বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কর্ণফুলীতে দখলের প্রতিযোগিতা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

কর্ণফুলীতে দখলের প্রতিযোগিতা

স্থানীয় প্রভাবশালীরা রাতের অন্ধকারে প্রতিদিনই তৈরি করছেন নামে-বেনামে নানা স্থাপনা। কমছে কর্ণফুলীর প্রশস্ততা। নদী হারাচ্ছে নাব্যতা। দূষণ হচ্ছে পরিবেশ।

 

২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘কর্ণফুলী রক্ষায় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ নদীকে দূষণমুক্ত রাখার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। বন্দর ও চট্টগ্রামের জন্য কর্ণফুলী নদী খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দুই বছর পার হয়েছে। এরই মধ্যে কর্ণফুলী রক্ষায় তৈরি হয়েছে মহাপরিকল্পনা। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে তৈরি হয়েছে তালিকা। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় আদালত ছয় মাসের সময়ও বেঁধে দিয়েছে। কর্ণফুলী নদী রক্ষায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। প্রতিদিনই প্রতিযোগিতা করে হচ্ছে বেদখল। হচ্ছে নতুন নতুন দোকান। স্থানীয় প্রভাবশালীরা রাতের অন্ধকারে প্রতিদিনই তৈরি করছেন নামে-বেনামে নানা স্থাপনা। কমছে কর্ণফুলীর প্রশস্ততা। নদী হারাচ্ছে নাব্যতা। দূষণ হচ্ছে পরিবেশ।   

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে তালিকা হয়েছে। তালিকা মতে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনায় গত ২৫ নভেম্বর এক কোটি ২০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় জেলা প্রশাসন। চলতি মাসে আরও একটি তাগাদাপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সাড়া মিলছে না। ফলে শঙ্কায় পড়ে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, কর্ণফুলী নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে উচ্ছেদ সংক্রান্ত নানা দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করেছি। বরাদ্দ মিললেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খালের মধ্যে বাঁশ, লোহার পাত দিয়ে বালু ফেলে তীর ভরাট করা হচ্ছে। দখল করা জায়গার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে নৌকা বোটের জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। খালের তীরে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য টং ঘর ও খোলা পায়খানা বানানো হয়েছে। তা ছাড়া নদীর তীরে ড্রেজিংয়ের ভরাট মাটি দখল করে নতুন নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলীর দুই পাড়ে ২ হাজার ১৮১ জন দখলদার বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেছেন। এর মধ্যে আরএস রেকর্ড মূলে কর্ণফুলী নদীর বাকলিয়া ও পূর্ব পতেঙ্গা মৌজায় মোট ২১১২ জন অবৈধ দখলদার এবং বিএস রেকর্ড মূলে বাকলিয়া, মাদারবাড়ী, গোসাইলডাঙ্গা, মনোহরখালী, ফিরিঙ্গি বাজার মৌজায় মোট ৬০ জন অবৈধ দখলদার আছেন। কর্ণফুলীর তীরে মোট ১৫৮ দশমিক ৪৫ একর ভূমিতে স্থাপনা রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে এ ভূমির মূল্য দুই হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাই কোর্ট কর্ণফুলী নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা সরাতে ৯০ দিন সময় বেঁধে রায় দেয়। একই সঙ্গে রায় প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে স্থানীয় দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দেয় আদালত।

‘অবৈধ দখলদাররা যদি স্থাপনা না সরান, তাহলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক এসব স্থাপনা অপসারণের ব্যবস্থা করবেন’ বলে রায়ে বলা হয়।

 

 

সর্বশেষ খবর