মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সিলেট এখন নামেই দীঘির শহর

সিলেট এখন নামেই দীঘির শহর

সিলেটে ধোপাদীঘি ভরাট করে কার্যালয় স্থাপনের জায়গা করেছে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি

ধোপাদীঘি, সাগরদীঘি, লালদীঘি, বেকাদীঘি, রামেরদীঘি, কাজীদীঘি, মাছুদীঘি, রামুদীঘি, চারাদীঘি, মজুমদার দীঘি, তেররতন দীঘি, কাস্টঘর দীঘি, জয়নগর দীঘি, রাজবাড়ী দীঘি- একসময় এরকম দীঘির ছড়াছড়ি ছিল সিলেট নগরীতে। দীঘির আধিক্যের জন্য সিলেটকে বলা হতো দীঘির শহর। বিভিন্ন দীঘির নামে নগরীর বিভিন্ন এলাকার নামকরণও হয়েছে।

কিন্তু দীঘির শহরে এখন আর দীঘি চোখে পড়ে না। দীঘি ভরাট করে গড়ে উঠেছে অট্টালিকা। দীঘি ভরাটে শুধু সাধারণ লোকজনই নয়, খোদ সিটি করপোরেশনও রয়েছে এগিয়ে। দীঘি ভরাটের কারণে কমে এসেছে নগরীর জলাধারের সংখ্যা। এতে বিঘ্ন ঘটছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই নগরীতে সৃষ্টি হচ্ছে জলজট।

নগরীতে লালদীঘিরপাড় ও সিটি সুপার মার্কেট নামে যে দুটি মার্কেট রয়েছে এখানেও ছিল বিশাল দীঘি।

 

 

লালদীঘি নামের ওই দীঘি ভরাট করে তৎকালীন সিলেট পৌরসভা নির্মাণ করেছে মার্কেট। সিলেট পৌরসভা থাকাকালেই বেকাদীঘি ভরাট করে নির্মাণ করা হয় জালালাবাদ পার্ক। ধোপাদীঘি ভরাট করে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু দোকানপাট। ওই দীঘির একাংশ ভরাট করে সিটি করপোরেশন পার্ক ও মসজিদ নির্মাণ করেছে। চারাদীঘি ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদ। ওই স্থানে একটি স্কুল নির্মাণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উত্তরকাজিটুলায় বিদ্যুৎ অফিসের ভবন নির্মিত হয়েছে বিশাল দীঘি ভরাট করে। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি মালিকানায় থাকা দীঘিগুলোও ধীরে ধীরে ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন। এখনো যেসব দীঘির অস্তিত্ব রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। দখলের উদ্দেশ্যে ধীরে ধীরে এগুলো ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে।  সিলেট নগরীর পাড়া-মহল্লায় থাকা দীঘিগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে নগরী। নগরীতে এখন কোথাও আগুন লাগলে পানির জন্য কঠিন সমস্যায় পড়তে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। ফলে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে। নগরীর জলাবদ্ধতা যখন প্রকট তখন কিছুটা হলেও টনক নড়েছে সিটি করপোরেশনের। পুকুর ভরাটে এখন আর কোনো অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না কাউকে। পাশাপাশি নগরীর ভিতর সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন যেসব জলাশয় রয়েছে তা উদ্ধারে নেমেছে সিটি করপোরেশন। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে জলারপাড়ে উদ্ধার করা হয় জলা। ওই জলাটি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন প্রভাবশালীরা। ওই জলা পরিদর্শনে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জলাশয় দখল ও ভরাটের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কাউকে জলাশয় ভরাট করতে দেওয়া হবে না। সিলেটে পুকুর ও জলাশয় ভরাট প্রসঙ্গে পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হাই আল হাদী বলেন, সিলেট নগরীর দীঘিগুলো কেবল জলাধার ছিল না। প্রতিটি দীঘি ছিল ইতিহাসের অংশ। এখন দীঘিগুলোর অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে। ফলে দীঘি ভরাটের মাধ্যমে সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে এখন আর কোনো দীঘি ভরাটের অনুমতি দেওয়া হয় না। যেসব জলাশয় দখল করে রাখা হয়েছে সেগুলো উদ্ধারে সিটি করপোরেশন অভিযান অব্যাহত রাখবে।

-শাহ্ দিদার আলম নবেল,  সিলেট

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর