সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

আগের চেয়ে দ্রুত ঘুরছে মঙ্গল গ্রহ

আগের চেয়ে দ্রুত ঘুরছে মঙ্গল গ্রহ

মঙ্গলের দিনের দৈর্ঘ্য প্রতি বছরে কমছে। এমনিতে মঙ্গলে দিনের দৈর্ঘ্য পৃথিবীর চেয়ে ৪০ মিনিট বেশি। স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুতগতিতে ঘুরছে মঙ্গল গ্রহ! নাসার ইনসাইট ল্যান্ডারের সংগ্রহ করা উপাত্ত তেমনটিই বলছে। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনে ইনসাইট ল্যান্ডারের অভিযান নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

 

বিজ্ঞানীরা দেখছেন, প্রতি বছর মঙ্গলের ঘূর্ণন গতি ৪ মিলিআর্কসেকেন্ড হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যভাবে বলা যায়, এতে মঙ্গলের দিনের দৈর্ঘ্য প্রতি বছরে এই পরিমাণ কমছে। এমনিতে মঙ্গলে দিনের দৈর্ঘ্য পৃথিবীর চেয়ে ৪০ মিনিট বেশি। স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুতগতিতে ঘুরছে মঙ্গল গ্রহ! নাসার ইনসাইট ল্যান্ডারের সংগ্রহ করা উপাত্ত তেমনটিই বলছে। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনে ইনসাইট ল্যান্ডারের অভিযান নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। অবসরে চলে যাওয়া মহাকাশযান ‘ইনসাইট’ ছিল নানা প্রযুক্তিগত সরঞ্জামে সজ্জিত। এতে ছিল অ্যান্টেনা আর ‘রাইজ’ নামে রেডিও ট্রান্সপন্ডার। ইনসাইট টানা ৯০০ দিন মঙ্গলের আবর্তনের ওপর নজর রেখেছে। বিজ্ঞানীদের দেখছেন, প্রতি বছর মঙ্গলের ঘূর্ণন গতি ৪ মিলিআর্কসেকেন্ড হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যভাবে বলা যায়, এতে মঙ্গলের দিনের দৈর্ঘ্য প্রতি বছরে এই পরিমাণ কমছে। এমনিতে মঙ্গলে দিনের দৈর্ঘ্য পৃথিবীর চেয়ে ৪০ মিনিট বেশি। ত্বরণের বৃদ্ধিটি এখানে নগণ্য। কেন এটি ঘটছে তাও নিশ্চিত নন গবেষকরা। তবে তাদের ধারণা, মঙ্গলের মেরুতে বরফ জমা কিংবা বরফে ঢাকা কিছু জায়গা উন্মুক্ত হয়ে পড়ার ফলে এমনটি ঘটেছে। বরফে ঢাকা কিছু জায়গা উন্মুক্ত হওয়ায় মঙ্গলের ত্বরণ বেড়েছে বলে ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৮-এর নভেম্বরে মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ অবস্থা নিরীক্ষার জন্য এটি তৈরি করা হয়। প্রাথমিকভাবে অভিযানের দৈর্ঘ্য ২ বছর হবে বলে নির্ধারণ করা হয়। পরে নাসা এর মেয়াদ আরও ২ বছর বাড়ায়। ২০২২-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অভিযানের মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহের নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এরপর ধুলো জমে এতে সূর্যালোক প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যায়। সত্তর দশকের ভাইকিং ল্যান্ডার কিংবা নব্বই দশকের পাথফাইন্ডারের তুলনায় রেডিও প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে ছিল এ ল্যান্ডারটি। ‘ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক’ সমৃদ্ধ এই ল্যান্ডার পৃথিবীর তিনটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসানো বিশাল আকারের অ্যান্টেনার সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ করেছিল। ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইনসাইটে সিগন্যাল পাঠাতেন বিজ্ঞানীরা। তারপর এটি প্রতিফলিত হয়ে ফিরত পৃথিবীতে। এতে ডপলার শিফটের ফলে ঘটা কম্পাঙ্কের ক্ষুদ্র পরিবর্তনগুলোও তাদের নজরে পড়ে। এতে দূরত্বের ওপর নির্ভর করে সাইরেনগুলোর ‘পিচ’-এর পরিবর্তনও তারা লক্ষ্য করেন। গ্রহের ঘূর্ণনের সঙ্গে পরিবর্তন আসে কম্পাঙ্কে। আগের গবেষণা থেকে এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, মঙ্গলের অভ্যন্তর গলিত ধাতব পদার্থে গঠিত। ‘রাইজ’ ব্যবহার করে এর অভ্যন্তরে চার পাশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তরলের দরুন মঙ্গলের গতির পরিবর্তন পরিমাপ করেন তারা। এর ফলে এর অভ্যন্তরের আকার নির্ণয় সম্ভব হয়েছে। উপাত্ত থেকে জানা যাচ্ছে, এর অভ্যন্তরের ব্যাস প্রায় ১ হাজার ১৪০ মাইল বা ১ হাজার ৮৩৫ কিলোমিটার। ইনসাইট ল্যান্ডারটি যদিও আর কার্যকর নেই, তবে চার বছর ধরে এর সংগ্রহ করা মূল্যবান তথ্য-উপাত্তগুলো এই লাল গ্রহটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে। মঙ্গলের অভ্যন্তরভাগ নিয়ে মিশনটি প্রথমবারের মতো সামনে এনেছে বেশকিছু নতুন তথ্য, যা নিয়ে আগামীতে বিজ্ঞানীদের গবেষণা চলমান থাকবে। ‘সর্বশেষ পরিমাপটি পাওয়া সত্যিই দারুণ, আর খুব মূল্যবানও বটে’, বলছিলেন ইনসাইটের মুখ্য অনুসন্ধানী ব্রুস বেনার্ডট। আগস্টের ১ তারিখে অবসরে গেছেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় নাসার ‘জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি’তে তিনি কাজ করেছেন দীর্ঘ ৪৬ বছর। মঙ্গলের বুকে ইনসাইটের মতো একটি জিওফিজিক্যাল কেন্দ্র তৈরির জন্য বহুদিন ধরে চলা প্রচেষ্টার অংশ ছিলাম আমি নিজেও। আর এ রকম ফল দেখে মনে হচ্ছে আমাদের কয়েক দশক ধরে করা পরিশ্রম সার্থক।

                                                 তথ্যসূত্র : সিএনএন

সর্বশেষ খবর