির ভাগ খেলা হয়। তো আমাদের এখন চ্যালেঞ্জ এটাই- আমরা ঘাসের উইকেটে কীভাবে ভালো খেলি। উইকেটে কীভাবে টিকে থাকতে পারি, বড় ইনিংস খেলতে পারি।’

দুই দলের সেরা দুই তারকা (সাকিব ও রশিদ) নেই। তাই স্পিন নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের প্রত্যাশাও থাকার কথা নয়। দুই দলেরই আক্রমণের ছক- পেসকেন্দ্রিক।

রশিদ খান না থাকায় মিরপুরের সবুজ উইকেট দেখে হয়তো বেশিই খুশি হয়েছেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি। একাদশে বাড়তি পেসার রাখার পক্ষে তিনি। শহিদির ভাষ্য, ‘আপনি যখন ঘাসের উইকেটে খেলবেন দুইয়ের বেশি পেসার খেলানোর সম্ভাবনাই বেশি। যে উইকেটে দুই দলের জন্য সমান সম্ভাবনা এমন উইকেটে খেললে পাঁচটা বোলার লাগবেই।’

আফগান ক্যাপ্টেন বলেছেন, তাদের হাতে অনেক ভালো মানের পেসার আছে। দুইয়ের অধিক পেসার নিয়ে লড়াইয়ে নামার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

২০১৯ সালে রশিদ খান একাই টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপ তছনছ করে দিয়েছিলেন। তবে রশিদকে ছাড়াই তিনি তার পেস আক্রমণ নিয়ে বাংলাদেশ দলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। আর এ চ্যালেঞ্জটা যেন বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন ক্যাপ্টেন লিটন, ‘সেদিক থেকে বলব, আফগানিস্তানের অধিনায়ক যেটা বলেছে (ভালো পেসার থাকার কথা), আমাদের হাতেও খুব ভালো কোয়ালিটি পেস আক্রমণ আছে। দেখা যাক...!’

বাংলাদেশের স্কোয়াডে আছেন পাঁচ পেসার- তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ, মুশফিক হাসান।

তাসকিন ও ইবাদত একাদশের জন্য অটোচয়েজ। তিন পেসার খেলালে তৃতীয় পেসার হিসেবে শরিফুল কিংবা খালেদের মধ্যে একজন। আবার প্রতিপক্ষকে বোকা বানাতে চাইলে অভিষেক হয়ে যেতে পারে তরুণ পেসার মুশফিকের। পরিস্থিতি বুঝে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে টিম ম্যানেজমেন্ট!

স্পিননির্ভর আফগান দলেও এবার পেস-আধিক্য। এ ম্যাচ ঘিরে শহিদিরা তাদের পেসারদের নিয়ে রণকৌশল সাজাচ্ছেন। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্টে এবার সত্যিই ভিন্ন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। মিরপুরের চিরচেনা ঘূর্ণি উইকেটে এবার ‘সবুজ ঘাস’! আর সেখানে দেখা যাবে দুই স্পিননির্ভর দলের পেস লড়াই!

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর