বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

‘উইকেট একটু ট্রিকি ছিল’

আসিফ ইকবাল

‘উইকেট একটু ট্রিকি ছিল’

ম্যাচ শেষে বিমর্ষ মনে হচ্ছিল টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবালকে। বারবার তিনি আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলেন। মাথা মুছছিলেন। টাইগার অধিনায়ক যখন ম্যাচে হারের ব্যাখ্যা দিতে মাইক্রোফোনের কাছে যাচ্ছিলেন, তখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল। এ বৃষ্টির কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশ। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তিন তিনবার বৃষ্টি বাধায় পড়া প্রথম ওয়ানডেটি আফগানিস্তান জিতেছে বৃষ্টি আইনে (ডিএলএস) ১৭ রানে। ম্যাচে হারের কারণ ব্যাখ্যায় সরাসরি কাউকে দোষারোপ করেননি টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। শুধু বলেছেন, ‘আমার মনে হয়েছে আবহাওয়া একটি বড় বাধা ছিল। আমাদের শুরুটা ভালো ছিল। এরপর পরপর দুটি উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ি। সেখান থেকে বেরোতে পারিনি। সত্যি বলতে বলগুলো কঠিন ছিল না খেলার জন্য। ১৬৯ রান, আহামরি কিছু নয়। উইকেট কিছুটা ট্রিকি ছিল। যদি ২৫০-২৬০ রান করতে পারতাম, তাহলে ভালো হতো।’ সিরিজে আরও দুই ম্যাচ বাকি। ৮ ও ১১ জুলাই ম্যাচ দুটি গড়াবে একই ভেন্যুতে। হারের ম্যাচে তামিম বাহিনীর বড় প্রাপ্তি ছিল তরুণ ক্রিকেটার তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং।           

হৃদয় ক্রিকেট খেলা শুরু করেন মাত্র ১০ বছর বয়সে। তখন থেকে তার আদর্শ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। দেশসেরা ক্রিকেটার মুশফিকের বাড়ি বগুড়া। সেই বগুড়ার ছেলে তৌহিদ। শুরু থেকে স্বপ্ন দেখতেন জাতীয় দলে খেলার। তারকা ক্রিকেটার মুশফিকের সঙ্গী হয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। কিন্তু স্বপ্নের বাস্তবায়ন যে অনেক কঠিন, জানতেন। কেননা তার পরিবার কখনোই চায়নি হৃদয় ক্রিকেট খেলুক। তারপরও তিনি ক্রিকেট খেলেছেন। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার। ছোটবেলার বড় তারকা মুশফিকের সঙ্গী হয়ে এখন দেশ-বিদেশে ক্রিকেট খেলছেন। শুধু খেলছেন বললে ভুল হবে, নিজেকে প্রমাণ করছেন প্রতিটি ম্যাচে। প্রতিটি ম্যাচে খেলছেন সময়োপযোগী ইনিংস। গতকাল স্রোতের বিপরীতে একাই লড়াই করেছেন। রশিদের দুর্বোধ্য লেগ স্পিন, মুজিব ও নবীর অফ স্পিন, ফারুকির সুইংয়ের বিপক্ষে পাহাড়সমান দৃঢ়তায় ৫১ রান করেছেন ৬৯ বলে ৩ চারে। অথচ ব্যর্থ হয়েছেন তামিম, লিটন, নাজমুল শান্ত, সাকিব, মুশফিকরা। হৃদয়ের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেছেন টাইগার অধিনায়ক, ‘দলের প্রয়োজনে ভালো ব্যাটিং করেছেন তৌহিদ হৃদয়। তার ব্যাটিং মন কেড়েছে সবার।’ ৭ ম্যাচে হৃদয়ের এটা তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি। গত মার্চে সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে খেলেন ৯২ রানের চোখধাঁধানো ইনিংস। ইংল্যান্ড সফরে চেমসফোর্ডে ফের আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছেন ৬৮ রানের আরও একটি নান্দনিক ইনিংস। সব মিলিয়ে ৬ ইনিংসে ৫০ গড়ে রান করেছেন ৩০০।       

টেস্ট খেলেননি তামিম ও সাকিব। দুজনেই খেলছেন ওয়ানডে। পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। শক্তিশালী দল নিয়ে খেলছে আফগানিস্তানও। আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি টস জিতে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান তামিম বাহিনীকে। টাইগার দুই ওপেনার তামিম ও লিটন ৬.৫ ওভারে ৩০ রানের ভিত দেন। ফজল ফারুকির অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলকে অহেতুক খেলতে গিয়ে আফগান উইকেটরক্ষক রহমানউল্লাহ গুরবাজের গ্লাভসবন্দি হন তামিম। এ নিয়ে টানা চার ম্যাচে ফারুকির বলে আউট হয়েছেন তামিম। ভালো শুরু করেও ৩৫ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৬ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন লিটন। তিনি। মিরপুর টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকানো নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন নবীকে সুইপ খেলতে গিয়ে। ৬ সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকা সাকিব ছন্দে ফিরতে কামারঝাইকে দারুণ এক কাভার ড্রাইভ খেলেন। কিন্তু কাভারে দাঁড়ানো নবী অসাধারণ রিফ্লেক্সে ঝাঁপিয়ে এক হাতে ক্যাচ নেন সাকিবের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ১৬৯/৯, ৪৩ ওভার ( তামিম ইকবাল ১৩, লিটন দাস ২৬, নাজমুল হোসেন শান্ত ১২, সাকিব আল হাসান ১৫, তৌহিদ হৃদয় ৫১, মুশফিকুর রহিম ১, আফিফ হোসেন ৪, মেহেদী হাসান মিরাজ ৪, তাসকিন আহমেদ ৭, হাসান মাহমুদ ৮*, মুস্তাফিজুর রহমান ৩*, অতিরিক্ত ২৪। ফজলহক ফারুকি ৮.৪-১-২৪-৩, মোহাম্মদ সালিম ৪.২-০-৩৬-০,  আজমতউল্লাহ কামারজাই ৬-০-৩৯-১, মুজিব উর রহমান ৯-১-২৩-২, মোহাম্মদ নবী ৬-০-২৫-১, রশীদ খান ৯-০-২১-২)

আফগানিস্তান : ৮৩/২, ২১.৪ ওভার (রহমানউল্লাহ গুরবাজ ২২, ইব্রাহিম জাদরান ৪১* রহমাত শাহ ৮, হাসমতউল্লাহ শহিদি ৯*, অতিরিক্ত ৩। হাসান মাহমুদ ৭-০-৩৬-০, মুস্তাফিজুর রহমান ৪-০-১০-০, তাসকিন আহমেদ ৫.৪-০-২৬-১, সাকিব আল হাসান ৫-১-৯-১)। বৃষ্টি আইনে আফগানিস্তান ১৭ রানে জয়ী।

সর্বশেষ খবর