বুধবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
মাস্কের সতর্কবাণী

মানবসভ্যতা ধ্বংস করতে পারে এআই

টেকনোলজি ডেস্ক

মানবসভ্যতা ধ্বংস করতে পারে এআই
স্টিফেন হকিং থেকে শুরু করে ইলন মাস্ক পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ কয়েকজন বিজ্ঞানী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একসময় মানবসভ্যতার জন্য হুমকি  হয়ে উঠতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন
এআই নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এগুলো এতটাই দক্ষ হয়ে উঠছে যে, হয়তো দুর্ঘটনাবশত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের ভুল কোনো  কাজে লাগানোর মাধ্যমেই আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে

 

সম্প্রতি কৌতুক অভিনেতা জো রোগানের পডকাস্টে ইলন মাস্ক বলেন, পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীরা এআই ব্যবহার করলে মানুষের অস্তিত্ব বিলুপ্তির দিকে যেতে পারে। তিনি বলেন, কেউ কেউ এআই ব্যবহার করে মানবসভ্যতার বিলুপ্তি ঘটিয়ে গ্রহকে রক্ষা করতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় প্রসারের ঝুঁকি, নিয়ন্ত্রণ ও আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে ব্রিটেনে চলমান এআই শীর্ষ সম্মেলনের আগে মাস্কের এ মন্তব্য এসেছে। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ এ ধরনের সতর্কতাকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন। মাস্ক বলেন, পরিবেশবাদীদের আন্দোলন ‘খুব দূরে চলে গেছে’ এ আশঙ্কা থেকেই তিনি এ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি ভাবতে শুরু করেন যে মানুষ খারাপ, তাহলে প্রাকৃতিক উপসংহার হলো মানুষের মৃত্যু হওয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, যদি এআই বিলুপ্তিবাদীদের দিয়ে প্রোগ্রাম করা হয়, তবে এর উপযোগী কার্যকারিতা মানবসভ্যতার বিলুপ্তি হবে... তারা এটাকে খারাপ ভাববে না।

আসলে এআইচালিত এসব যন্ত্রের জন্য নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এগুলো এতটাই দক্ষ হয়ে উঠছে যে, হয়তো দুর্ঘটনাবশত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের ভুল কোনো কাজে লাগানোর মাধ্যমেই আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে।

‘হিউম্যান কমপ্যাটিবল : এআই অ্যান্ড দ্য প্রবলেম অব কন্ট্রোল’ নামে বইটি লিখেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টুর্ট রাসেল, যিনি আধুনিক যন্ত্রসক্ষমতা প্রযুক্তির ব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেছেন, হলিউডের সিনেমায় দেখানো হয়, যন্ত্রগুলো নিজে থেকেই সচেতন হয়ে উঠছে। কিন্তু রোবটের কোনো মানবিক অনুভূতি থাকে না। সুতরাং সেটা একেবারেই অহেতুক একটা বিষয়, যা নিয়ে নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তবে আমাদের আসলেই তাদের দক্ষতার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।

অত্যন্ত দক্ষ : কল্পনা করুন যে, আমাদের একটি শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা আছে, যেটি বিশ্বের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং সেটি ব্যবহার করে আমার প্রাকশিল্প পর্যায়ের কার্বন ডাইঅক্সাইড মাত্রার আবহাওয়ায় ফিরে যেতে চাই। তখন সেটি ঠিক করল যে, এটা করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে পৃথিবী থেকে সব মানুষকে সরিয়ে ফেলা, কারণ পৃথিবীতে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের দিক থেকে মানুষই সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তখন ওই সিস্টেম কী করবে? এটি তখন আমাদের সন্তান কম নেওয়ার ব্যাপারে প্রভাবিত করবে, যতক্ষণ না পৃথিবী থেকে মানুষ শেষ হয়ে যায়। এ উদাহরণের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের বিপদের সেসব দিক তুলে ধরা হয়েছে, যা মানুষ খুব চিন্তাভাবনা করে নির্দেশ না দিলে বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।

অতিবুদ্ধি : যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব এক্সিসটেনশিয়াল রিস্কের তথ্যানুসারে বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পদ্ধতিগুলো অ্যাপ্লিকেশন সীমাবদ্ধ, যেগুলোর নকশা করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট কোনো সমস্যার সমাধান করার জন্য। এ খাতের একটি মাইলফলক মুহূর্ত আসে ১৯৯৭ সালে, যখন কম্পিউটার ডিপ ব্লু দাবায় তৎকালীন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে ছয়টি খেলার একটি ম্যাচে হারিয়ে দেয়। তা সত্ত্বেও ডিপ ব্লুকে মানুষ বিশেষভাবে নকশা করেছিল দাবা খেলার জন্য। কিন্তু পরে আবিষ্কৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে আর সে কথা বলা যাবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আলফাগো জিরো সফটওয়্যার তিন দিন ধরে নিজের বিরুদ্ধেই ‘গো’ (একটি বোর্ড গেম) খেলার পরে দক্ষতার দিক থেকে সুপার হিউম্যান পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ পদ্ধতি যতই শক্তিশালী হয়ে উঠবে, ততই এটি অতিবুদ্ধির অধিকারী হয়ে উঠবে। এটি হয়তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যাবে। আর এ কারণেই মানুষের উচিত রোবট বা যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখা।

সর্বশেষ খবর