বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

দক্ষিণ এশিয়ার সেরা জিকো

নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষিণ এশিয়ার সেরা জিকো

বেঙ্গালুরুতে বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দারুণ খেলেছে। এতে ফুটবল ঘিরে ক্রীড়াপ্রেমীদের নতুন আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু সেমিফাইনালে ভালো খেলেও কুয়েতের কাছে অতিরিক্ত সময়ে হারার পর বাংলাদেশে সাফের গুরুত্ব হারিয়ে যায়। ভারত আর কুয়েত ফাইনাল খেলবে তাতে বাংলাদেশের তো কিছু যায় আসে না। তার পরও ফুটবলপাগল দর্শক টিভিতে ঠিকই ম্যাচ উপভোগ করেছে। ফাইনাল ফাইনালের মতো হলেও বাংলাদেশে কোনো উত্তেজনা ছিল না। থাকার কথাও না। তবে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যে জিকো উপস্থিত ছিলেন না, তারই নাম ঘোষণা হওয়ায় তখন স্বাভাবিকভাবে নতুন প্রাণ যেন ফিরে পান ক্রীড়াপ্রেমীরা। মঞ্চে ব্যক্তিগত পুরস্কার নিতে খেলোয়াড়দের নাম ধরে ডাকা হয়। প্রথমেই ঘোষণা হলো বাংলাদেশের আনিসুর রহমান জিকোর নাম; যা শুনে বেঙ্গালুরুর গ্যালারি ভরা দর্শকও করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন। এ সময় সাফ সেক্রেটারি আনোয়ারুল হক হেলালকেও উচ্ছ্বসিত দেখাচ্ছিল। জিকো উপস্থিত না থাকায় আরেকজন তার পুরস্কার গ্রহণ করেন।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের আনিসুর রহমান জিকো। তিনি এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক। বাংলাদেশের ফুটবলাররা সেরার পুরস্কার পাবেন তা অনেকের কাছে স্বপ্ন ছিল। কারণ ফুটবলারদের তো মানই ছিল না। সাফে ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দি ছিল। তাই বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জিকোর এ পুরস্কারটা অবাক করার মতো। তবে জিকোই ছিলেন এ পুরস্কারের প্রধান দাবিদার। টুর্নামেন্টে প্রতিটি ম্যাচে তিনি অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন। বাংলাদেশ এর আগে সাফ বা বিভিন্ন টুর্নামেন্টে সুবিধা করতে না পারলেও গোলরক্ষক পজিশনে আস্থার পরিচয় দেন জিকো। এবার সাফে লাল-সবুজের দল সেমিফাইনাল খেলতে পারেনি। কিন্তু জিকো তার পজিশনে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। চার ম্যাচে ১৫টি সেভ করেছেন। বিশেষ করে কুয়েতের বিপক্ষে অন্তত পাঁচটি নিশ্চিত গোল রক্ষা করেছেন। ভারতীয় ভাষ্যকাররা ম্যাচটি দেখে এও বলেছেন, খেলা যেন জিকো বনাম কুয়েতের। ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সাধু সেমি ও ফাইনালে টাইব্রেকারে দৃঢ়তার পরিচয় দেন। কিন্তু জিকোর পারফরম্যান্স তুলনাহীন ছিল বলেই সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পান।

২০ বছর পরও সাফের শিরোপা অধরা থাকলেও জিকোই এনে দিয়েছেন সেরার এক পুরস্কার। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ শিরোপা জয়ের পাশাপাশি আমিনুল হক আসরে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পান। এ পুরস্কার জিকোকে মানায় বলেই নির্বাচকরা আর দ্বিতীয় চিন্তা করেননি। গোলরক্ষক আমিনুল বলেন, ‘এবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ অনেক ভালো খেলেছে। মোরসালিন, ফাহিম, রাকিব, তপুদের পারফরম্যান্স আমাকে মুগ্ধ করেছে। তবে জিকোকে আমি আলাদা জায়গায় রাখতে চাই। গোলকিপিং পজিশনে ও দীর্ঘদিন ধরে ভালো খেলছে। অনেক দিন পর বাংলাদেশ এমন গোলরক্ষক পেয়েছে যার ওপর আস্থা রাখা যায়। সাফসেরা গোলরক্ষক হওয়ায় জিকোকে আমি প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই। আমার বিশ্বাস, ফুটবলে বাংলাদেশ হারানো গৌরব ফিরে পাবেই।’

বসুন্ধরা কিংস আগামীকালই শেখ জামালের বিপক্ষে খেলবে। তাই জিকো অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন বলে খুব একটা কথা বলতে পারেননি। মোবাইলে বলেন, ‘সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পাওয়ায় আমি খুশি। তবে বাংলাদেশ ফাইনালে উঠলে আরও ভালো লাগত। এবার সবাই ভালো খেলেছে। আশা করি সামনে আরও ভালো করব।’

পেশাদার লিগে জিকোর শুরুটা হয় সাইফ স্পোর্টিং থেকে। বসুন্ধরা কিংস পেশাদার লিগে অভিষেকের পর থেকেই তিনি এ ক্লাবে যোগ দেন। এখানে খেলেই ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা। লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে জাতীয় দলে ডাক পান। এর পরের ঘটনাগুলো তো সবারই জানা। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ ফাইনালে উঠলে খুশি হতাম। দুর্ভাগ্যক্রমে তা পারেনি। তার পরও জিকোর পুরস্কারে আমি আনন্দিত। আমি মনে করি জিকোর এ পুরস্কার সামনে অন্য ফুটবলারদের আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।’

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর