মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

রেললাইনের পাশে বিপজ্জনক বসতি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রেললাইনের পাশে বিপজ্জনক বসতি

রেললাইনের পাশে বিপজ্জনক বসতি গড়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। রাজধানীর জুরাইন থেকে তোলা - ছবি : আবু তাহের খোকন

রেললাইনের দুই গজ দূরত্বে সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন চলে এলেও ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। ট্রেন আসছে দেখে লাইনে পয়সা রেখে সামান্য দূরে কান চেপে দাঁড়িয়ে আছে শিশুরা। মালিবাগ রেলগেট দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদের কাছে এটা নিত্যদিনের চিত্র। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ও এর আশপাশের ৩৫ কিলোমিটার রেলপথে ৫৮টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশেরই নেই অনুমোদন। আর রেললাইনের পাশে সারি সারি বস্তি গড়ে ওঠায় দুর্ঘটনার জন্য ক্রসিংকে দায়ী করার উপায় নেই। শুধু ২০১৭ সালেই রেলে কাটা পড়ে এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮৪ জন। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিমানবন্দর আসার পথে চোখে পড়ে ঘেঁষাঘেঁষি করে গড়ে ওঠা বস্তি।

বস্তির বাসিন্দাদের সময় কাটানো এবং বিনোদনের জায়গা হলো রেললাইন। সকাল হলে বাজার আর বিকাল হলে ছোলা-বাদাম ফেরি করে বিক্রি করা হয় রেললাইনের ওপরে। রেললাইন থেকে কমপক্ষে ৫০ গজ দূরত্বে বসতবাড়ি বা হাটবাজার বসানোর নিয়ম থাকলেও তা গড়ে ওঠেছে দুই গজেরও কম দূরত্বে। এতে করে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে মানুষের জীবন। ট্রেনও চলছে চরম ঝুঁকি নিয়ে। কমলাপুর থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসে বিমানবন্দর পর্যন্ত আসতে চোখে পড়ে ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পারাপারের দৃশ্য। সকালে রেললাইনের ওপরেই চলছে মুরগি জবাই। রেললাইন থেকে আধা হাত দূরে ডালায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে সবজি-ফলমূল। ট্রেনের চালক বারবার হুইসেল দিলেও ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। খুব কাছে চলে এলে একটু সরে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। পিঠের কাছ দিয়ে জোরেশোরে বাতাসের ধাক্কা লাগিয়ে চলে যাচ্ছে ট্রেন। শাহজাহানপুর বস্তি এলাকায় রেললাইনের ধারে চুলা বসিয়ে রান্না করতে দেখা যায় বেশ কয়েকটি পরিবারকে। ট্রেনের স্লিপারের ওপর শাক-সবজি রেখে নিশ্চিন্তায় রান্না করছেন গৃহবধূরা। খিলক্ষেত এলাকার অবস্থাও একই। রেললাইনের দুই পাশে গড়ে ওঠেছে অবৈধ বস্তি ও হাটবাজার। আসবাবপত্রের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেকে। ট্রেনলাইনের ওপরে দাঁড়িয়ে কাঠ চেরাই করতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় দোকানিদের। অনেকেই বাটাল ধার দিচ্ছেন পাশের লাইনে।

এক লাইন দিয়ে ট্রেন চলে গেলে তারা আশ্রয় নিচ্ছেন পাশের লাইনে। রেললাইনের দুই পাশ শুধু স্থাপনাই নয়, চলন্ত ট্রেনের সামনে মাথায় বস্তা নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পারাপার হচ্ছেন অনেকে। এসব বিশৃঙ্খলার কারণে ট্রেনের গতি তুলনামূলক কম রাখতে দেখা যায় চালকদের। রেললাইনে অসতর্ক অবস্থায় চলাফেরা করায় বারবার হুইসেল দিতে দেখা যায় চালককে। জীবন বাঁচানোর চিন্তা রেলচালকদের থাকলেও সতর্কতা নেই রেললাইনের পাশের বাসিন্দা এবং পারাপার হওয়া লোকজনের।

মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, রেললাইনের পাশের বস্তিগুলো কিছুদিন পর পর ভেঙে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সপ্তাহ পার না হতেই এমনভাবে বসতি গড়ে তোলে যেন আগে থেকেই ছিল। আর সবজির বাজার দুর্ঘটনার বড় কারণ। ভ্রাম্যমাণ বাজার হওয়ায় সকালে উঠিয়ে দিলে বিকালেই বসে। তাই এই জায়গাগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন, যেন পরিত্যক্ত না থাকে। কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় দিনরাতের ২৪ ঘণ্টাই রেললাইনের ওপর দিয়ে পারাপার হয় মানুষ। রেললাইনের দুই পাশে পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। হাজারো মানুষ যাতায়াত করলেও এখানে নেই কোনো রেলক্রসিং। তাই হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। জোয়ার সাহারা এলাকার বাসিন্দা মক্তব আলী বলেন, গত বছর মা-মেয়েকে ট্রেন দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা যান এক ব্যক্তি। গত বছরের এপ্রিলে কানে হেডফোন দিয়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়। বস্তি এবং বাজার এলাকায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি। অহরহ দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি হলেও সচেতনতা নেই রেললাইনের পাশে বসবাসকারী এবং ঝুঁকি নিয়ে পারাপারকারী মানুষের।

সর্বশেষ খবর