বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

নিউক্লিয়ার ফিউশন : বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস

রকমারি ডেস্ক

নিউক্লিয়ার ফিউশন : বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস

অতীতেও বিজ্ঞানীরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের কার্বনবিহীন, অসীম উৎসের খোঁজে ফিউশন নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু এ ধরনের কোনো উদ্যোগই টেকসই হয়নি। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রযুক্তি হতে পারে স্থায়ী সমাধান...

যুক্তরাজ্যের কয়েক বিজ্ঞানী সুসংবাদ দিয়েছেন। নিউক্লিয়ার ফিউশন তৈরি করে আগের রেকর্ডের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি সময় পর্যন্ত একে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। একই প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদন করে সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্র নিজেদের প্রজ্বলিত রাখে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সত্যি সত্যি যদি পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিউক্লিয়ার ফিউশন ঘটানো যায়, তার মধ্য দিয়ে দৃশ্যত অসীম পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করা যাবে পরিবেশবান্ধব উপায়ে। এ প্রক্রিয়ায় কার্বন নির্গমন বা তিজস্ক্রিয় নিঃসরণের ঝুঁকিও তেমন বাড়বে না।

 

নিউক্লিয়ার ফিউশন কী?

কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভেঙে ভিন্ন মৌলের একাধিক হালকা নিউক্লিয়াস তৈরি হলে বিপুল পরিমাণ শক্তির বিকিরণ ঘটে, যাকে বলে পারমাণবিক শক্তি। এটা ঘটতে পারে দুই ধরনের বিক্রিয়ার মাধ্যমে। একটি নিউক্লিয়ার ফিশন, অন্যটি নিউক্লিয়ার ফিউশন।

 

তাপশক্তির উৎস

নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ায় দুই বা তার চেয়ে বেশি পরমাণু একত্র হয়ে বড় একটি পরমাণু তৈরি করে। এই বিক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ তাপশক্তি পাওয়া যায়। বর্তমানে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে ফিউশন নয়, ফিশন প্রক্রিয়া ব্যবহার হয়। ফিশনের মাধ্যমে পরমাণু একত্র করার বদলে ইউরেনিয়াম পরমাণু ভেঙে শক্তি উৎপাদন করা হয়। তবে এ প্রক্রিয়ায় তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরি হয়, যেগুলো হাজারো বছর পরিবেশে থেকে যেতে পারে। কোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে, যেমনটা হয়েছিল ২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমায়। তুলনামূলকভাবে ফিউশন প্রক্রিয়া অনেক বেশি নিরাপদ। এতে খুব কম পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয় এবং জ্বালানি হিসেবে খুবই সহজলভ্য, প্রকৃতিতেই পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে টেকসই জ্বালানির ব্যবহার শুরু করতে নিউক্লিয়ার ফিউশন খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

 

ভবিষ্যতের স্থায়ী সমাধান!

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ফলগুলো বেশ ইতিবাচক। তবে নিউক্লিয়ার ফিউশনকে শক্তির উৎস হিসেবে নিয়মিত ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। জানা গেছে, অক্সফোর্ডের টোকামাক যন্ত্রটির আনুষ্ঠানিক নাম জয়েন্ট ইউরোপিয়ান টরাস (জেট)। জেটের পরীক্ষার ফলগুলো খুবই আশা জাগানিয়া। সেখানে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, কিন্তু মাত্র ৫ সেকেন্ডের জন্য। আরও দীর্ঘ সময় ধরে ফিউশন চালু রাখার প্রক্রিয়া খুঁজে বের করাই হচ্ছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আইপিসিসির (জলবায়ু-সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেল) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হলে এ দশকের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে একে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ, জীবাশ্ম জ্বালানি, যেমন- কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার থেকে দ্রুত সরে আসতে হবে। আইপিসিসির মতে, নিউক্লিয়ার ফিউশনের মতো টেকসই শক্তির উৎস খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।

সর্বশেষ খবর