মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
সুপার ফোরে লড়াইয়ের প্রস্তুতি

পারফেক্ট ম্যাচে বাড়ল প্রত্যাশা

দৃষ্টি এখন শিরোপায়। সেজন্য পাড়ি দিতে হবে কঠিন পথ। অবশ্য এমন পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে এশিয়া কাপ শিরোপা জয়ের পথটা মোটেও ‘দুর্গমগিরি’ নয়!

মেজবাহ্-উল-হক

পারফেক্ট ম্যাচে বাড়ল প্রত্যাশা

যে কোনো ক্রীড়া ইভেন্টে প্রথম ম্যাচটি মহাগুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ম্যাচ জিতলে যেমন টুর্নামেন্টে ভালো করার জন্য একটা ‘মোমেন্টাম’ পান ক্রিকেটাররা, তেমনি হারলে উল্টো হতাশার সাগরে ডুবে যেতে পারে পুরো দল। তবে বড় দলগুলোর জন্য প্রথমে পরাজয় অনেক সময় বাড়তি জ্বালানি হিসেবে কাজ করতে পারে। নিখুঁত পারফরম্যান্স প্রদর্শনে উজ্জীবত। দলকে এমন সতর্কবার্তা দেয় যেন পরের ম্যাচগুলোয় আর কোনো ভুল না হয়।

সব শেষ ফুটবল বিশ্বকাপেই তো প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে হারার পর লিওনেল মেসিরা এত সতর্ক হয়ে যান এবং এতই চমৎকার ফুটবল উপহার দেন যে শেষ পর্যন্ত কিনা বিশ্বকাপই জিতে যায়। ক্রীড়া বিশ্বে এমন আরও অনেক ঘটনাই আছে, প্রথম ম্যাচে হারার পর আরও দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসা। 

এবার এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল কি সে পথেই হাঁটছে? তিন তিনবার এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শিরোপা এখনো অধরা। তবে এবার সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহের তত্ত্বাবধানে শক্তিশালী এক দল নিয়ে এশিয়া কাপ খেলতে গেছে বাংলাদেশ। যদিও দলের কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার চোটে খেলতে পারছেন না। তারপরও এ দল খুবই ভারসাম্যপূর্ণ।

কিন্তু এমন দল নিয়ে প্রথম ম্যাচেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাজেভাবে হেরে এতটাই পিছিয়ে পড়েছিল যে, সুপার ফোরে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানদের উড়িয়ে দিয়ে আসরে দুর্দান্তভাবে ফিরলেন টাইগাররা।

গ্রুপ-বি থেকে সবার আগে সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দল হিসেবে পরের রাউন্ডে যাওয়ার জন্য লড়াই করছে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। তাদের মধ্যে যে কোনো এক দল সুপার ফোরে যাওয়ার সুযোগ পাবে। যদিও শ্রীলঙ্কার জন্য কাজটি খুবই সহজ। আজকের ম্যাচে আফগানদের বিরুদ্ধে জিতলে তো কোনো কথাই নেই। হারলেও তাদের সেরা চারে যাওয়ার সম্ভাবনা ৮০ ভাগ। সুযোগ আছে আফগানদের জন্যও। আজকের ম্যাচে তাদের জয় তো পেতেই হবে, সেই সঙ্গে ম্যাচ থেকে নেট রানরেট প্রয়োজন কমপক্ষে ১.৩৭। কারণ, এখন আফগানদের রানরেট -১.৭৮। আর শ্রীলঙ্কার ০.৯৫১। জয়ের পাশাপাশি আফগানরা ১.৩৭ রানরেট পেলে যোগ-বিয়োগ করে তাদের রানরেট হবে -০.৪০০, আর শ্রীলঙ্কার রানরেট হবে -০.৪১৯। বিষয়টা এমন যে, শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাট করে যদি ৫০ ওভারে ৩০০ রান করে সেক্ষেত্রে আফগানদের জিততে হবে ৪১ ওভারের আগেই।

বাংলাদেশ এখন এসব হিসাব-নিকাশের অনেক ওপরে। নিশ্চিন্তে সুপার ফোরের পরিকল্পনা করে দিয়েছে। তবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের পারফরম্যান্স নিয়ে ক্রিকেটবিশ্বে চলছে আলোচনা।

পুরো ম্যাচেই সরব উপস্থিতি ছিল টাইগারদের। ব্যাটিং, বোলিং, ফিন্ডিং- তিন বিভাগেই দুর্দান্ত দাপট দেখিয়েছে। ক্রিকেটবিশ্বের আতঙ্ক আফগান ত্রয়ী- রশিদ খান, মুজিব-উর-রহমান ও মোহাম্মদ নবী এ ম্যাচে ছিলেন নিষ্প্রভ। বাংলাদেশের ব্যাটাররা এমনই ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিং করেছেন যে তিন স্পিনার মিলে মাত্র এক উইকেট নিতে পেরেছেন। আফগান স্পিনত্রয়ীর ৩০ ওভার থেকে বাংলাদেশ নিয়েছে ১৭৮ রান। এই স্পিনত্রয়ীর আবির্ভাবের পর থেকে এভাবে একসঙ্গে তিনজনের ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্যারিশম্যাটিক জয়ের পর জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইটে ম্যাচ নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ভারতের জাতীয় দলের সাবেক তারকা ওয়াসিম জাফর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এটি একটি পারফেক্ট ম্যাচ। মহাচাপের মুখে নেমে ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিং। দুর্দান্ত বোলিং। ফিল্ডিং তো অসাধারণ।’ প্রশংসিত হচ্ছে সাকিবের ক্যারিশম্যাটিক ক্যাপ্টেন্সিও। বিশেষ করে তার বোলার চেঞ্জিং ছিল দেখার মতো।

এ ম্যাচে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক ছিল টাইগারদের আগ্রাসী বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। এমন পারফেক্ট একটি ম্যাচ দেখার পর টাইগার-ভক্তরা মহাখুশি, যা স্যোশাল মিডিয়ার স্ট্যাটাস-কমেন্টে তারা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। রাতারাতি বেড়ে গেছে প্রত্যাশাও।

দৃষ্টি এখন শিরোপায়। সেজন্য পাড়ি দিতে হবে কঠিন পথ। অবশ্য এমন পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে এশিয়া কাপ শিরোপা জয়ের পথটা মোটেও ‘দুর্গমগিরি’ নয়!

 

 

সর্বশেষ খবর