মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
ডেঙ্গুর থাবায় নাকাল ঢাকা

বাড়ছে বাজেট বাড়ছে মশা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি বরাদ্দ দিয়েছে ১১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মশার বিস্তার ঠেকাতে এ খাতে গত বছরের তুলনায় ১৬ কোটি টাকা বাজেট বাড়িয়েছে সংস্থাটি

জয়শ্রী ভাদুড়ী ও হাসান ইমন

বাড়ছে বাজেট বাড়ছে মশা

ওষুধ, গাপ্পি মাছ, হাঁস, ব্যাঙ নামালেও কোন পদ্ধতিতেই বাগে আসছে না মশা। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে, মারা গেছেন ২৪৭ জন। রেকর্ড মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গিয়েছে জুলাইতে। প্রতি বছর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন বাজেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগী।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি বরাদ্দ দিয়েছে ১১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মশার বিস্তার ঠেকাতে এ খাতে গত বছরের তুলনায় ১৬ কোটি টাকা বাজেট বাড়িয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে গবেষণার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ডিএনসিসি। শিক্ষার্থীদের মাঝে মশা বিষয়ক এক লাখ সচেতনতা কার্টুন বই বিলি করছে তারা।

বাজেট উপস্থাপন অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়েছি। মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য ও আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বাজেটে বরাদ্দ আছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দ্রুতই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের প্রধান করে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। দুর্বলতা আছে এটি আমরা অস্বীকার করছি না। আমরা দুর্বলতাগুলো নিয়ে কাজ করছি। কাজ যদি না করতাম তাহলে অবস্থা তো আরও খারাপ হয়ে যেত।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, মশা নিধনে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে কেবল কীটনাশকের জন্য বরাদ্দ ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। একইসাথে মশক নিধনে ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যন্ত্রপাতি ক্রয় ৪ কোটি টাকা। মোট ৪৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা রাখা হয়েছে মশক নিধন খাতে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মশক নিধনের ওষুধের জন্য ২৫ কোটি টাকা ছিল। যদিও সংশোধিত বাজেটে ২৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা খরচ করেছে। একইসাথে এই অর্থবছের মশক নিধনে ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিনের জন্য বরাদ্দ রাখা ছিল ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বাজেটে থাকলেও খরচ করেছে ৮৯ লাখ টাকা। এছাড়া একইবছর জলাশয় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ লাখ টাকা। যদিও এসব কাজে এক টাকাও খরচ করেনি সংস্থাটি।

ডিএসসিসি’র ২০২০-২১ এ মশক নিধনে বরাদ্দ ছিলো ৩৫ কোটি টাকা। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট বরাদ্দ রাখা হয় ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। একই বছরে মশা মারতে ব্যবহৃত ওষুধ ও কীটনাশক বাবদ ৩৮ কোটি টাকা, কচুরিপানা ও জলাশয় পরিষ্কারে  এক কোটি ৩০ লাখ টাকা, ফগার ও হুইল মেশিন পরিবহনে বরাদ্দ ৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি বিভিন্ন সময়ে খাল, ড্রেন ও জলাশয়ে গাপ্পি মাছ, তেলাপিয়া মাছ, ব্যাঙ ও হাঁস ছেড়েছে। এগুলোর পেছনে খরচ করেছে কোটি কোটি টাকা। কিন্তু কোনো কিছুই ঠেকাতে পারছে না মশা।

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শামসুল কবির বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি খালের কচুরিপানা ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে।’ পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রয়োগ করা ওষুধে কোনো সমস্যা নেই।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, প্রতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এবার লক্ষ্য করছি সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। এর পেছনে কারণ ফিল্ড লেভেলে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে যত ডেঙ্গু হয়েছে, দেখবেন আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে। ২০২১ সালে দেখেছি অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু ছিল। কিন্তু এবার দেখলাম চলতি বছরের জানুয়ারিতেও ৫শ’ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হাসপাতালে।’ তিনি আরো বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীব্যাপী অনেক দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। এ রোগ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এটিকে মোকাবিলা করতে হবে এবং মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে।’

সর্বশেষ খবর