সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
ঢাকায় বিশ্বখ্যাত ফুটবলাররা

জিদান মেসির পর মার্টিনেজ

মনোয়ার হক

জিদান মেসির পর মার্টিনেজ

বাংলাদেশ কখনো খেলেনি। খেলতে পারবে কি না তারও নিশ্চয়তা নেই। তারপরও বিশ্বকাপ ফুটবল এলে সারা দেশ উত্তেজনায় কাঁপে কেন? ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ম্যাচগুলো ঘিরে যে উন্মাদনা তৈরি হয় তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। কেন এ উন্মাদনা বা উত্তেজনা, এর পেছনে রহস্য কী? দুই কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে ও ম্যারাডোনার প্রতি ভালোবাসার কারণেই বিশ্বকাপ এলে বাংলাদেশ উৎসবে ভাসে। বিশ্বকাপে অনেক বিখ্যাত ফুটবলার খেলেছেন। দেশকে বিশ্বকাপও জিতিয়েছেন। তারপরও শুধু পেলে ও ম্যারাডোনা কেন? আসলে তাদের জাদুকরী নৈপুণ্য ফুটবল ভক্তদের হৃদয়ে এমনভাবে গেঁথে গেছে যে তা কখনো মুছবার নয়। ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নের পর শুধু পেলে আর পেলে। কালো মানিকের খ্যাতিও পেয়ে যান তিনি। ওই সময়ে এ দেশে কোনো আর্জেন্টিনার সমর্থকের চিহ্নই ছিল না। এমনকি ১৯৭৮ সালে চ্যাম্পিয়ন ও ১৯৮২ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনার অভিষেকের পরও না।

দৃশ্যপট পাল্টে যায় ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপের পর। সেবার আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দেন ম্যারাডোনা। তারই জাদুকরী নৈপুণ্যে বিশ্বকাপ জয় করে দেশটি। এরপর থেকেই বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখে ম্যারাডোনার নাম। সেই থেকে আর্জেন্টিনার নামটি হৃদয়ে গেঁথে যায়। পেলে আর ম্যারাডোনা ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার পরও এ দেশের মানুষ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ছাড়া কিছুই বোঝে না। এত ভালোবাসা, এত শ্রদ্ধা- তারপরও কিংবদন্তি দুই ফুটবলারকে কাছ থেকে দেখতে পারেননি ভক্তরা। তাদের বাংলাদেশে আনা সম্ভব হয়নি বা আনার চেষ্টাও করা হয়নি। পেলে ও ম্যারাডোনা কলকাতা ঘুরে গেছেন। অথচ এত কাছ থেকেও তাদের আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ম্যারাডোনা ও পেলে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ভক্তদের তাদের কাছ থেকে দেখার স্বপ্নটা অপূর্ণই থেকে গেল। যাক দুজনা না এলেও বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন বিশ্বকাপে নজরকাড়া ফুটবলার জিনেদিন জিদান, লিওনেল মেসি এবং জুলিও সিজার। আজ আসছেন আরেক আর্জেন্টাইন ফুটবলার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। তিনিই প্রথম ফুটবলার বর্তমান বিশ্বকাপ জয়ী দলের খেলোয়াড় ঢাকায় আসছেন। গত বছর কাতারে ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। এ শিরোপায় মেসির অবদান কখনো ভক্তরা ভুলতে পারবেন না। তবে গোলরক্ষক পজিশনে মার্টিনেজ ছিলেন দুরন্ত। বিশেষ করে ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দুটি শট রুখে দিয়ে নায়ক বনে যান। সেই থেকে মার্টিনেজের নাম ভক্তদের মুখে মুখে। কারেন্ট বিশ্বকাপ জেতা এত বড় তারকা আসছেন। আফসোস তার সফর এতই সংক্ষিপ্ত যে ভক্তরা তাকে কাছ থেকে দেখতে পারবেন না। জিদান আর মেসিকে কাছ থেকে দেখার অনেকেরই সৌভাগ্য হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলকে হারিয়ে ফ্রান্স প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই থেকে জিদানের জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

এমনকি ২০০২ সালে বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পরও তা অটুট থাকে। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপে জিদানের নেতৃত্বে ফ্রান্স রানার্সআপ হওয়ার পর সে বছরই বিশ্বখ্যাত এই ফুটবলার ঢাকায় আসেন। মোহামেডান ও আবাহনীর সৌভাগ্য বলতে হয়। জিদানের আগমনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দুই দলের সংক্ষিপ্ত প্রদর্শনী ম্যাচের আয়োজন করা হয়। সেই ম্যাচে জিদান প্রথমে মোহামেডান, পরে আবাহনীর হয়ে খেলেছিলেন।

বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলারকে দেখতে স্বাভাবিকভাবেই গ্যালারি উপচে পড়ে। মেসি ঢাকায় আসেন ২০১১ সালে। তিনি যখন আসেন তখন আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ফাইনালও খেলেনি। তারপরও তিনি ছিলেন বাংলাদেশের দর্শকদের নয়নের মণি। স্বচক্ষে মেসির জাদুকরী নৈপুণ্য উপভোগ করেন হাজার হাজার দর্শক।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচে মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা ৩-১ গোলে পরাজিত করে সুপার ঈগল খ্যাত আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়াকে। ২০২০ সালে ঢাকায় আসেন টানা তিন বিশ্বকাপ খেলা ব্রাজিলের গোলরক্ষক জুলিও সিজার। তিনি গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বে নজর কাড়তে সক্ষম হন। মার্টিনেজের মূলত ভারত সফর করার কথা ছিল। কিন্তু নিজেই বাংলাদেশে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এ জন্য ধন্যবাদ দিতে হয় ভারতের শতদ্রু দত্তকে। মূলত তারই উদ্যোগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এ গোলরক্ষক দক্ষিণ এশিয়া সফরে আসছেন। একজন ব্যক্তি যদি পারেন তাহলে বাফুফে পারবে না কেন? মেসিকে এনেই কি তাদের দায়িত্ব শেষ।

সর্বশেষ খবর