রাজধানীর অদূরে গাজীপুর এখন এক বিশৃঙ্খল শহর। উন্নয়ন কাজের খোঁড়াখুঁড়িতে যানজট, ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য, সড়কে অবৈধ বাজার ও ময়লার ভাগাড় নিয়ে বিশৃঙ্খল শহরে পরিণত হয়েছে গাজীপুর। গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ট্রাফিক পুলিশ, থানা পুলিশ ও সওজ কর্তৃপক্ষ যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের দায়িত্ব পালন না করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরস্পরকে দোষারোপ করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সংস্থাগুলো। ফলে আসন্ন ঈদে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে অসংখ্য মানুষকে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, এটা সিটি করপোরেশনের কাজ। সিটি কর্তৃপক্ষ বলেন, এটা ট্রাফিক পুলিশ কিংবা থানা পুলিশের কাজ। আবার ট্রাফিক পুলিশ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের জন্য কোনো কাজ করতে পারছে না বলে অভিযোগ করে। সব মিলে হযবরল অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে নগরীর।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, রাজধানীর অদূরে শিল্প শহর হিসেবে পরিচিত টঙ্গী-গাজীপুর। ঈদকে সামনে রেখে টঙ্গী-জয়দেবপুর ও টঙ্গী কালিগঞ্জ সড়ক ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে। ঘরমুখো লাখ লাখ মানুষ এই সড়ক ও মহাসড়ক হয়ে বাড়ি ফিরবেন। তাই এই সড়কে যানজটের কারণে প্রতিনিয়ত পরিবহনযাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একদিকে মহাসড়কে বিআরটিএর উন্নয়ন কাজের খোঁড়াখুঁড়ি, অন্যদিকে ইজিবাইক ও অটোরিকশার বেপরোয়া চলাচল, মহাসড়কে ফুটপাথ দখল করে অবৈধ বাজার বসানো এবং যেখানে- সেখানে গাড়ির স্ট্যান্ড গড়ে ওঠা, সড়কে ময়লার ভাগাড়ের ফলে যানজট বেড়েই চলছে। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর যেতে সময় লাগে মাত্র ১৫-২০ মিনিট। অথচ এখন সময় লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী ও জয়দেবপুর সড়কে যানজট দেখা দিলে এর প্রভাব পুরো ঢাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। গাড়িতে বসে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট ছাড়া কোনো গতি নেই। বর্তমানে টঙ্গী ও গাজীপুরে সড়কে যানজটের অন্যতম কারণ হলো ইজিবাইক আর অটোরিকশা। এসব যানবাহন বিশৃঙ্খলভাবে চলাচলের কারণে যানজটের ভয়াবহতা বেড়েই চলছে। পুলিশ বলছে, সড়কের বিষফোঁড়া হলো ইজিবাইক। এসব রোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে।সড়কের ওপর গাড়ির স্ট্যান্ড। যেমন টঙ্গী পূর্ব থানার মূল ফটকে ইজিবাইক, হাসপাতাল ফটকে সিএনজি স্ট্যান্ড, স্টেশন রোড, চেরাগ আলী, কলেজ গেট, টঙ্গী বাজার এলাকায়, বনমালা মাথায়, হোসেন মার্কেট, দত্তপাড়া, এরশাদ নগর এভাবে অর্ধশতাধিক গাড়ির স্ট্যান্ড রয়েছে সড়ক দখল করে। যে কারণে যানজট কমছে না। টঙ্গী বাজার এলাকার এক ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিতালী পাম্পের পরে থেকে মহাসড়কে শত শত দোকান বসিয়ে একটি চক্র লাখ লাখ টাকার চাঁদা তুলছে। এমনি করে টঙ্গী চেরাগ আলী, কলেজ গেট, স্টেশন রোড, টিঅ্যান্ডটি বাজার, দত্তপাড়া, গাজীপুরা এলাকায় সড়ক দখল করে মার্কেট বসানোর ফলে যানজট তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (অপরাধ দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ বলেন, বিআরটি প্রকল্পের খোঁড়াখুঁড়ি শেষ না হলে জ্যাম কমবে না। এ ছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন শত শত অটো ও ইজিবাইক ডাম্পিং করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে।