সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

রবসন-দিয়াবাতের আগ্রহ বাফুফে কতটা প্রস্তুত

নাগরিকত্ব নিয়ে জাতীয় দলে খেলা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

রবসন-দিয়াবাতের আগ্রহ বাফুফে কতটা প্রস্তুত

পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের ফুটবলার বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতে চান। বসুন্ধরা কিংসে খেলা রবসন রবিনহো নিজেই একথা বলেছেন। রবসন ব্রাজিলের কোনো বিখ্যাত বা পরিচিত মুখ নয়। তবে উপমহাদেশের ঘরোয়া লিগে যে কজন বিদেশি খেলছেন তাদের মধ্যে তাঁকে অন্যতম সেরা পারফরমার বলা যায়। ভারতের বিখ্যাত ক্লাব মোহনবাগান দুই বছর আগে রবসনকে অফার দিয়েছিল। গেল এএফসি কাপেও তাকে মোহনবাগানের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, অন্তত এক মৌসুম খেলতে। এখন আবার আরেক বিখ্যাত ক্লাব ইস্টবেঙ্গল তৎপর। কিন্তু ভালোবাসা ও পরিবেশের কারণে তিনি বসুন্ধরা কিংসে খেলতেই আগ্রহী। বিভিন্ন দলের অফার পাওয়ায় প্রমাণ মিলে উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে রবসন কতটা উঁচুমানের খেলোয়াড়।

রবসন প্রসঙ্গে বেশ কজন সাবেক খেলোয়াড়ের মন্তব্য ‘ওর মতো কমপ্লিট বিদেশি বাংলাদেশে দেখা যায়নি। নালজেগার, ঝুকভ বা এমেকাও উঁচুমানের ছিলেন। কিন্তু রবসনের মতো পরিশ্রমী বা টেকনিক জ্ঞান কারও ছিল না।’ শুরু থেকে কিংসে না খেললেও কিংসের বিভিন্ন শিরোপার পেছনে রবসনই বড় ভূমিকা রাখছেন। তার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায়। কিংসে দীর্ঘদিন খেলায় বাংলাদেশের প্রতি আলাদা মায়া জন্মে গেছে এ ব্রাজিলিয়ানের মধ্যে।

নিজ চোখে দেখছেন কিংবা উপলব্ধি করছেন, যে দেশে ফুটবল এত জনপ্রিয় সেখানে জাতীয় দলের হযবরল অবস্থা। সে কারণে নিজ থেকে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে পরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি এটাও বলেছেন বাংলাদেশ তার সেকেন্ড হোম।

শুধু রবসন নন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা মালির ফুটবলার সুলেমান দিয়াবাতেও ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে পাওয়া লাল-সবুজের জার্সি গায়ে চড়াতে চান। শুধু মোহামেডান নয়, পেশাদার লিগ ইতিহাসে বিদেশিদের মধ্যে অন্যতম পারফরমার তিনি। গোলের পর গোল আর হ্যাটট্রিক করেই চলেছেন। সর্বশেষ চমক পাঁচ গোলসহ ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক। বাংলাদেশের ফুটবলাররা গোল পোস্ট যেন চোখে দেখে না। সহজ সহজ গোলের সুযোগ হাত ছাড়া করে জাতীয় দলের সর্বনাশ ডেকে আনছেন।

এ অবস্থায় দিয়াবাতে বাংলাদেশ দলে খেলতে পারলে অবস্থার উন্নতি ঘটবেই। রবসন ও দিয়াবাতে বাংলাদেশে খেলতে আগ্রহী। তারা এটাও বলেছেন কীভাবে খেলব সেই কাজ বাংলাদেশের ফুটবল কর্তাদের করতে হবে। জাতীয় দলে খেলতে হলে এখনও অনেক প্রক্রিয়া বাকি। যা দেখার দায়িত্ব বাফুফেরই। দুই তারকা বিদেশি ফুটবলার আগ্রহ প্রকাশ করার পরও বাফুফের কেউ কি তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন? এখন পর্যন্ত তারা নীরবই রয়েছেন। যাদের নিলে জাতীয় দল শক্তিশালী হবে এ বিষয়টি কি গুরুত্ব দেওয়া উচিত না? বাফুফে বলছে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হামজা চৌধুরী কথা। সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন হামজা বাংলাদেশের জাতীয় দলে খেলবে। এ কথা বলেই শেষ। কী প্রক্রিয়ায় তাকে আনা সম্ভব এ নিয়ে কোনো কাজ করেছেন কি?

রবসন ও দিয়াবাতে বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার প্রথম শর্ত তাদের নাগরিকত্ব পেতে হবে। রবসনের ব্যাপারে কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেছেন,  এ ব্যাপারে তারা সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। দিয়াবাতের বিষয়ে মোহামেডান ক্লাব থেকেও একই কথা বলা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রধান দায়িত্ব তো দেশের ফুটবল ফেডারেশনের। তারা তো দুজনার সঙ্গে কথায় বলেননি। জাতীয় দলকে শক্তিশালী করার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে।  বাফুফের লম্বা কমিটি রয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকের কোনো কাজ নেই। তারা কি লিগের খেলা দেখে বিদেশিদের চিহ্নিত করতে পারেন না, যারা মানসম্পন্ন খেলোয়াড় তাদের কেউ নাগরিকত্ব নিয়ে জাতীয় দলে খেলতে চান কি না? বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, জার্মানি এবং বিশ্বকাপ খেলা অন্যান্য দেশ যখন নাগরিকত্ব দিয়ে দলকে শক্তিশালী করছে সেখানে সুযোগ থাকার পরও বাংলাদেশ কেন পারছে না?  জাতীয় দলকে শক্তিশালী করার অনেক পথই তো খোলা রয়েছে।

এটা ঠিক এলিটা কিংসলেকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এমন সময় কাজ সম্পন্ন হয় যখন তার ফর্মই শেষ। এখন তো তাকে পেশাদার লিগেও কেউ খেলায় না।

সর্বশেষ খবর