মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কেউ মানে না জেব্রা ক্রসিং

রাজধানীর জেব্রা ক্রসিংগুলোকে যথাযথ ব্যবহার করা গেলে সড়কে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কেউ মানে না জেব্রা ক্রসিং

ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর সাতরাস্তায় বিজি প্রেসের সামনে জেব্রা ক্রসিংয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে মোতালেব হোসেন এবং তার স্ত্রী সাইফুন্নেছা। ১০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়েও রাস্তা পার হতে পারছেন না ষাটোর্ধ্ব এই দম্পতি। মোতালেব হোসেন বলেন, ফ্লাইওভার থেকে নেমে দ্রুত গতিতে গাড়ি ছুটে আসছে। জেব্রা ক্রসিংয়ে থামছে না কেউ। অনেকেই এর মধ্যেই দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ বয়সে দৌড়ে রাস্তা পার হওয়া সম্ভব না বলে দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে আছি।

রাজধানীর জেব্রা ক্রসিংগুলোকে যথাযথ ব্যবহার করা গেলে সড়কে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ড্রাইভার বা পথচারী কেউই জেব্রা ক্রসিংয়ের নিয়মনীতি মানে না। এর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থী আন্দোলনের পর জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে কিছুটা নজর দেওয়া হয়। জেব্রা ক্রসিংগুলো নতুন করে রং করা হয়। নতুন করে বিভিন্ন জায়গায় জেব্রা ক্রসিং চিহ্নিত করা হয়। প্রত্যাশা ছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও যাত্রীদের সচেতনতায় জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারের সুফল মিলবে। রাস্তা পারাপারে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। কিন্তু জেব্রা ক্রসিংয়ের অরাজকতা বন্ধ হয়নি।

প্রায় দেড় কোটি মানুষের রাজধানীতে অফিস এবং স্কুল শুরু ও শেষের সময় রাস্তায় গিজ গিজ করে মানুষ। একসঙ্গে অনেক মানুষ যখন ফুটপাত-ফুটওভারব্রিজ রেখে রাস্তা দিয়ে এলোমেলোভাবে হাঁটে তখন সড়ক নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। দীর্ঘ অনভ্যস্ততায় পথচারীরা বুলেই গেছেন জেব্রা ক্রসিংয়ের সঠিক ব্যবহার। যানবাহনের ফাঁকে ফাঁকে ঝুঁকি নিয়েই সড়ক পার হন তারা। অন্যদিকে ড্রাইভাররাও জেব্রা ক্রসিংয়ে গাড়ি থামাতে চান না। পথচারী পার হচ্ছেন দেখেও দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে যেতে চান তারা। ড্রাইভারদের এই প্রবণতারই নির্মম বলি হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। নগরীতে বেশিরভাগ জায়গায় সিগন্যালের জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। নর্দ্দা এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ড্রাইভাররাই সড়ক শৃঙ্খলার মূল ব্যক্তি। সেই ড্রাইভারদের মধ্যে সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টি না হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো খুবই কঠিন। পথচারীরাও জানে না কখন জেব্রা ক্রসিং পার হতে হয়। কতক্ষণ পরপর জেব্রা ক্রসিংয়ে গাড়ি থামবে। এসব বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার প্রয়োজন।

রাজধানীর সড়কে নৈরাজ্যের বড় কারণ বিশৃঙ্খলা। যাত্রী-চালক-পরিবহনকর্মী কেউই আইন মানতে চায় না। রাস্তায় নেমে সবাই যেন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। অথচ বিশৃঙ্খল সড়কের কারণেই যানজট, দুর্ঘটনা এবং গণদুর্ভোগে পড়েন লাখ লাখ মানুষ। শুধু জেব্রা ক্রসিংয়ের কার্যকর ব্যবহার করা গেলেই সড়কের বিশৃঙ্খলা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। জনবহুল সড়কে জেব্রা ক্রসিংয়ে পারাপারের সময় যদি যানবাহন থেমে যায়, তাহলে হুড়োহুড়ি করে রাস্তা পার হতে গিয়ে কেউ দুর্ঘটনায় পড়বে না। এ জন্য যানবাহনের চালক-সহকর্মীদের আগে প্রশিক্ষিত করতে হবে। তাদের জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। এর পাশাপাশি যাত্রীদেরও সচেতনতা দরকার। জেব্রা ক্রসিং ছাড়া সড়কের অন্য কোনো জায়গা দিয়ে রাস্তা পেরোলে মোটা অঙ্কের জরিমানার আওতায় আনতে হবে। 

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক হাদিউজ্জামান বলেন, ‘জেব্রা ক্রসিংগুলো পরিকল্পনামাফিক জায়গায় দিতে হবে এবং এটাকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবহন চালকদের এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে। তিনি আরও বলেন, পথচারী কতক্ষণ ধরে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার হতে পারবেন সেই সময় নির্ধারণ করতে হবে। এর পাশাপাশি কতক্ষণ পর পর মানুষের পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিংয়ে গাড়ি দাঁড়াবে সেটাও সিগন্যালের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দিতে হবে। গাড়ি সীমারেখা লঙ্ঘন করলে কঠোর জরিমানার ব্যবস্থা রাখতে হবে। জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এই উদ্যোগগুলো নিলে মানুষের আগ্রহ বাড়বে, কমবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যালের বিষয়ে চালকদের প্রশিক্ষিত করতে হবে।

সর্বশেষ খবর