শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ব্যাটিং বিশ্লেষণ

টপের লজ্জা লেজের লড়াই

টাইগারদের দুরন্ত জয়

মেজবাহ্-উল-হক

টপের লজ্জা লেজের লড়াই

৪৯তম ওভারে ২ উইকেট নিয়ে আস্থার প্রতিদান দেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। ম্যাচে ৩ উইকেট নেন তিনি

ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্কোর ২৬৬ রান। এমন একটা স্কোর করা সম্ভব হয়েছে লেজের ব্যাটারদের ক্যারিশমেটিক ব্যাটিংয়ের জন্য। টপ অর্ডাররা আবারও ব্যর্থ। রীতিমতো লজ্জাজনক তাদের পারফরম্যান্স। দলীয় ১৩ রানে প্রথম উইকেট, ১৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট এবং তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটে ২৮ রানে। চতুর্থ উইকেট নেই ৫৯ রানে। মাত্র ১৪ ওভারের মধ্যেই সেরা চার ব্যাটারকে হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ।

সাকিব আল হাসানের লড়াই ছিল দেখার মতো। তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে তিনি গড়েন ১০১ রানের জুটি। সাকিব আউট হয়েছেন ৮০ রানে এবং হৃদয় করেছেন ৫৪।

ব্যাটিংয়ে লোয়ার অর্ডারের লড়াই যেন এক রূপকথার গল্প। যেখানে প্রথম ১০ ওভারে সেরা ব্যাটাররা দলীয় খাতায় যোগ করেছেন মাত্র ৪৪ রান, সেখানে লেজের ব্যাটাররা করেছেন ৭৭। এখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাসুম আহমেদ। তার ৪৫ বলে ৪৪ রানের ইনিংসটি ছিল দেখার মতো।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রথম তিন ব্যাটারের (লিটন ০, তানজিদ ১৩, বিজয় ৪) রানের যোগফল যেখানে মাত্র ১৫, সেখানে শেষের তিন ব্যাটার (বোলিং যাদের কাজ) তারা দলীয় খাতায় যোগ করেছেন ৮৭ রান (নাসুম ৪৪, মেহেদি ২৯, তানজিম ১৪)। টপের লজ্জার দিনে লেজের লড়াইটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে!

বাংলাদেশ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন দাস, তানজিদ হাসান তামিম, তৌহিদ হৃদয়, এনামুল হক, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মেহেদি হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিব।

 

সাকিব আল হাসান ৮০ (৮৫)

বোল্ড শার্দুল ঠাকুর

ক্যাপ্টেন হিসেবে যেভাবে বিপদে আগলে রাখা দরকার বাইশগজে সে কাজটাই করছিলেন সাকিব। হৃদয়ের সঙ্গে তার ১০১ রানের জুটিটি ছিল খুবই চমৎকার। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই ব্যাটিং করছিলেন। এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। ৫৯ রানে দলীয় চতুর্থ উইকেট পতনের পর হৃদয়কে নিয়ে খুব ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছিলেন ভারতীয় বোলিং লাইনআপকে। কিন্তু দলীয় ১৬০ রানের মাথায় মনোসংযোগ হারিয়ে ফেলেন। প্লেড-অন হয়ে যান ঠাকুরের বলে। হতাশ হয়ে নুয়ে পড়েন সাকিব।

 

তৌহিদ হৃদয় ৫৪ (৮১)

কট তিলক ভার্মা, বোল্ড মোহাম্মদ শামি

হৃদয় যখন ব্যাট হাতে বাইশগজে নামেন তখন মহাবিপদে দল। ৫৯ রানেই টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটার ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছেন। আরেক প্রান্তে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছেন ক্যাপ্টেন সাকিব। অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে অধিনায়কের সঙ্গে ধীরে ধীরে বড় জুটি গড়ে তোলেন। খুব সতর্কভাবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যাট করতে থাকেন। সাকিব আউট হওয়ার পরও লোয়ার অর্ডার নিয়ে লড়াই করতে থাকেন। মাঝে মাঝে বড় শটও খেলছিলেন। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ হয়ে যান।

 

টপ তিন ব্যাটারের রানের যোগফল ১৫

লিটন কুমার দাস ০ (২)

বোল্ড মোহাম্মদ শামি

ওপেনারদের একটা বাড়তি দায়িত্ব থাকে। কিন্তু সে দায়িত্বের কথা কি ভুলে যাচ্ছেন লিটন দাস! গতকাল রানের খাতাই খুলতে পারলেন না এই মারকুটে ব্যাটার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই আউট। তাকে দিয়েই বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের ধস শুরু হয়। এরপর এ ধারা অব্যাহত থাকে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকে।

 

তানজিদ হাসান তামিম ১৩ (১২)

বোল্ড শার্দুল ঠাকুর

এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর আবারও দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। নাঈম শেখকে বাদ দিয়ে তাকে একাদশে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন না। ভালো শুরু করেও ১৩ রানের বেশি করতে পারলেন না। বরং দ্রুত আউট হয়ে উল্টো দলকে বিপদে ফেলেছেন।

 

 

এনামুল হক বিজয় ৪ (১১)

কট লোকেশ রাহুল, বোল্ড শার্দুল ঠাকুর

আলোচনায় ছিলেন না এনামুল হক বিজয়। লিটনের জ্বরের কারণে হঠাৎই ডাক পান। ম্যাচ খেলতে পারবেন কি না নিশ্চয়তা ছিল না। কিন্তু শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ। ১১ বল খেলে মাত্র ৪ রান করলেন। ছোট্ট এ ইনিংসেই যেন বোঝা গেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জায়গা করাটা অনেক কঠিন কাজ।

 

লেজের তিন ব্যাটারের রানের যোগফল ৮৭

নাসুম আহমেদ ৪৪ (৪৫)

বোল্ড প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ

কী দারুণ ব্যাটিং। মাত্র ৪৫ বলে ৪৪ রানের ইনিংসটা ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো। ভারতীয় বোলারদের রীতিমতো নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছেন। সাকিব আউট হওয়ার পর মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের দলীয় স্কোর ২০০ পার হওয়াই কঠিন। তাছাড়া টপ অর্ডাররা যেভাবে একের পর এক উইকেট হারিয়েছেন, সেখানে লোয়ার অর্ডার এক ব্যাটার কি-ই-বা করতে পারেন! কিন্তু নাসুম বাইশগজে গিয়েই দাপট দেখাতে শুরু করেন। একটুর জন্য নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরিটি পাননি নাসুম। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর বলে প্লেডঅন হয়েছেন।

 

শেখ মেহেদি হাসান ২৯ (২৩)

নটআউট

৯ নম্বর ব্যাট হাতে বাইশগজে নামার সুযোগ পেয়েছেন শেখ মেহেদি হাসান। ২৩ বলে ২৯ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। ইনিংসের শেষ বলেও তিনি যেভাবে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তা ছিল দেখার মতো এক দৃশ্য। 

 

তানজিম হাসান সাকিব ১৪ (৮)

নটআউট

দলের টপ অর্ডার যেদিন ব্যর্থ হয় সেদিন একটা বড় দায়িত্ব থাকে লোয়ার অর্ডারের। বিশেষ করে বোলারদের। সংক্ষিপ্ত সময়ে মাঠে নেমেও তাদের দ্রুত বাউন্ডারি হাঁকাতে হয়। সে কাজটি দারুণভাবে করতে পেরেছেন তানজিম হাসান সাকিব। মাত্র ৮ বলে খেলেছেন অপরাজিত ১৪ রানের ইনিংস। দারুণ একটি ছক্কাও হাঁকিয়েছেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর