রাজধানীতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে দিবারাত্রির কর্মযজ্ঞ চলছে। শীতের রাতে উজ্জ্বল আলোয় নির্ঘুম কাজের আনন্দে মেতে থাকছেন শত শত কর্মী-প্রকৌশলী। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়া সন্তোষজনক গতিতে এগিয়ে চলেছে। তারা আশা করছেন, আগামী বছরের মধ্যে এই টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ করে বিমান ওঠানামা করতে পারবে। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ প্রায় ২২ শতাংশ শেষ হয়েছে। মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে নির্মাণ কাজের বিভিন্ন অংশ।
এই থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরের সারিতে নাম লেখাবে শাহজালাল। সর্বাধুনিক স্থাপত্যরীতিতে তৈরি করা হয়েছে এর নকশা। প্রায় ৩৫০ একর জমির ওপর নির্মাণ হচ্ছে পুরো প্রকল্প। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরের মতোই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে এই থার্ড টার্মিনালে। বর্তমানে বেজমেন্টের ছাদ পেরিয়ে উপরি কাঠামোর নির্মাণকাজ চলছে। প্রথম তলার পিলারগুলোর অধিকাংশেরই নির্মাণ শেষ হয়েছে। প্রথম তলার ছাদের একাংশও হয়ে গেছে। এলিভেটেড ওয়ের পিলারও দাঁড়িয়ে গেছে। ওদিকে এয়ারসাইটে চলছে ট্যাক্সিওয়ে ও এপ্রোনের কাজ। সঙ্গে কালভার্ট ও ড্রেনেজের কাজ।
শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের কাজ দিনের পাশাপাশি চলছে রাতেও। খিলক্ষেত থেকে উত্তরার দিকে যেতেই মহাসড়ক সংলগ্ন পশ্চিমে চোখে পড়ে ওই বিশাল কর্মযজ্ঞ। রাতের কাজের দৃশ্য অনেক মনোরম। যেন একদল ক্লান্তিহীন মানুষ একযোগে দেশের স্বপ্ন নির্মাণ করে চলেছেন। এরই মধ্যে কাজ শেষ হয়ে গেছে টাউন সাইটে ২২ শতাংশ আর বাউন্ডারির আড়ালে এয়ারসাইটে ৩০ শতাংশ। মূল টার্মিনাল ভবনের ৬৮৬টি কলামের মধ্যে সবকটির কাজই সম্পন্ন করা হয়ে গেছে। এখন দ্রুত ওঠে যাবে বাকি কাজ। তিন তলা ভবনের প্রথম তলার পুরো ছাদই দৃশ্যমান হয়ে গেছে। কাজে নিয়োজিত শত শত শ্রমিক, দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের ঘর্মাক্ত শরীর। তারা অকাতরে খেটে চলছেন ইতিহাস গড়ার অংশীদার হতে। এই দেশের তো বটেই- দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অত্যাধুনিক ও সুবিশাল এয়ারপোর্ট নির্মাণে তারা রাত দিন কাজ করছেন।জানা গেছে, ২ লাখ ৬০ হাজার মিটার আয়তনের এই থার্ড টার্মিনাল অত্যাধুনিক স্থাপত্যরীতিতে গড়ে উঠছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে এই বিমানবন্দর। বিমানবন্দরের যে কোনো পয়েন্টে বিন্দুমাত্র ত্রুটি দেখা দিলে মুহূর্তেই সে সিগন্যাল চলে যাবে সেন্ট্রাল ডাটা ব্যাংকে- যেখান থেকে মুহূর্তেই সেটার সমাধান মিলবে। নিকুঞ্জ থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ওপরে দোতলায় ওঠে আবার উত্তর দিকে আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে নির্বিঘ্নে বের হয়ে যাওয়ার সুগম পথ থাকবে। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রজেক্টের সব কাজ শেষ করে আগামী বছরের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন তারা।
এখানে দেশি-বিদেশি সবাই সমান দক্ষতায় নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম দফায় শেষ করা হবে টার্মিনাল নির্মাণকাজ। তারপর ধাপে ধাপে কার্গো, ট্যাক্সিওয়ে, ফ্লাইং ক্লাব, কানেক্টিং রোডসহ অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করা হবে। থার্ড টার্মিনালের ভবনটির নকশা করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন যিনি বিশ্বের কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ও অত্যাধুনিক বিমানবন্দর ভবনেরও নকশাবিদ।
তার কাজের মধ্যে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াংজুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উল্লেখযোগ্য। থার্ড টার্মিনালের ভবনে বহির্গমনের (ডিপার্চার) জন্য ১৫টি সেলফ চেক-ইন (স্বসেবা) কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে।
বহির্গমনে ৬৪ ও আগমনী যাত্রীদের জন্য ৬৪টি ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকছে। এ ছাড়া ২৭টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ১১টি বডি স্ক্যানার, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ ও ১৬টি লাগেজ বেল্ট থাকবে। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ প্রকল্পে থাকছে ৩৭টি উড়োজাহাজ রাখার অ্যাপ্রোন ও ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখার সুবিধা, ৬৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আমদানি-রপ্তানি কার্গো কমপ্লেক্স। সব মিলিয়ে থার্ড টার্মিনালে বদলে যাবে বাংলাদেশের এভিয়েশন পরিষেবা।