বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাময়িক অসুবিধায় দীর্ঘ ভোগান্তি

মানিক মুনতাসির

সাময়িক অসুবিধায় দীর্ঘ ভোগান্তি

খোঁড়াখুঁড়িতে দীর্ঘ ভোগান্তি কমানোর কোনো উদ্যোগ নেই। ছবিটি ফার্মগেটের মনিপুরী এলাকা থেকে তোলা — জয়ীতা রায়

‘রাস্তা উন্নয়নের কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত।’ এ ধরনের বাণী সংবলিত ছোট ছোট সাইনবোর্ড চোখে পড়ে রাজধানীর পথে পথে। কিন্তু এই ‘সাময়িক অসুবিধা’ এখন স্থায়ী ভোগান্তি হিসেবে রূপ নিয়েছে রাজধানীর অনেক এলাকাতেই। এমন এলাকা রয়েছে যেখানে টানা পাঁচ বছর পর্যন্ত উন্নয়নের কাজ চলছে। একই রাস্তা এমনকি একই জায়গা খোঁড়া হচ্ছে বার বার। একবার হয়তো পানির লাইন সংস্কারের জন্য, আরেকবার টেলিফোন লাইন কিংবা অন্য কোনো সার্ভিস লাইন সংস্কারের জন্য খোঁড়া হচ্ছে এসব রাস্তা। শুধু তাই নয়, রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতেও একই অবস্থা। রামপুরা বনশ্রী সড়কের কাজ শুরু হয়েছে কবে মানুষ তা ভুলেই গেছে। এই সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালেরও আগে। সেই যে শুরু হয়েছে, আর যেন শেষই হচ্ছে না।

প্রতিদিনই সড়কের কোনো না কোনো অংশে খোঁড়াখুঁড়ি চলে। শুধু সড়কে নয়, একই সড়কের ফুটপাথের কাজ শুরু হয়েছে তিন বছর আগে। সেই ফুটপাথের কাজও চলছে এখনো। কী বর্ষা, কী শুষ্ক যে কোনো মৌসুমে ধুলা-কিংবা কাদামাটিতে মাখামাখি হয়ে বাড়ি ফেরেন এ সড়ক ব্যবহারকারীরা। আর এই সড়কের দুই পাশে হাঁটার জন্য ন্যূনতম পরিবেশ নেই। ফলে সাময়িক অসুবিধা এখন রূপ নিয়েছে দীর্ঘ ভোগান্তিতে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁও, মাদারটেক, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, মৌচাক, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো কাটা হয়েছে উন্নয়ন কাজের জন্য। পানির লাইন বসানোর কাজ শেষ করে ওয়াসা তার বড় দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু কাটা জায়গায় ঢালাই দেওয়ার কোনো কথা নেই। ফলে বছরের পর বছর উড়ছে ধুলাবালি। খানাখন্দে ভরে আছে এসব সড়ক। শুধু প্রধান সড়কই নয়, পাড়া-মহল্লার অলিগলির রাস্তাতেও একই অবস্থা। এমনকি মহল্লার ভিতরে আজকাল মানুষ রিকশা, মোটরসাইকেল বা প্রাইভেট কার নিয়ে ঢুকতে ভয় পান। কেননা রাস্তার কোন স্থান কাটা, কোথায় খানাখন্দ আর কোন জায়গা ভালো এটা বলা মুশকিল। একই সড়ক বা গলির এক প্রান্ত চকচক তো অন্য প্রান্তে বিশাল খানাখন্দ কিংবা খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষতচিহ্ন। এতে গোলকধাঁধায় পড়ে যেতে হয় নগরবাসীকে। রামপুরা, বনশ্রী, বাংলাদেশ টেলিভিশন, খিলগাঁও, মালিবাগ-মৌচাকের অনেক জায়গা রয়েছে যেসব পথে হেঁটে চলারও পরিবেশ নেই। সেখানে এক দিন দুই দিন, এক মাস দুই মাস, কিংবা ছয় মাস নয়, বছরের পর বছর চলছে খোঁড়াখুঁড়ির উৎসব। এ যেন দেখার কেউ নেই। অনেক জায়গায় দেখা গেছে রাস্তার মাঝ বরাবর পানির লাইন বসাতে খোঁড়া হয়েছে। কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাটা স্থানে মাটি ফেলে চলে গেছে। কিন্তু ঢালাই দেওয়ার কেউ নেই। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গেছে এসব জায়গার মাটি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্ত। এমনকি কোনো কোনো এলাকার খোঁড়া জায়গায় ঠিকমতো মাটিও ফেলছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে রাজধানীর রাস্তায় চলাচল করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। 

জানা গেছে, নগরীর পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্ত এমন কোনো সড়ক বা অলিগলি নেই, যেখানে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে না। এর মধ্যে দু-একটি সড়ক দিয়ে কোনোরকম চলাফেরা করা গেলেও অনেক রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযুক্ত। সিটি করপোরেশন, মেট্রোরেল স্থাপনের কাজের জন্য, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক, অলিগলি খুঁড়ছে।

আজ এই প্রতিষ্ঠান কাটছে তো কাল কাটছে আরেক প্রতিষ্ঠান। আজ রাস্তার ডান পাশ তো কাল বাম পাশ। কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পর আরেক প্রতিষ্ঠান এসে নতুন করে খনন করছে রাস্তা। প্রতিদিন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরজুড়ে উড়ছে ধুলাবালি। এর প্রভাবে নগরবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সব মিলিয়ে এখন রাস্তায় চলাচল করা নগরবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ।

জানা গেছে, রাজধানীতে একযোগে কমপক্ষে দেড় হাজার ছোট-বড় সড়কে উন্নয়ন কাজ ও খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এসব সড়কের কিছু অংশের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। আবার কিছু সড়কে এখনো খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। অনেক সড়কের অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। অনেক সড়কে আবার কোনো কাজই করা হয়নি। ফলে অধিকাংশ সড়কের অবস্থাই নাজুক। নাগরিক ভোগান্তি কমাতে সব রাস্তা সংস্কারের সময় এর স্থায়িত্ব ও গুণগতমান নিশ্চিত করায় দুই সিটি মেয়রকে দায়িত্ব নিতে হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, উন্নয়ন কাজের জন্য নগরবাসীর কিছুটা অসুবিধা তো হচ্ছেই। এটা এড়ানো কঠিন। তবে নগরবাসীর ভোগান্তি যেন কম হয় সে জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেবাদাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

 

 

সর্বশেষ খবর