সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিলেটে প্রাণ পেল বিপিএল

মেজবাহ্-উল-হক, সিলেট থেকে

শীতকাল পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের আদর্শ সময় হলেও পর্যটননগরী সিলেটে ঘুরে বেড়ানোর সেরা সময় অবশ্যই বর্ষাকাল। শীতের রুক্ষতায় ছোট ছোট টিলাগুলো যেন প্রাণহীন হয়ে গেছে। সিলেটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ চা বাগানে এখন সবুজের দেখা মেলাভার। ভ্রমণপিপাসু মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকা সাদা পাথর, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, হাতিমনগর জাতীয় উদ্যানেও যেন প্রাণ নেই। এবার শীতের প্রকোপটা আগের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় সিলেটের সবকিছুতেই যেন রুক্ষতার ছাপ।

তবে এই প্রাণহীন সিলেটে এসেই যেন প্রাণ ফিরে পেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-বিপিএল। চার-ছক্কার খেলা টি-২০। বড় স্কোর না হলে কি আর খেলা সেলিব্রেটি টুর্নামেন্ট জমে! মিরপুরের উইকেটে লো স্কোরিং ম্যাচ দেখতে দেখতে যেন বিরক্তি চলে এসেছিল দর্শকের। কিন্তু সিলেটে এসে কেটে গেছে  রানখরা।

এখন দলীয় স্কোর ২০০-এর কাছাকাছি হচ্ছে। দারুণ লড়াইও হচ্ছে। তবে সব ম্যাচেই যে এই চিত্র দেখা যাচ্ছে তা নয়। কিন্তু উইকেট যে ঢাকার চেয়ে অনেক ভালো তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সিলেটের উইকেট হচ্ছে স্পোর্টিং! এখানে ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার (পেসার, স্পিনার) সবার জন্যই সুবিধা আছে। এমন উইকেটে আসল লড়াইটা স্কিলের। কোনো দল বা ক্রিকেটারের সত্যিকার সামর্থ্য কতটা তা এমন উইকেটে খেললেই বোঝা যায়। ভালো ব্যাটসম্যান এমন উইকেটে অবশ্যই বড় স্কোর করতে পারবেন। লাইনলেন্থ ঠিক রেখে বোলিং করলেও পেসাররা যেমন সুবিধা পাবেন তেমন স্পিনাররাও ঘূর্ণি জাদু দেখিয়ে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।

কিন্তু কোনো ব্যাটসম্যান নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন বা কোনো বোলারের যদি লাইনলেন্থই ঠিক না থাকে তাহলে তো আর উইকেটের দোষ দিয়ে লাভ নেই। এমন উইকেট পেয়ে ক্রিকেটাররা যেমন খুশি তেমনি বেশি বেশি ছক্কা-চার দেখতে পেয়ে খুশি দর্শকও।

তবে সিলেটে এসেও ছন্দ পাচ্ছে না স্বাগতিক সিলেট স্ট্রাইকার্স। শীতের প্রকৃতির মতোই রুক্ষ তাদের পারফরম্যান্স। এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত সিলেট স্ট্রাইকার্স জয়ের মুখ দেখেনি। ঢাকায় প্রথম দুই ম্যাচে হারার পর সিলেটেও তাদের ভাগ্য বদলায়নি। উল্টো ঘরের মাঠে তাদের পারফরম্যান্স ছিল খুবই হতাশার।

বোলিং লাইনআপ ভালো হলেও ব্যাটিং যাচ্ছেতাই। আগের ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে মাত্র ১৩০ রানে আটকে দেওয়ার পর নিজে মাত্র ৭৮ রানেই অলআউট। এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত এটা কোনো দলের সর্বনিম্ন রানের লজ্জা। মাশরাফির নেতৃত্বে সিলেট এখন পয়েন্ট তালিকার তলানিতে। আজ সিলেটের প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সুপার এক দল। ক্রিকেটাররা দারুণ ছন্দে। চার ম্যাচে তিন জয় নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে। সিলেটে এসে চ্যালেঞ্জার্সের ব্যাটসম্যানরা যেন আরও উজ্জীবিত। আগের ম্যাচে ফরচুন বরিশালের বিরুদ্ধে ১৯৩ রান করেছিল। এমন আগুনে পারফরম্যান্স দেখানো একটি দলের বিরুদ্ধেই আজ মাঠে নামছে সিলেট।

দিনের অন্য ম্যাচে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা খুলনা টাইগার্স মুখোমুখি হবে দুর্দান্ত ঢাকার। এবারের আসরে খুলনা ক্যারিশমেটিক এক টিম। এনামুল হক বিজয়ের নেতৃত্বে প্রথম তিন ম্যাচেই টানা জয় পায়। দলে দারুণ কম্বিনেশন। অথচ বিপিএল শুরুর আগে দুর্বল দলের তালিকাতেই রাখা হয়েছিল। কিন্তু কাগজে-কলমে যেমনই হোক মাঠের পারফরম্যান্সে এখন পর্যন্ত সেরা।

আজ দ্বিতীয় ম্যাচে খুলনার প্রতিপক্ষ দুর্দান্ত ঢাকা। যদিও নামের প্রতি এখনো সুবিচার করতে পারেনি দলটি। এবারের আসরে জয় দিয়ে শুরু করলেও পরের দুই ম্যাচেই তারা হেরে যায়। তবে আজ খুলনাকে হারিয়ে আবার ছন্দে ফিরতে মরিয়া রাজধানীর দলটি। তবে কে হারবে আর কে জিতবে- তার চেয়েও বড় বিষয় সিলেটে আসার পর ক্রিকেট ভক্তরা চার-ছক্কার ঝড় দেখতে পাচ্ছে। ৩৬০ আউলিয়ার আবাসভূতিতে এসে সত্যিই বিপিএল যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

সর্বশেষ খবর