রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সেই উনিশ এখন টগবগে বাইশ

মেজবাহ্-উল-হক

সেই উনিশ এখন টগবগে বাইশ

তিন বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের তিন সদস্য তৌহিদ হৃদয়, শামীম পাটোয়ারী এবং শরিফুল ইসলাম। আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর, শক্তিতে বলীয়ান, ‘তেজে ভরা মন’! ২০২০-এর সেই ‘উনিশ’ এখন টগবগে ‘বাইশ’। আরও পরিণত, বুদ্ধিদীপ্ত। আরও দুর্বার এবং ভয়ংকর!

বিশ্বজয়ী হৃদয়-শামীম-শরিফুলই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের নায়ক। দলের চরম বিপদের সময় হৃদয়-শামীমের ৭৩ রানের জুটি ছিল আলোকবর্তিকা। আর শেষ ওভারের নাটকে শরিফুলের মহাকাব্যিক সেই বাউন্ডারি কি ভুলতে পারবেন টাইগার সমর্থকরা?

শেষ ওভারে জমে উঠেছিল মহানাটক। এক প্রান্তে হৃদয় নির্বাক দাঁড়িয়ে, আরেক প্রান্তে টানা তিন বলে তিন উইকেট পড়ে যায়। ২ বলে ২ রানই যেন তখন অসম্ভব মনে হচ্ছিল! উঁকি দিচ্ছিল ২০১৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুর সেই দুঃস্বপ্নের ম্যাচটি! শেষ ৩ বলে ২ রান নিতে পারেননি মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ-শুভাগত হোম।

সেই ম্যাচে জয় নিশ্চিত জেনে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে খেলা শেষ করতে চেয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু ডিপ-মিডউইকেটে ক্যাচ হয়ে যান। তার পরের দুই বলে মাহমুদুল্লাহ ও শুভাগত আউট।

এই ম্যাচে মুশফিকের মতো একই ভুল করলেন মেহেদী মিরাজ। ৬ বলে ৬ রান দরকার। ওভারের প্রথম বলেই চার মেরে মিরাজ ম্যাচ হাতের মুঠোয় নিলেন। বাউন্ডারি দিয়ে রাজকীয়ভাবে ম্যাচ শেষ করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ। এরপর দুই বলে তাসকিন ও নাসুম আউট। তারপর বাজিমাত করে দিলেন শরিফুল।

যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের এই সদস্য দেখিয়ে দিলেন স্নায়ুর লড়াইয়ে তিনি কতটা পারদর্শী। বাইশ গজে গিয়ে প্রথম বলেই আফগান হ্যাটট্রিকম্যান করিম জানাতকে পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে উত্তেজনা থামিয়ে দেন।

তৌহিদ হৃদয় এবং শামীম যখন বাইশ গজে জুটি বাঁধেন তখন মহা-চাপে বাংলাদেশ। আস্কিং রানরেট ৯-এর ওপরে। দলের সেরা চার ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত এবং রনি তালুকদার সাজঘরে ফিরেছেন। জয়ের জন্য তখন দরকার ছিল ৫৯ বলে ৯১ রান।

বিশ্বকাপজয়ী দলের দুই তারকা ঠান্ডা মাথায় কঠিন পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনেন। জুটিতে ৪৩ বলে ৭৩ রান আসে। ম্যাচের ১৩তম ও ১৭তম ওভার দুটি বাংলাদেশকে খেলায় ফিরিয়েছে। হৃদয় ও শামীম টার্গেট করেছিলেন আফগানিস্তানের দুই সেরা পেসার ফজলহক ফারুকী ও আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে।

তবে ১৮তম ওভারে শামীম আউট হওয়ার পর হৃদয় চেষ্টা করেছেন স্ট্রাইক রোটেড করে খেলতে। তবে শেষ ওভারে যেন বেশ ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে নিরুপায় হয়ে দেখছেন অন্য প্রান্তে উইকেট পতনের করুণ দৃশ্য। শেষ ওভারের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘শেষ ওভারে আমি যখন স্ট্রাইক পাচ্ছিলাম না, তখন খুবই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত দলের জয় নিশ্চিত করেই যে ফিরতে পেরেছি, এটা ভাবতেই ভালো লাগছে। এমন জয় কনফিডেন্স বাড়িয়ে দেয়।’

তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশের এই টি-২০ দলটাই যেন একটা ‘বারুদ’! সামনে যেই আসছে তাকে পুড়ে ভস্ম করে দিচ্ছে। চলতি বছরে মোট সাতটি টি-২০ ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা। এর মধ্যে ছয়টিতেই জিতেছে। টি-২০ এর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকেও হোয়াইটওয়াশ করার রেকর্ড আছে এর মধ্যে। সাকিবের নেতৃত্বে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এই দলটি যেন দিন দিন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। এর নেপথ্যে বড় কারণ অবশ্যই যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের তিন তারকা হৃদয়-শামীম-শরিফুল!

আফগানদের বিরুদ্ধে স্নায়ুর লড়াইয়ে যে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, তিন তারকা এ দেশের ক্রিকেটামোদীদের হৃদয় নাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রশংসায় ভাসছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও হৃদয়-শামীম-শরিফুলকে নিয়ে চলছে মাতামাতি।

সুমন খান নামে এক তরুণ পেসার শামীম পাটোয়ারী, তৌহিদ হৃদয় ও শরিফুল ইসলামের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে ছবি দিয়ে স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘তারা জানে কীভাবে জিততে হয়? কারণ তারা চ্যাম্পিয়ন। ওয়েলডান চ্যাম্পিয়ন!’

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর