রাজধানীর এক বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ছয় বছর বয়সী ছেলেকে ভর্তি করেছেন বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা আসিফ আলী। তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। সরকারি হাসপাতালে বেড না পেয়ে বেসরকারিতে ভর্তি করেছি। এখানেও সিট পেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। ছেলেকে নিয়ে আমাদের জীবনের ওপর দিয়ে ঝড় চলে যাচ্ছে। একটা মশার কামড়ে ছেলে আজ জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি। প্রতিবছর ডেঙ্গুজ্বর হয় কিন্তু এটার প্রতিকারে আগে থেকে কোনো উদ্যোগ নেয় না সিটি করপোরেশনগুলো। যার পরিবারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে একমাত্র সেই জানে এর ভয়াবহতা।’ প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী। বিশেষ করে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ঢাকার ১১টি এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী আসছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) রয়েছে ছয়টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পাঁচটি এলাকা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার জানান, এলাকাগুলো হলো- যাত্রাবাড়ী, মুগদা, কদমতলী, জুরাইন, মানিকনগর, সবুজবাগ, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, তেজগাঁও ও বাড্ডা।
গত রবিবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ হাজার ৯৭৭ জন, মারা গিয়েছেন ১৭৬ জন। আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ১৪৯ জন। রাজধানীতে ডেঙ্গুজ্বরে মারা গিয়েছেন ১৩৯ জন। এলাকাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী, মুগদা, কদমতলী, জুরাইন, ধানমন্ডি এবং বাসাবো এলাকায় আক্রান্তের হার বেশি। উত্তর সিটি করপোরেশনের উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, তেজগাঁও এবং বাড্ডা এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেছেন, মশক নিয়ন্ত্রণে ফগিং করে উড়ন্ত মশা মরার চেয়ে লার্ভিসাইডিং অনেক বেশি কার্যকর। রাজধানী ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিতে হবে। লার্ভিসাইডিংয়ে জোর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সেগুলো হলো- পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ, বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল, কেমিক্যাল বা কীটনাশক কন্ট্রোল এবং কমিউনিটি পার্টিসিপেশন। কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে লার্ভিসাইডের দিকে আমরা জোর দিতে বলেছিলাম। ফগিংয়ে যতটুকু না মশা মারা যায়, তার চেয়ে জনমানুষের ক্ষতি বেশি হয়। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে এখন কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন জানতে চাইলে কবিরুল বাশার বলেন, ‘এখন হটস্পট ম্যানেজমেন্টে জোর দিতে হবে। হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ঠিকানা নিয়ে হটস্পট শনাক্ত করতে হবে। এরপর ওই জায়গায় ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিয়ে উড়ন্ত মশা নিধন করতে হবে। যেসব জায়গায় রোগী নেই, সেখানে লার্ভা শনাক্ত ও ধ্বংস করতে হবে। এ কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’